দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর পর ডালখোলা বাইপাসের উড়ালপুলের যাবতীয় জট কেটে কাজ শুরু হল। ইতিমধ্যেই রেলের উপরের অংশে স্তম্ভ বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, রেলের উড়ালপুলের স্তম্ভগুলো বসানো নিয়ে রেল কতৃপক্ষের বাধায় এতদিন আটকে ছিল এই কাজ। তবে এই কাজ পুনরায় শুরু হওয়াতে সাধারন যাত্রী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী ও বাস মালিকরা ব্য়াপক খুশি। উড়ালপুলের কাজ শেষ হয়ে বাইপাস চালু হলে শুধু রায়গঞ্জ নয়, সমগ্র দক্ষিণবঙ্গের সাথে সমগ্র উত্তরবঙ্গ তথা উত্তর ভারতের সরক যোগাযোগ অনেকটাই সুগম হবে বলে সকলের আশা। তবে এই কাজ শুরু হতেই তার কৃতিত্বের দাবি নিয়ে রাজ্যের শাসকদল ও বিজেপি’র মধ্যে টানাটানি শুরু হয়েছে।
কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি তথা উত্তরপূর্ব ভারতের সড়ক যোগাযোগ মূলত ৩৪ ও ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের উপড় নির্ভর করে রয়েছে।উত্তর দিনাজপুর জেলার ডালখোলার কাছে পূর্নিয়া মোড়ে এই ২ টি জাতীয় সড়ক মিলিত হয়েছে।ডালখোলা শহরের বুক চিরেই ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক গিয়েছে।জাতীয় সড়ক সম্প্রসারনের কাজ শুরু হলেও ডালখোলা শহরের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া জাতীয় সড়কের অংশটুকু পর্যাপ্ত জমি না পাওয়াতে অধিগ্রহন করে চওড়া করা সম্ভব হয়নি। এর ফলে ডালখোলা শহরে জাতীয় সড়কের উপর নিত্যদিন ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন, প্রবল বর্ষণে চোপড়া ফ্লাইওভারে ফাটল, নদীর জলে তছনছ ঘাটালের সেতু, বন্যা হতে পারে কি
পাশাপাশি ডালখোলা শহরের মধ্যে দিয়েই জাতীয় সড়কের উপড় দিয়ে উত্তর ভারতের মেইন রেললাইন গিয়েছে।গড়ে এই লাইন দিয়ে ৩৫ জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন যাতায়াত করে।উপরন্তু মাল ট্রেন তো রয়েছেই।ট্রেন যাতায়াতের জন্য একবার ওই লেভেল ক্রসিং বন্ধ হলে জাতীয় সড়কের জ্যাম ছাড়তে কার্যত দ্বিতীয় ট্রেন যাতায়াতের সময় হয়ে যায়।ফলে ডালখোলা শহরে জাতীয় সরড়কের জ্যাম সাধারন যাত্রী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীদের কাছে কার্যত আতঙ্কের কারন দাড়ায়।ডালখোলা শহরের মধ্য়ে দিয়ে ৪ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করতে গড়ে ৩/৪ ঘন্টা পর্যন্ত সময় লেগে যায়।
আরও পড়ুন, 'বিধায়ক পদ ছাড়ার সিদ্ধান্ত দলের', শুক্রবার সাফ জানালেন মুকুল রায়
এই বাইপাসের কজের ব্যাপারে কোলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলাও হয়।এই জনস্বার্থ মামলার আবেদনকারীর উকিল কল্যান চক্রবর্তী টেলিফোনে জানিয়েছেন, 'হাইকোর্ট ওই কাজ দ্রুত শেষ করার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছে।হাইকোর্টের মনিটরিংয়ে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি ও রেল দপ্তরের তত্ত্বাবধানে এই কাজ শুরু করা হয়েছে। প্রতিদিন ৬ ঘন্টা করে কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গেই এই কাজ শেষ করা হবে। এই কাজ শেষ হলে দক্ষিনবঙ্গের সঙ্গে সমগ্র উত্তরবঙ্গ তথা উত্তর ভারতের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভুত উন্নতি ঘটবে।'
আরও পড়ুন, ' হাতির পিঠ থেকে দু-তিনটে পিঁপড়ে নামলে যায় আসে না', মুকুল ইস্যুতে বিস্ফোরক সায়ন্তন
২০০৬ সালে এই জট এড়াতেই বাইপাস তৈরির সিদ্বান্ত নেওয়া হয়েছিল। সাড়ে পাঁচ কিমি দীর্ঘ সেই বাইপাসের জমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে জমির দাম কখনও অর্থভাবে একাধিকবার কাজ আটকে যায়।প্রথমাবস্থায় এই কাজের জন্য ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি প্রায় ৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করে।কাজের দেরীর জন্য তার এস্টিমেট বেড়ে যাওয়াতে অতিরিক্ত অর্থ চেয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি সংস্থা কাজ বন্ধ রাখে। পরবর্তীতে এই কাজের জন্য অতিরিক্ত ১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। অবশেষে ২০১৬ সালে কাজ পুরোদমে চললেও মাঝে আটকে যায় রেল লাইনের উপর ফ্লাইওভারের নকশার ত্রুটির কারনে। নকশা বদল করে নতুন করে কাজও শুরু হয়। ফের আটকে যায় স্তম্ভ বসানো নিয়ে।
আরও পড়ুন, কলকাতায় বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মৃত্যু যুবকের, 'ইচ্ছাই নেই কাজের', জমা জল নিয়ে বিস্ফোরক দিলীপ
উড়ালপুলের স্তম্ভগুলো গত নভেম্ভর মাসে ডালখোলায় আনা হয়। স্তম্ভগুলি বসানোর জন্য জানুয়ারিতে ক্রেনও ভাড়া করা হয়। কিন্ত ক্রেন বসানো নিয়ে গলদের অভিযোগে রেল ফের কাজ আটকে যায়। অবশেষে সব জট কেটে কাজ শুরু হওয়ায় খুশি জেলা প্রশাসন ও বাসিন্দারা। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক মালদহ ডিভিশনের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ওম বিহারী বলেন, রেলের উড়ালপুলের কাজ চলছে জাতীয় সড়ক এবং রেলের ইঞ্জিনিয়ারদের তত্বাবাধানে। রেলের ছাড়পত্র পাওয়ার পর এদিন কাজ শুরু হল। খুব শীঘ্রই কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি, বলে জানালেন তিনি।
আরও পড়ুন, 'TMC সেটিং মাস্টার', কৈলাস বিরোধী পোস্টারে একাকার কলকাতা
রায়গঞ্জ বাস ও মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্লাবন প্রামানিক জানিয়েছেন, ' ডালখোলা শহরের মধ্যে দিয়ে শিলিগুড়ি রুটে যাতায়াত করতে গিয়ে আমাদের বাসগুলি দীর্ঘসময় জ্যামে আটকে থাকে।দেরীতে হলেও এই কাজ শুরু হওয়াতে দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান হবে আশা করছি।'ওয়েস্ট দিনাজপুর চেম্বার অফ কমার্সের সাধারন সম্পাদক শঙ্কর কুন্ডু জানিয়েছেন,'এই বাইপাস চালু করার ব্যাপারে সংগঠনের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে আমরা লড়াই চালিয়ে এসেছি।অবশেষে কাজ চালু হয়েছে।স্বস্তির খবর।এর ফলে সামগ্রইকভাবে ব্যবসার প্রচুর উন্নতি হবে।'