বক্সার জঙ্গলে দেখা মিলল বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির ব্ল্যাক প্যান্থারের। তাও আবার একটি নয়, দিনের বেলা একসঙ্গে একজোড়া ব্ল্যাক প্ন্যান্থারের ছবি ক্যামেরাবন্দি করলেন এক ট্যুরিস্ট গাইড। এর আগে বন দফতরের ট্র্যাপ ক্যামেরায় মাঝেমধ্যে ব্ল্যাক প্যান্থারের অস্পষ্ট ছবি ধরা পড়লেও বক্সায় দিনের আলোয় এই প্রথম কেউ একজোড়া ব্ল্যাক প্যান্থারের ছবি তুললেন।
গত মঙ্গলবার একদল পর্যটককে নিয়ে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জয়ন্তী থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে মহাকাল পাহাড় থেকে ফিরছিলেন ফরেস্ট গাইড লেখু মাহাত। হঠাৎই তিনি পাহাড়ের ঢাল বেয়ে এক জোড়া ব্ল্যাক প্যান্থারকে নেমে আসতে দেখেন। বন দফতরের দাবি, ওই ছবি তথ্য থেকেই পরিষ্কার হয় যে, বক্সা পাহাড়ের জনমানবহীন দুর্গম এলাকায় ওই কালো চিতাবাঘদের বসতি রয়েছে।
বন দফতরের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, আদতে এই প্রাণীগুলি চিতা বাঘই। কিন্তু জিনঘটিত কারণে তাদের গায়ে হলদে রং ফুটে ওঠে না। সাধারণত দিনের আলোয় এই কালো চিতা বাঘেদের সেভাবে দেখাও মেলে না।
আরও পড়ুন- খাঁচা থাকলেও দেখা নেই বাঘমামার, আতঙ্কে কাঁপছে বেলপাহাড়ি
আরও পড়ুন- ফের বাঘ এল লালগড়ে, এবার বাঘিনীর সঙ্গে থাকতে পারে শাবকও
বন দফতরের নথি অনুযায়ী, উত্তরবঙ্গের পাঁচটি সংরক্ষিত অভয় অরণ্যে এই ব্ল্যাক প্যান্থারদের অস্তিত্ব রয়েছে। সেগুলি হলো মহানন্দা অভয়ারণ্য, নেওড়াভ্যালি অভয়ারণ্য, গোরুমারা অভয়ারণ্য, জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান এবং বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প। দীর্ঘ সময় অন্তর এই কালো চিতাদের ছবি ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরাও পড়েছে। কিন্তু একসঙ্গে একজোড়া ব্ল্যাক প্যান্থারের উপস্থিতির প্রমাণ পেয়ে যথেষ্টই উৎসাহিত বন দফতর। যদিও পাহাড় বেয়ে নেমে এসে কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই সমতলের জঙ্গলে হারিয়ে যায় দু'টি ব্ল্যাক প্যান্থার।
বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর শুভঙ্কর সেনগুপ্ত জানিয়েছেন 'বক্সার পাহাড়ি অঞ্চলের বাসিন্দা ওই কালো চিতাবাঘরা তীব্র শীতের কারণে বছরের ঠিক এই সময়টায় শিকারের সন্ধানে নীচে নেমে আসে। তবে দিনের বেলায় এদের দেখা পাওয়াটা সত্যিই দুষ্কর। এর থেকেই প্রমাণিত হয় যে বক্সার জীব বৈচিত্র্য এখনও অটুট।'
বিশিষ্ট পরিবেশপ্রেমী অনিমেষ বসু জানিয়েছেন 'শারীরিক রং আর আকৃতির কারণেই ব্ল্যাক প্যান্থারদের দিনের আলোয় দেখা পাওয়াটা বিরল ঘটনা। সাধারণত রাতেই ওই প্রজাতির লেপার্ডরা শিকারে বের হয়। সূর্যাস্তের আগেই জোড়া ব্ল্যাক প্যান্থারের দর্শন মেলায় বোঝাই যাচ্ছে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ওই শ্রেণির লেপার্ডদের সংসার বেড়েছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও বাস্তুতন্ত্রের জন্য যা একটি অত্যন্ত সদর্থক লক্ষ্মণ।'