বাংলাদেশ কে টিকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও রাখতে পারেনি ভারত
সেই সুযোগে ঢাকায় পা রাখল বেজিং
ভারতের দেখানো পথেই বাড়ল চিন-বাংলাদেশ ঘনিষ্ঠতা
এবার বাংলাদেশের মাটিতেই টিকা উৎপাদন করতে চাইছে বেজিং
বছরের শুরুতে অবস্থাটা অন্যরকম ছিল। বিশ্বের ৬০ শতাংশ টিকা তৈরির দেশ ভারত, তার প্রতিবেশি দেশগুলিকে করোনা টিকা সরবরাহ করে ভ্যাকসিন-কূটনীতির জন্ম দিয়েছিল। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা - সকলেই ছিল কৃতজ্ঞ, খুশি। কিন্তু এরপর ভারতে করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গ আছড়ে পড়ে। সেই থেকে টিকা রফতানি বন্ধ রেখে দেশে সম্পূর্ণ টিকাকরণে মন দেওয়া হয়েছিল। ততদিন পর্যন্ত চুপচাপ দেখেছিল চিন। ভারত সরতেই, এবার প্রতিবেশি দেশগুলির দিকে হাত বাড়াতে শুরু করেছে তারা, অন্তত বাংলাদেশে তো বটেই। অশনি সংকেত হলেও, সম্ভবত অসহায়ভাবে দেখা ছাড়া ভারতের কিছু করার নেই।
২০২০ সালের অগাস্ট মাসে ঢাকা সফরের গিয়ে বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছিলেন ভারতের তৈরি করোনা টিকা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দেওয়া হবে বাংলাদেশকে। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির পরে বন্ধু ও সহযোগী দেশগুলিকে দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও কার্পণ্য করা হবে না।
গত মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশে সফরে যাওয়ার সময়ও শেখ হাসিনাকে ১২ লক্ষ করোনা টিকার ডোজ উপহার দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সময় করোনার টিকা সরবরাহ করেই এই অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করার কথা ভেবেছিল ভারত। যাকে ভ্যাকসিন-কূটনীতি বলা হচ্ছিল। সেই সময় অবধি অবস্থা ঠিকই ছিল, কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টে যায় এরপরই।
২০২০ সালের নভেম্বরে অক্সফোর্ড- অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পেতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট-এর সঙ্গে চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ। চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশকে ৩ কোটি করোনা টিকা দেওয়ার কথা সেরাম ইনস্টিটিউটের। এর জন্য বাংলাদেশ সিরাম ইনস্টিটিউটকে অগ্রিম টাকা দিয়েছিল। কিন্তু ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ৭০ লক্ষ টিকা দিয়েছে সেরাম।
বাংলাদেশের দাবি, সেরাম জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশে সরবরাহের জন্য অন্তত ৫০ লক্ষ ডোজ রেডি করে রেখেছে, কিন্তু ভারতের বিদেশ মন্ক্রক সেগুলি পাঠাবার ছাড়পত্র দিচ্ছে না। ভারতের অভ্যন্তরীণ টিকার চাহিদা মেটাতেই সরবরাহ করতে দেরি করছে সেরাম, এমনটাই মনে করছে বাংলাদেশ। এমনকী এই কারণে এই বছর ভারতে ইলিশ মাছও পাঠায়নি তারা।
ঢাকা-নয়াদিল্লির এই টানাপোড়েনের সুযোগকেই কাজে লাগালো বেজিং। ঠিক ভারতের দেখানো পথেই বাংলাদেশে পা রাখল চিনারা। গত ১২ মে বাংলাদেশকে চীনা সংস্খা সিনোফার্মের তৈরি সিনোভ্য়াক টিকার পাঁচ লক্ষ ডোজ উপহার হিসেবে দিয়েছিল বেজিং। পরে আরও ছয় লক্ষ ডোজ সিনোভ্যাক টিকা বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছে তারা।
এইসব উপহারে ফলও দিয়েছে। জুন মাসেই সিনোভ্যাক টিকাকে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ। সিনোফার্মের স্থানীয় অংশীদার হয়েছে বাংলাদেশি ফার্মা সংস্থা ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। সিনোফার্মের সঙ্গে দেড় কোটি টিকা ডোজ কেনার জন্য চুক্তি করেছে ঢাকা। এর মধ্যে ২০ লক্ষ ডোজের প্রথম চালানটি গত শনিবার, ৩ জুন ঢাকায় এসে গিয়েছে। বাংলাদেশি সংস্থা ইনসেপ্টা সেই দেশে সিনোফার্নের অংশীদার হিসাবে কাজ করছে।
আরও পড়ুন - করোনাবিধি শিকেয়, 'রানি'-কে দেখতে ভিড় সাধারণের
আরও পড়ুন - 'ড্রাগন ম্যান' - বদলে দিল মানব বিবর্তনের ইতিহাস, খোঁজ মিলল সবচেয়ে কাছের পূর্বপুরুষের
আরও পড়ুন - একাধিক স্বামী রাখতে পারবেন মহিলারা - আইনি স্বীকৃতি দিচ্ছে সরকার, দেশ জুড়ে শোরগোল
এখানেই ঢাকা-বেজিং ঘনিষ্ঠতা শেষ হয়নি। সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত চিনের উপরাষ্ট্রদূত হুয়ালং ইয়ান তাঁর ফেসবুক পেজে জানিয়েছেন, বেজিং বাংলাদেশে যৌথভাবে করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদন করতে চায়। এই জন্য সেখানকার অংশীদারদের সঙ্গে কখাবার্তা চালাচ্ছে চিনা প্রতিষ্ঠানগুলি। সিনোফার্মও তাদের অংশীদার ইন্টারসেপ্টার সঙ্গে যৌথভাবে টিকা উৎপাদন করতে চায়।
অর্থাৎ ভ্যাকসি-কূনীতিতে পিছিয়ে পড়েছে ভারত। কিন্তু, প্রশ্ন হল বাংলাদেশে ঠিক কতদূর ঢুকবে সম্প্রসারণবাদী চিন? পাকিস্তানে পরিকাঠামো গঠনের নাম করে ঢুকেছিল চিন। এখন পুরোপুরি বেজিং-এর করায়ত্ব হয়ে গিয়েছে ইসলামাবাদ। ঢাকাও কি সেই দিকেই এগোবে?