রেফার করে দেওয়ার দরুন কোনও রোগীর মৃত্যু হলে দায় ওই চিকিৎসককেই নিতে হবে: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

স্বাস্থ্য পরিষেবায় ব্যাপক জোর দিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এজন্য, রাজ্যের স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং হাসপাতালগুলিকে বিবিধ পরামর্শ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

Sahely Sen | Published : Nov 22, 2022 10:01 AM IST

এক হাসপাতাল থেকে কোনও গর্ভবতী মহিলাকে অন্য হাসপাতালে রেফার করে দেওয়ার জন্য তাঁর যদি প্রাণ যায়, তাহলে যে চিকিৎসক তাঁকে রেফার করেছিলেন, এই মৃত্যুর দায় তাঁকে নিতে হবে, সোমবার নবান্নে সংঘটিত প্রশাসনিক বৈঠকে কড়া বার্তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বিভিন্ন জেলা থেকে অভিযোগ আসছে, একাধিকবার বারণ করা সত্ত্বেও ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা জেলার হাসপাতালগুলি থেকে রোগীদের অন্য হাসপাতালে রেফার করে দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। রেফার করে দেওয়ার দরুন ৪-৫ ঘণ্টা গাড়ির ধকল সহ্য করতে করতেই মৃত্যু হয়ে যাচ্ছে অনেক গর্ভবতী মহিলার। দীর্ঘদিন ধরে এই খবর পেয়ে পেয়ে অবশেষে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী।

বড়সড় কোনও অসুবিধা ছাড়া রোগীকে অন্য হাসপাতালে রেফার যাবে না বলেই বারবার চিকিৎসক এবং প্রতিটি হাসপাতালকে বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ, তাঁর সেই নির্দেশকে তোয়াক্কা না করেই আজও বহু রোগীকে অনুপযুক্ত কারণ দেখিয়ে রেফার করে দেওয়ার ঘটনা ঘটে চলেছে বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। এই বিষয়ে এবার কড়া পদক্ষেপ নিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

সোমবার নবান্নের প্রশাসনিক বৈঠকে এবিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে চিকিৎসকদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আপনারা কি রেফার করা বন্ধ করবেন? গর্ভবতী মহিলাকেও রেফার করে দিচ্ছেন। তারপর তাঁরা ৪-৫ ঘণ্টা গাড়ির ধকল করে আরেক জায়গায় এসে হাসপাতালে ভর্তি করতেই অপারেশন করার আগেই মৃত্যু হচ্ছে। কেন এটা হচ্ছে? এখন যদি ৯৯ শতাংশ ইনস্টিটিউশনাল ডেলিভারি হয় তাহলে কেন রেফার করা হবে? যদি এরকম হয়,তাহলে যে রেফার করেছে তাকে যে মারা গিয়েছে তার দায়িত্ব নিতে হবে।”

যেহেতু রাজ্যের সমস্ত ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গর্ভবতী মহিলাদের অস্ত্রোপচারের পরিকাঠামো নেই, এমনকি অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকরাও এবিষয়ে পারদর্শী নন, তাই মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ, “কোনও সমস্যা হলে জেলা হাসপাতালের সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। প্রয়োজনে ভিডিও কলে জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক বা স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।” অর্থাৎ, গর্ভবতী মহিলাদের কিছুতেই রেফার করা যাবে না বলে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি চিকিৎসা ক্ষেত্রে গাফিলতি কোনভাবে বরদাস্ত করা হবে না বলেও বার্তা তাঁর। “গাফিলতি একটা অপরাধ। এটা অবিলম্বে আমাদের সংশোধন করতে হবে,” এর জন্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের বিভিন্ন হাসপাতালে সারপ্রাইজ ভিজিট করারও পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

মুখ্যমন্ত্রী এও বলেন, “৮ কোটি ৪৩ লক্ষ মানুষ স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে নথিভুক্ত হয়েছেন। প্রায় আড়াই হাজার হাসপাতালে এই পরিষেবা মিলছে। এখনও পর্যন্ত ৪৩ লাখ মানুষকে ৫ হাজার কোটি টাকার পরিষেবা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যসাথীর আলাদা পোর্টালও খোলা হয়েছে।”

পশ্চিমবঙ্গে স্বাস্থ্য পরিষেবার মান আরও উন্নত করতে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্তরে সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২৩ সালের মধ্যে ১০ হাজার ১৭৩টি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ২০২৫-২৬ সালের মধ্যে ১৬ হাজার ৬১৬টি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যে ৪ হাজার ৪৬১টি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র অনুমোদন করা হয়েছে এবং ২ হাজারের বেশি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র চালু হয়ে গিয়েছে। এই সমস্ত কেন্দ্রে বিনামূল্যে আউটডোর চিকিৎসা পরিষেবা সহ বিভিন্ন ধরনের রোগ নির্ণয় করা হবে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।


আরও পড়ুন-
মহানগরীতে সস্ত্রীক এসে নামলেন বঙ্গের নয়া রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস, বরণ করে নিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম
জনপ্রিয় পানীয় ‘রসনা’-র সৃষ্টিকর্তা আরিজ পিরোজশা খামবাট্টার প্রয়াণ, মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর
‘অসচ্চরিত্র লোকজনের ভিড়’, মুসলমানদের কাতার বিশ্বকাপ দেখতেই নিষেধ করে দিল আল কায়দা

Share this article
click me!