আন্তর্জাতিক ফুটবলে সম্মান এনে দিয়েছেন সারা ভারতকে, বেহালার পৌলমীর রোজগার এখন দিনে দু-তিনশো

পৌলমী একজন সাধারণ ফুড ডেলিভারি গার্ল, প্রাপ্য সম্মান পেলেন না কারুর কাছ থেকেই। অথচ, তিনিই ভারতের হয়ে সাফল্যের সঙ্গে খেলে এসেছেন গ্লাসগো হোমলেস বিশ্বকাপ, এশিয়া কাপ সহ অগণিত জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ।

Web Desk - ANB | Published : Jan 10, 2023 11:00 AM IST

কলকাতার বেহালা অঞ্চলে ফুড ডেলিভারি অ্যাপে খাবার অর্ডার করলে দেখা হয়ে যেতে পারে পৌলমী অধিকারীর সঙ্গে। ছাঁটা চুল আর হাই পাওয়ারের চশমায় তাঁকে দেখতে অতি সাধারণ একজন ফুড ডেলিভারি গার্লের মতোই। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তিনি যে কতটা অসাধারণ, তার খোঁজ রাখল না রাজ্য, কেন্দ্র, পাড়া-বেপাড়ার কোনও খেলোয়াড় সংগঠনই। খোঁজ নেওয়া যেত এইভাবে যে, দেশের একজন মহিলা খেলোয়াড়কে ঠিক কতটা সংগ্রাম করতে হয়, তিনি সারাদিনে ন্যুনতম খাবারটুকু পেলেন কিনা, আন্তর্জাতিক ময়দানে জয়ী হয়ে ফিরে এলে কোনও মিডিয়া তাঁর খোঁজ নিল কিনা, ইত্যাদি আরও অজস্র প্রশ্ন। একটারও কোনও সদুত্তর নেই, ২০২৩ সালে এসে পৌলমী অধিকারীর বাইকের তেল-খরচা বাদে রোজগার হয় মাত্র দেড়শ’ টাকা। কোনও কোনওদিন তাও নয়।

পৌলমী অধিকারী প্রথমে জাতীয় স্তরে বাংলার হয়ে খেলেছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিমে। তারপর হু হু করে তাঁর উত্থান। শিবরামপুরের বাড়ি থেকে সোজা লন্ডন, জার্মানি, স্কটল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা। সারা ভারতের জন্য মহিলা দলের হয়ে এনে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্মান। বাংলার হয়ে খেলেছেন জাতীয় স্তরেও। খেলেছেন গ্লাসগোয় আয়োজিত হোমলেস বিশ্বকাপ, এশিয়া কাপ এবং বিশ্ব স্তরের আরও বহু বিখ্যাত ম্যাচ। কিন্তু, তাঁকে চিনল না বাঙালির অতি পরিচিত স্থান বেহালাই।

রাজ্য বা কেন্দ্র সরকার তো দূরের কথা, কোনও সংগঠন বা ক্লাবও তাঁর খোঁজ রাখেনি কোনওদিন। তাঁর জীবনের একমাত্র চাওয়া হল, “আমায় না হোক, অন্য যে কোনও মেয়ে খেলে ফিরলে তাঁকে তাঁর প্রাপ্য সম্মানটুকু দেওয়া হোক”। ভারতে যেকোনও পুরুষ যেকোনও আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ফিরলে তাঁকে ঘিরে ধরে সমস্ত মিডিয়া, তাঁকে নিয়ে তৈরি হয় চলচ্চিত্র, লেখা হয় কবিতাও। কিন্তু, ‘বেহালার ছেলেটা’-র বদলে ‘বেহালার মেয়েটা’-র খোঁজ কেউ রাখেনি বলেই আজ নিজের খেলার সার্টিফিকেট দেখাতে দেখাতে গলা কেঁপে যায় বিশ্বজয়ী পৌলমী অধিকারীর।

শুধু প্রাপ্য সম্মানটুকুই নয়, দেশের হয়ে খেলতে যাওয়া এক পরিশ্রমীর খাবারদাবারের খোঁজটুকুও কেউ রাখে না বলে আক্ষেপ কলেজপড়ুয়া পৌলমীর, একজন খেলোয়াড়ের পায়ের জুতো কেনার সামর্থ্যটুকু আছে কিনা, তাও উৎসাহদাতাদের অজানাই রয়ে যায়। চারুচন্দ্র কলেজে পড়া আর পড়াশোনার সাথে সাথে খাবার ডেলিভারি করে সংসার চালানো মাতৃহারা মেয়েটার স্বপ্ন এখনও গোল্লাছুটের দিকেই, পায়ে বল পড়লে আজও যে তিনি বিশ্বের যেকোনও ময়দানে পক্ষীরাজের মতো উড়ে বেরাতে পারেন, খাবার ডেলিভারির ফাঁকে ফাঁকে সেটা প্রমাণও করে দেন আন্তর্জাতিক ফুটবল তারকা পৌলমী অধিকারী।

আরও পড়ুন-
গঙ্গাসাগর মেলা উপলক্ষে চালু হচ্ছে বিশেষ ট্রেন, ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের দিনও থাকছে বিশেষ সুবিধা
‘কোথায় কী বলতে হয় জানেন না’, জি২০ সম্মেলনে মমতার মুখে বামেদের তিরস্কার শুনে ক্ষুব্ধ বিকাশরঞ্জন

Share this article
click me!