সংক্ষিপ্ত

  • লেখকের জন্মদিনে হিমু- রূপা সেজে শহরে পথে ঘুরে বেড়ায় যুবক-যুবতীরা 
  • হলুদরাঙের ওই রেস্টুরেন্টের নাম ‘হিমু আড্ডা’ 
  •  ২০১১ সালে হিমুর যাত্রা শেষ হয় ‘হিমু এবং হাভার্ড’ উপন্যাসে 
  • জনপ্রিয় উপন্যাস ধারাবাহিকগুলোর মধ্যে হিমু অন্যতম 

তপন মল্লিকঃ- মহুয়া, মলুয়া আর চন্দ্রাবতীর দেশ ময়মনসিংহ দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের পাড় ঘেঁষে কাচারিঘাট। বেশ কয়েক বছর আগেও জায়গাটি থাকত আবর্জনাময়। এখান দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় সাধারণ মানুষ বেশ অস্বস্তিবোধ করতেন। কিন্তু এখন যে জায়গাটি কেবল বদলেছে তাই নয়, অভিনব এক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। গত সাত বছর আগে এখানে মাথা তোলে হলুদ রঙের এক রেস্টুরেন্ট।  

আরও পড়ুন, কলকাতার সেরা ৭ স্ট্রিট ফুড, যা না খেলে জীবন বৃথা, রইল হদিশ

 

হলুদরাঙের ওই রেস্টুরেন্টের নাম ‘হিমু আড্ডা’ 

ব্রহ্মপুত্র নদছোঁয়া সবুজ নিসর্গ, পাখপাখালি বেষ্টিত জায়গাটি এখন সবারই খুব প্রিয়। প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধে এবং তারপরেও এখানে সময় কাটান নানা বয়েসের মানুষ। হলুদরাঙের ওই রেস্টুরেন্টের নাম ‘হিমু আড্ডা’। ওপার বাংলার জনপ্রিয় সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ স্মরণে লেখকের তিন ভক্ত মিলে গড়ে তোলেন ওই হলুদ বাড়ি। হলুদ রঙের প্রতীকময়তায় তারা ধরার চেষ্টা করেন হুমায়ূনের জীবন দর্শন, বিষাদ-বেদনা-একাকীত্ব, কিংবা নির্জনতা কিংবা নানা অনুষঙ্গে লেখা আখ্যানগুলির আবহ। হুমায়ূন ভক্তরা এখানে আসবেন,  সকাল-দুপুর, সন্ধ্যা-রাতে আড্ডা দেবেন, মূলত এই ভাবনা থেকেই তাদের প্রয়াস-‘হিমু আড্ডা’। ‘হিমু’ লেখক হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসের জনপ্রিয় চরিত্র। যে মহাপুরুষ হতে চায়। অথচ তার মতো বেখেয়ালি সংসারে দ্বিতীয়টি নেই। তবে হিমু  সৎ। ১৯৯০ সালে হিমু প্রথম আত্মপ্রকাশ করে ‘ময়ূরাক্ষী’ উপন্যাসে। শুরুতেই বিপুল সাড়া পেলে লেখক হুমায়ূন তার ২১টি উপন্যাসে হিমুকে হাজির করেন। ২০১১ সালে হিমুর যাত্রা শেষ হয় ‘হিমু এবং হাভার্ড’ উপন্যাসে। 

 

আরও পড়ুন, ঠাকুমার কাছেই মানুষ সবার প্রিয় ও হেনরি, জেলে বসেই লেখেন একের পর এক বিখ্য়াত গল্প

 


বিভ্রান্ত সৃষ্টি করা, হিমুর খুব প্রিয়

হিমুর আসল নাম হিমালয়। এই নাম রেখেছিলেন তার বাবা। তিনি বিশ্বাস করতেন; প্রশিক্ষণ দিয়ে যেমন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার তৈরি করা যায় সেরকম মহাপুরুষও তৈরি করা সম্ভব। তিনি মহাপুরুষ তৈরির জন্য একটি বিদ্যালয় তৈরি করেছিলেন যার একমাত্র ছাত্র ছিল হিমু। হিমু পকেটবিহীন হলুদ পাঞ্জাবী গায় দিয়ে ঢাকা শহরের পথে পথে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ায়। কিমুর কর্মকাণ্ডে প্রায় সবাই বিভ্রান্ত হয়। এই বিভ্রান্ত সৃষ্টি করা হিমুর খুব প্রিয়। হিমুর বান্ধবী রূপাকে  ঘিরে হুমায়ূনের বহু উপন্যাসে রহস্য আবর্তিত হয়। হিমু নিরপরাধী হওয়া সত্ত্বেও সন্দেহভাজন হয়ে ওঠে। যে কারণে হিমুকে অনেকবার হাজতবাস করতে হয়। এতে বিভিন্ন থানার ওসি ও সেকেন্ড অফিসারের সঙ্গে হিমুর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে।

আরও পড়ুন, চড়তে হবে না ট্রেন, হুশ করে হারিয়ে যেতে ঘুরে আসুন কলকাতার এই ঠিকানায়

 


 হুমায়ূন বরাবর বলতেন,  তাঁর কাজ হচ্ছে শুধু লেখা

হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় উপন্যাস ধারাবাহিকগুলোর মধ্যে হিমু অন্যতম। সেখান থেকে হিমু বাঙালি পাঠকের অন্তরে গেঁথে যায়। ছন্নছাড়া, উদাসীন হিমু একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশক থেকেই বাঙালি পাঠকদের ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। অন্যদিকে লেখক হিসেবে যে খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা পেয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ সে সৌভাগ্য দুই বাংলার আর কোনও লেখকের হয়নি। পাঠক মহলে হুমায়ূনের মতো এতখানি প্রভাব আর কোনো লেখক বিস্তার করতে পারেননি। কেবল উপন্যাস ও টেলিভিশনের জন্য নাটক রচনা ও পরিচালনা করে তার মতো এত জনপ্রিয়তা এবং সম্মানও কেউ পাননি। যদিও হুমায়ূন বরাবর বলতেন,  তাঁর কাজ হচ্ছে শুধু লেখা। লিখেই আলাদা এক জীবন কাটিয়ে গিয়েছেন হুমায়ূন। মৃত্যুর এত বছর পরও তাকে নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা চলছে সমানতালে। এখনও বাংলাদেশে তিনি বহুক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। 

আরও পড়ুন, শহরের সেরা শরবত কোথায় কোথায়, গলা ভেজান কলকাতার এই ঠিকানায়

 

লেখকের জন্মদিনে হিমু- রূপা সেজে শহরে পথে ঘুরে বেড়ায় যুবক-যুবতীরা 

হুমায়ূনের সব লেখাই সংলাপ নির্ভর। নেপথ্যে কেউ গল্প বলবে, চরিত্রদের সম্পর্কে পাঠককে জানাবে উপন্যাসের এই চিরাচরিত রীতি হুমায়ুন আহমেদের পছন্দ ছিল না। তিনি তার নিজের তৈরি চরিত্রদের দিয়েই কথা বলাতেন। সে কারণেই তাঁর সৃষ্টি হিমু, রূপা, মিসির আলীরা এতখানি জীবন্ত হয়ে গেঁথে আছে পাঠকের মনে।তবে ওদের মধ্যে হিমুর কথা আলাদা। হলুদ পাঞ্জাবি পরা এলোমেলো স্বভাবের অথচ দারুণ বুদ্ধিমান ওই যুবক যে কোনও বয়সের পাঠকের মনে জায়গা পেয়েছিল। অনেকে হিমুকে অনুসরণ করত। তাই এখনও ১৩ নভেম্বর লেখক হুমায়ুন আহমেদের জন্মদিনে যুবক-যুবতীরা হিমু আর রূপা সেজে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরের পথে পথে ঘুরে বেড়ায়।

আরও পড়ুন, রাগ নেই 'দেশপ্রেমিক'দের, দীপাবলির মুখে শহরে দেদার কিনছে চিনা আলো  

মৃত্যুর পরেও তাকে নিয়ে এতটুকুও উন্মাদনা কমেনি 

একজন লেখক কতখানি জনপ্রিয় তা বোঝার জন্য এই ঘটনাই যথেষ্ট। আর লেখকের জন্মদিন যেখানে এইভাবে উৎসবে পরিণত হয় তিনি তো সত্যি অমর। অনেকেই চলে যান ব্রহ্মপুত্রের তীরে ‘হিমু আড্ডা’-য়। রোজই সেখানে কফির পেয়ালায় আড্ডা হয় তবে আজ সেখানে বিশেষ আড্ডা। লেখকের মৃত্যুর পরে এতগুলি বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও তাকে নিয়ে উন্মাদনা কমেনি এতটুকু।