৬৯ শতাংশ গণমাধ্যম কর্মীর বিশ্বাস, আন্তর্জাতিকভাবে ভারতের ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করার জন্য এই কভারেজ করা হয়েছে।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ মাস কমিউনিকেশন (আইআইএমসি) দ্বারা পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ভারতের গণমাধ্যমের ৮২ শতাংশ ব্যক্তির মতে পশ্চিমী মিডিয়া ভারতে কোভিড-১৯-এর প্রচারকে 'পক্ষপাতদুষ্ট' করে তুলেছে। ৬৯ শতাংশ গণমাধ্যম কর্মীর বিশ্বাস, আন্তর্জাতিকভাবে ভারতের ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করার জন্য এই কভারেজ করা হয়েছে।
এভাবেই হয়েছিল সমীক্ষা
আইআইএমসির জেনারেল ডিরেক্টর অধ্যাপক সঞ্জয় দ্বিবেদী জানিয়েছেন এই সমীক্ষাটি চলতি বছরের জুনে ইনস্টিটিউটের আউটরিচ বিভাগ দ্বারা করা হয়েছিল। সমীক্ষায় সারাদেশ থেকে মোট ৫২৯ জন সাংবাদিক, মিডিয়া শিক্ষাবিদ ও মিডিয়া অংশ নিয়েছিলেন। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৬০ শতাংশ মিডিয়া কর্মীর বিশ্বাস, করোনা নিয়ে পশ্চিমী মিডিয়াগুলির কভারেজ একটি প্রাকনির্ধারিত এজেন্ডার মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে ভারতের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য করা হয়েছিল। আর ৭১ শতাংশের মতে খবরগুলির মধ্যে কোনও ভারসাম্য ছিল না।
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রশ্নের মুখে ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
ইউনিসেফ এবং হু নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। জানিয়েছে, ২০২১ সালের প্রথম দিকে ভারত ৯৯ শতাংশ ডিটিপি -৩ কভারেজ অর্জন করেছে। যা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ কভারেজ হিসেরে রেকর্ড করেছে। ২৫০টি ক্ষতিগ্রস্ত জেলায় নিবিড় মিশন ইন্দ্রধনুষ (টিকাকরণ অভিযান) চালানো হয়েছে। সেখানে প্রায় ৯.৫ লক্ষ শিশু ও ২.২৪ লক্ষ্য গর্ভবতীকে টিকা দেওয়া হয়। পোলিওর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য একটি জাতীয় টিকাকরণ পর্যায় এবং দুটি উপ-জাতীয় পর্যায় পরিচালিত হয়েছে।
আরও পড়ুন- করোনায় মৃত্যু শূন্য ১৮ জেলা, কোভিড শ্মশান এখনও জ্বলছে কলকাতায়
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শিশুদের টিকাকরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। তারা জানিয়েছিল, বিশ্বজুড়ে সাড়ে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ৩ মিলিয়নেরও বেশি শিশু ডিপথেরিয়ার টিটেনাসের প্রথম ডোজ পায়নি। ভারতে ৩০ লক্ষ শিশু পায়নি বলে জানানো হয়েছিল। হু অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ৩ মিলিয়নেরও বেশি শিশু হামের একটিও ডোজ পাননি। এই সংক্রমণগুলি থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করে ডিটিপি টিকা।
ভারতে খারাপ পরিস্থিতি
হু এবং ইউনিসেফের মাধ্যমে ভারতের খারাপ পরিস্থিতির ছবি তুলে ধরা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ভারতে ডিটিপি-১-এর পরিপূরক গ্রহণ করেনি এমন শিশুর পরিমাণ অনেক বেশি বেড়ে গিয়েছে। ভারতে প্রায় ৩০ লক্ষ ৩৮ হাজার শিশু ডিটিপি-১ টিকার প্রথম ডোজ পায়নি। ২০১৯ সালে সেই সংখ্যাটা ছিল ১৪ লক্ষ ৩ হাজার।
মধ্যম আয়ের দেশগুলির অবস্থা
হু-র সমীক্ষা অনুযায়ী মধ্যম আয়ের দেশগুলিতে শিশুদের টিকাকরণের সংখ্যা অনেকটা বেড়েছে। আর সেখানে টিকাকরণের দিক থেকে ভারতে সেই সংখ্যাটা অনেকটাই কমে গিয়েছে। ডিটিপি-৩-এর টিকাকরণ ৯১ শতাংশ থেকে কমে ৮৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন- আগামী ১০০ দিন দেশের জন্য সংকটময়, কোভিডের তৃতীয় তরঙ্গ নিয়ে সতর্ক বার্তা কেন্দ্রের
করোনার দ্বারা প্রভাবিত
হু-এর মতে, ২০২০ সালে প্রায় ২৩ মিলিয়ন শিশুকে রুটিন টিকাকরণ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। করোনার প্রভাবে সেগুলি বন্ধ রাখা হয়েছিল। এর ফলে রুটিন টিকা পায়নি বহু শিশু। প্রায় ১৭ মিলিয়ন শিশু গত বছর কোনও টিকাই পায়নি। আর সেই কারণেই এই সংখ্যাটা বেড়ে গিয়েছে।
লকডাউনের মাধ্য়মে সমস্যা
করোনার সংক্রমণের কারণে জারি হয়েছিল লকডাউন। আর সেই সময় বহু ক্লিনিক বন্ধ রাখা হয়েছিল। তার ফলে অনেক অভিভাবকই শিশুকে টিকা দেওয়াতে পারেননি। এমনকী, বাইরে নিয়ে যাওয়ার ফলে সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেও অনেকে বাচ্চাকে বাড়ি থেকে বের করেননি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাসকারী শিশুরা।
আরও পড়ুন- কোভিডের তৃতীয় তরঙ্গের আগে বড় স্বস্তি, শিশুদের টিকা নিয়ে কেন্দ্র তথ্য দিল আদালতকে
হু-এর মতে
হু-এর ডিরেক্টর টেড্রোস অ্যাধানম ঘেব্রয়েয়াস বলেছেন, "দেশগুলি যখন করোনার টিকার জন্য লড়াই করতে দেখা গিয়েছে, তখন আমরা অন্য টিকাকরণের দিক থেকে পিছিয়ে পড়েছি। এটি বাচ্চাদের হাম, পোলিও বা মেনিনজাইটিসের ঝুঁকি বাড়িয়েছে।" করোনার সঙ্গে লড়াই করার ফলে যখন একাধিক টিকা দেওয়া সম্ভব হয়নি ফলে বাদ পড়ে গিয়েছে অন্য টিকাগুলি। তাই এইদিকটি কাজ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে হু।