
ছিপছিপে চেহারা, আন্দোলনের অন্যতম একটি মুখ এই চিকিৎসক। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল তাঁর আন্দোলনরত বিভিন্ন অবস্থার ছবি। কখনও বৃষ্টিতে কাকাভেজা হয়ে বা কখনও হাতে মাইক নিয়ে প্রতিবাদ করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। তাঁর নাম দেবাশিস হালদার। জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের অন্যতম মুখ হলেন তিনি। প্রথম থেকেই অনিকেত মাহাতো, কিঞ্জল নন্দ, রুমেলিকা কুমারের পাশাপাশি দেবাশিসের নামও জ্বলজ্বলে হয়েছে চারিদিকে।
হুগলির বলাগড়ের খামারগাছির বাসিন্দা দেবাশিস। আদি বাড়ি খমারগাছির সিজা বাজারের মুক্তকেশী তলায়। পরে তাঁর বাবা চাকরি পাওয়ার পরে সিজা বাস স্যান্ডের কাছে আসাম লিঙ্ক রোডের পাশে বসত বাড়ি করেন। দেবাশিস হালদারের গ্রামের বাড়িতে থাকেন তাঁর মা অনিমা, বাবা ক্ষিতীশ ও পিসি মীরা হালদার।
ছোটবেলা থেকেই বেশিরভাগ সময়তে পিসির কাছে থাকতেন দেবাশিস। স্কুল থেকে নিয়ে আসা দিয়ে আসা প্রয়া সবই করতে পিসি মীরা দেবী। সেই সময় সামান্য একটা গুমটি চালাতেন দেবাশিসের বাবা। পরে পূর্ত দফতরে গ্রুপ ডি-এর চাকরি পান। এখন অবসর প্রাপ্ত ক্ষিতীশ বাবু।
এরপর কামালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেনীতে ভর্তি হন দেবাশিস। ২০০৯ সালে মাধ্যমিকে রাজ্যের মধ্যে অষ্টম স্থান পান। ২০১১ সালে উচ্চমাধ্যমিকে রাজ্যের মধ্যে একাদশ স্থান পান। এরপর নিটে সাফল্য পাওয়ার পরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস করেন। বর্তমানে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগে কর্মরত।
ছ'মাস হল বিয়েও করেছেন তিনি। তাঁর স্ত্রীও একজন চিকিৎসক। স্বামীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাশে রয়েছেন তিনি। চিকিৎসকের আন্দোলন দেখে গর্বে বুক ফেটে যাচ্ছে তাঁর পরিবারের। এ প্রসঙ্গে চিকিৎসকের মা অনিমা জানিয়েছেন,"ছেলে আমার ন্যায়ের জন্য আন্দোলন করছে এটা আমাদের খুব ভালো লাগছে। ছোট থেকে প্রতিবাদী না হলেও কখনো মিথ্যার আশ্রয় নিত না। সব সময় সত্যি কথা বলতো। বেশিরভাগ সময়টা পড়াশোনার মধ্যে দিয়েই কাটতো। এখন ছেলের সাথে খুব একটা বেশি কথা হয় না।"
পিসি মীরা হালদার জানান," খুব মেধাবী ছাত্র ছিল একবার বলতেই খুব সহজেই বুঝে নিত যে কোনও পড়া। ওর এই আন্দোলনকে আমরা সমর্থন করি।"
ছেলের আন্দোলন নিয়ে মুখ খুলেছেন তাঁর বাবাও। বাবা ক্ষিতীশ হালদার জানান,"আন্দোলন এত বড় হবে তা ভাবতে পারিনি। আজ গোটা বিশ্বে আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে। জুনিয়র ডাক্তাররা যেভাবে এই আন্দোলনটা করছে তাতে আমি গর্বিত। ধরনা মঞ্চে আমরাও গিয়েছিলাম। সাধারণ মানুষ এখন ওদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এটা দেখে আমার আরও বেশি ভাল লেগেছে। ওরা কোনও রাজনৈতিক রঙ ছাড়া মেরুদন্ড সোজা রেখে আন্দোলন করছে। আর তাদের এই আন্দোলনকে আমি কুর্নিশ জানাই।"