কাজের সন্ধানে ভুটানে পাড়ি দিয়েছিলেন ৩৮ জন বাঙালি শ্রমিক
আচনকা লকডাউনে আটকে পড়েছিলেন সেই দেশে
তারপর নদীপথ ধরে একদিন ধরে হাঁটলেন তাঁরা
দেশে ফেরার তাগিদে এক দুঃসাহসিক অভিযান
ডালিয়া সরকার - করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গ আচমকা শুধু ভারতেই নয়, থাবা মেরেছে প্রতিবেশী দেশ ভুটানেও। তাই সেখানেও জারি করা হয়েছে লকডাউন। আটকে পড়েছিলেন সেই দেশে কাজের সন্ধানে যাওয়া রাজ্যের ৩৮ জন শ্রমিক। বাড়ি ফেরার তাগিদ কাকে বলে, নিদর্শন রাখলেন তাঁরা। ভুটান থেকে নদী পথে পায়ে হেঁটেই, বৃহস্পতিবার, ভুটান সীমান্তবর্তী আলিপুরদুয়ার জেলার শহর জয়গাঁতে এসে পৌঁছান তাঁরা।
সেই সময় করোনা পরিস্থিতি মোচামুটি নিয়ন্ত্রণে ছিল। রাজ্যে কাজ নেই, তাই আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ির মোট ৩৮ জন শ্রমিক কাজের সন্ধানে গিয়েছিলেন প্রতিবেশী দেশ ভুটানের চুখাতে। দৈনিক ৫০০ টাকা করে পারিশ্রমিকের চুক্তিতে তারা সেখানে পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে কাজও শুরু করেছিল। মাস দুই সবই চলেছে পরিকল্পনামাফিক। কিন্তু, তলেতলে বাড়ছিল করোনা সংক্রমণ। এপ্রিলের মাঝামাঝি অবস্থা এমন জায়গায় পৌঁছায়, যে, ১৭ এপ্রিল করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশব্যাপী লকডাউন জারি করে ভুটান সরকার।
কাজ নেই তাই পারিশ্রমিকও নেই। দেশে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন এই পরিযায়ী শ্রমিকরা। যে সংস্থায় কাজ করতেন, তাদের তাঁরা বলেছিলেন বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করে দিতে। জানানো হয়, কোভিড টেস্ট না করিয়ে ফেরা যাবে না। বাংলার ওই পরিযায়ী শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন, এরপর এক ঠিকাদার সংস্থা, তাদের কোভিড পরীক্ষা করার জন্য জনপ্রতি ৩০০০ টাকা করে দাবি করেছিল। অত টাকা দেওয়ার মতো অবস্থা ছিল না তাদের কাছে। কার্যত বিদেশে বন্দি হয়ে পড়েছিল তারা। এই অবস্থায় ভুটান থেকে পালিয়ে আসার দুঃসাহসিক সিদ্ধান্ত নেন এই ৩৮ জন শ্রমিক।
আরও পড়ুন - এবার ধরা পড়ল 'সাদা ছত্রাক' সংক্রমণ, কালো ছত্রাকের থেকেও মারাত্মক - জেনে নিন বিস্তারিত
আরও পড়ুন - কোভিডে ভারত জুড়ে অনাথ হাজার হাজার শিশু, পাশে দাঁড়ালেন সনিয়া - চিঠিতে কী বললেন মোদীকে
আরও পড়ুন - সাইক্লোনের সতর্কতা অবজ্ঞা করেছিলেন ক্যাপ্টেন, লাইফ ব়্যাফ্টে ছিল ফুটো - তাতেই মৃত ৩৭
সড়কপথে আসলে ভুটালের পুলিশ গ্রেফতার করবে, তাই নদী-পথ ধরেই হাঁটা লাগান তাঁরা। ভুটানের চুখা থেকে লাগাতার এক দিন না থেকে হেঁটে বৃহস্পতিবার সকালে জয়গাঁ থানা এলাকায় এসে পৌঁছান তাঁরা। দেশে পা রাখার পর, জয়গাঁ থানার পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে তাঁদের বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করার আবেদন করেছিলেন ওই শ্রমিকরা। এরপর ৩৮ জনেরই কোভিড পরীক্ষা করা হয় এবার আর ৩০০০ টাকার বিনিময়ে নয়, বিনামূল্যে প্রশাসনের উদ্যোগে করানো হয় পরীক্ষা। জয়ঁগা থানার পক্ষ থেকে তাদের টিফিনেরও ব্যবস্থা করা হয়। তারপর প্রত্যেককেই বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করে জয়ঁগা থানা ও ব্লক প্রশাসন।