পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে যে, প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে অভিযুক্ত পুলিশকর্মী ভয় পেয়ে যান যে, তাঁর সার্ভিস রিভলভারটি ছিনতাই করে নিয়ে তাঁকেই খুন করে দিতে পারে উন্মত্ত জনতা।
নাবালিকা ছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ। মৃত্যুর পর ধর্ষণ ও খুনের বিচার চেয়ে রাজ্য সরকারের কাছে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন এলাকাবাসী। এরপর পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ ক্রমে চরমে ওঠে। ৪ পুলিশকর্মীকে কাজে অবহেলার কারণে সাসপেন্ড করে দেওয়া হয়। তারপরেও নেভেনি ক্ষোভের আগুন। থানার সামনে আগুন জ্বালিয়ে কার্যত রণমূর্তি ধারণ করেন আঞ্চলিক মানুষজন। থানায় ভাঙচুর করা হয়। হামলা চালানো হয় পুলিশের ওপরেও। এরপরেই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে গুলি লেগে প্রাণ যায় এলাকার যুবক মৃত্যুঞ্জয় বর্মণের। এই মৃত্যুর পর প্রায় ধুন্ধুমার বেঁধে যায় সমগ্র কালিয়াগঞ্জ জুড়ে। দ্বিতীয় মৃত্যুর তদন্তের ভার দেওয়া হয় অপরাধ তদন্ত বিভাগ CID-র ওপর। এই CID-র তদন্তকারীদের রিপোর্টেই এবার উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য।
CID সূত্রে জানা গেছে, মৃত্যুঞ্জয় বর্মণের মৃত্যুর পর তদন্তকারীদের তরফে অভিযুক্ত পুলিশকর্মী ও স্থানীয় মানুষ, উভয় পক্ষেরই বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। কিন্তু, তা করা সম্ভব হলেও মৃত্যুঞ্জয় বর্মণের পরিবারের মানুষজনের বয়ান রেকর্ড করা সম্ভবপর হয়নি, কারণ, মৃতের পরিবারের মানুষজন কোনও অজ্ঞাত জায়গায় রয়েছেন বলে জানা গেছে, এই কথাও CID-র দাখিল করা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা এবং পুলিশ কর্মী, দুই পক্ষই ঘটনার দিন ২ রাউন্ড গুলি চলার কথা বলেছেন বলে জানা গেছে।
CID-র তথ্যে বলা হয়েছে যে, অশান্তি থামাতে ২ রাউন্ড গুলি চালান অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিক। আত্মরক্ষার জন্যই গুলি চালানো হয়েছিল বলে তদন্তকারীদের কাছে দাবি করেছে পুলিশ। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে যে, অশান্তি থামানোর অভিযান চলাকালীন একজন পুলিশ আধিকারিককে ঘিরে ধরেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ধাক্কাধাক্কির সময় ওই পুলিশ আধিকারিকদের চোখ থেকে তাঁর চশমাটি খুলে ছিটকে পড়ে যায়। তিনি তৎক্ষণাৎ ভয় পেয়ে যান যে, তাঁর সার্ভিস রিভলভারটি ছিনতাই করে নিতে পারে উন্মত্ত জনতা। প্রচণ্ড বিক্ষোভের মধ্যে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন যে, তাঁর বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে তাঁকেই খুন করে দেওয়া দিতে পারেন উত্তেজিত মানুষজন। সেই কারণেই তিনি আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালিয়েছিলেন বলে CID সূত্রে জানা গেছে।
এই রিপোর্ট ইতিমধ্যেই ভবানী ভবনে জমা দেওয়া হয়েছে CID-র শীর্ষ কর্তাদের হাতে। তথ্যের কথা নবান্নতেও জানানো হয়েছে। এই বিষয়ে ১২ মে হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা দেবে রাজ্য। এই রিপোর্টের কথা প্রকাশ্যে আসার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে ‘পশ্চিমবঙ্গের গৃহমন্ত্রীর পদ থেকে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর ইস্তফা দেওয়া উচিত’, বলে দাবি তোলেন রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। অন্যদিকে, আরেক বিরোধী দল সিপিএমের তরফে সাংবাদিক সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেই ধিক্কার জানানো হয়। দলের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ সেলিম স্পষ্ট দাবি করেন যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই ঘটনার দিন পুলিশকে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন-
Rabindra Jayanti: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকীতে কবিপ্রণামে অমিত শাহ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সকাল থেকে মুখর বিশ্বভারতী
কোন কোন জেলায় তাপপ্রবাহের ভ্রুকুটি, কোন জেলায় পড়বে বৃষ্টি, জেনে আজকের আবহাওয়ার পুর্বাভাস
মে মাসের শুরুতে কোন শহরে ঊর্ধ্বমুখী জ্বালানির দাম? দেখে নিন মঙ্গলবারের পেট্রোল-দর