
রাজ্যে বেআইনি খনি-র সংখ্যাটা কত? এই সংখ্যাটা গুনতে বসলে মাথা ঘুরেই যাবে। এমনকী প্রশাসনের কাছেও এর কোনও সঠিক তথ্য নেই। তবে বিভিন্ন সময়ে পশ্চিমবঙ্গের খনি এলাকার যে মিডিয়া রিপোর্ট ও বিভিন্ন রিপোর্ট বেরিয়েছে তাতে সংখ্যাটা হাজার ছাড়িয়ে যাবে। পশ্চিমবঙ্গের খনি এলাকায় বিশেষ করে আসানসোল ও রানিগঞ্জের সীমানা এলাকায় ভূগর্ভস্থ মাটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে বলেই বারবার রিপোর্টে এসেছে। এই সব এলাকায় বহু সময়েই ভূপৃষ্টের উপরিভাগ বসে যাচ্ছে, বাড়িতে বাড়িতে ফাটল দেখা দেওয়া থেকে শুরু করে কোথাও কোথাও ঘর-বাড়ি ভেঙেও পড়েছে। মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ সফরে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথোপকথনের সময় যোশীমঠ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেখানেই তিনি বলেন যে, যোশীমঠের মতো যে কোনও সময়ে একই পরিণতি হতে পারে রানিগঞ্জ এলাকার। এমনকী, পাহাড়ি এলাকার মধ্যে মিরিকের কপালেও এমন পরিণিতি আসতে পারে বলেই মনে করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রানিগঞ্জের পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এবং কোল ইন্ডিয়া ও ইসিএল-এর দিকেই আঙুল তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, রানিগঞ্জের ধস প্রবণ এলাকা থেকে মানুষজনকে নিরাপদ স্থানে সরাতে ইসিএল-কে জমিও দিয়ে রেখেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত কোনও কাজ হয়নি। এমনকী, এর জন্য রাজ্য সরকারকে একটা অর্থও কেন্দ্র থেকে দেওয়া হয়নি বলে জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রানিগঞ্জ ও আসানসোল-এর সীমানার কয়লা খনি এলাকায় ভূগর্ভ যেভাবে ফাকা হয়ে গিয়েছে তাতে যে কোনও মুহূর্তে বড় ধরনের ধস নামতে পারে এবং এতে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হতে পার বলেও মন্তব্য করেন।
রানিগঞ্জে বিপদগ্রস্থ জমি থেকে মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনতে গৃহপ্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই নিয়ে না কোল ইন্ডিয়া না ইসিএল কেউ কোনও পদক্ষেপ করেনি। রাজ্য সরকার তার সাধ্যমতো কিছু ঘরবাড়ি করেছে কিন্তু বিপদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এই এলাকার সব মানুষকে তা দেওয়া যায়নি। এর জন্য কেন্দ্রের সাহায্যের প্রয়োজন। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন যে, পাহাড়েও যে কোনও মুহূর্তে যোশীমঠের মতো পরিস্থিতি হতে পারে। তবে, দার্জিলিং ও কালিম্পং বড় পাহাড়- সেখানে যোশীমঠের মতো পরিস্থিতি ঘটনার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু, যেভাবে মিরিকে কংক্রিটের নির্মাণ বেড়েছে তা তাঁকে চিন্তায় ফেলেছে বলেও ব্যক্ত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কারণ, মিরিক একটি ছোট পাহাড়ের উপরে অবস্থিত এবং এর সঙ্গে যোশীমঠের ভৌগলিক অবস্থানের মিল রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এর জন্য মিরিকে মাঝে মাঝেই মৃদু কম্পন অনুভূত হয়।
যোশীমঠের ঘটনা নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই রাজ্য সরকারের দিকেও আঙুল তুলেছেন। তাঁর মতে, এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য সাধারণ মানুষকে দায়ী করা যায় না। সরকারের কাজ বিষয়গুলো দেখভাল করা। আর কোনও কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হলে তাহলে সরকারকেই এগিয়ে গিয়ে মানুষকে সাহায্য করতে হবে।
আরও পড়ুন-
যোশীমঠের মতই দার্জিলিং-এর আকাশে কালো মেঘ, প্রবল চাপে তলিয়ে যেতে পারে শৈল শহরের
ভারতের মানচিত্র থেকে মুছে যেতে পারে যোশীমঠ, ইসরোর রিপোর্টে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য
যোশীমঠ সংকটের ইঙ্গিত দিয়ে ৫০ বছর আগে রিপোর্ট তৈরি করেছিল বিশেষ কমিটি!