পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চাপের মুখে বারবার ভেঙে পড়ার ইতিহাস রয়েছে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপের। কিন্তু যেদিন বিরাট কোহলি খেলেন, সেদিন বিপক্ষই ভেঙে পড়ে।
চেতন শর্মার শেষ বলে ছক্কা মেরে পাকিস্তানকে জিতিয়ে ব্যাট তুলে ছুটে আসছেন জাভেদ মিঁয়াদাদ। এই প্রজন্মের ক্রিকেটাররা সেই ছবি দেখে বড় হয়েছেন। একটা সময় শারজায় শুক্রবার পাকিস্তানের সঙ্গে খেলা থাকলেই হেরে যেত ভারত। সেই সময় ভারতীয় দলকে নিয়ে ঠাট্টা করার স্পর্ধা দেখাতেন ইমরান খান, ওয়াসিম আক্রম, ওয়াকার ইউনিসরা। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত ধরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জিততে শুরু করে ভারত। বিশ্বকাপে তো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের রেকর্ড বরবারই অসাধারণ। সৌরভের পর মহেন্দ্র সিং ধোনিও একাধিকবার পাকিস্তানকে হারিয়েছেন। বিরাট কোহলিও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে আসছেন। রবিবার মেলবোর্নে তেমনই একটি অবিশ্বাস্য ইনিংস খেললেন তিনি। দলের প্রয়োজনের মুহূর্তে তাঁর ব্যাটই সবচেয়ে চওড়া হয়ে উঠল। তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে শেষ বল পর্যন্ত ক্রিজে থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন বিরাট। তিনি ৫৩ বলে ৮২ রান করে অপরাজিত থাকেন। তাঁর ইনিংসে ছিল ৬টি বাউন্ডারি ও ৪টি ছক্কা। বিরাট বুঝিয়ে দিলেন, এই ভারতীয় দল অন্য ধাতুতে গড়া। চাপের মুখে ভেঙে পড়া নয়, বরং পাল্টা লড়াই করে জয় ছিনিয়ে নেওয়াই এই দলের মূলমন্ত্র।
শেষ ওভারে কীভাবে এল জয়?
ভারতের জয়ের জন্য শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৬ রান। ক্রিজে বিরাটের সঙ্গে ছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। বল করতে যান মহম্মদ নওয়াজ। প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজমের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান হার্দিক। বিরাট-হার্দিকের জুটিতে শতাধিক রান যোগ হয়। হার্দিক ফিরে যাওয়ার পর ক্রিজে আসেন অভিজ্ঞ উইকেটকিপার-ব্যাটার দীনেশ কার্তিক। যিনি “ফিনিশার” হিসেবে পরিচিত। এদিন কিন্তু দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেননি কার্তিক। প্রথম বলে তিনি ১ রান নিয়ে বিরাটকে স্ট্রাইক দেন। ওভারের তৃতীয় বলে বিরাট নেন ২ রান। পরের বলে তিনি ছক্কা মারেন। বলটি কোমরের উপরে ছিল। সেই কারণে আম্পায়ার নো বল দেন। বাড়তি ১ রান ও ফ্রি-হিট পায় ভারত। এরপর ওয়াইড বল করেন নওয়াজ। ফলে ফ্রি-হিট নষ্ট হয়নি। পরের বলে বিরাট বোল্ড হয়ে গেলেও, ফ্রি-হিটের জন্য উইকেট খোয়াতে হয়নি। উল্টে তিনি ছুটে ৩ রান নিয়ে নেন। শেষ ২ বলে ভারতের জয়ের জন্য দরকার ছিল ২ রান। সেই সময় কার্তিক স্টাম্প আউট হয়ে যান। ফলে ফের চাপে পড়ে যায় ভারত। শেষ বলে দরকার ছিল ২ রান। ক্রিজে আসেন অভিজ্ঞ রবিচন্দ্রন অশ্বিন। এবার লেগ-সাইডে ওয়াইড বল করেন নওয়াজ। বুদ্ধি করে বলটি মারার চেষ্টা না করে ক্রিজের ডানদিকে সরে যান অশ্বিন। তিনি এরপর শেষ বল মিড অনের মাথার উপর দিয়ে তুলে ছুটে ১ রান দিয়ে ভারতকে জেতান।
ভারতের ইনিংসের শুরুতেই কে এল রাহুল ও রোহিত শর্মার উইকেট তুলে নিয়ে সুবিধাজনক জায়গায় চলে গিয়েছিল পাকিস্তান। সূর্যকুমার যাদব ও অক্ষর প্যাটেল আউট হয়ে যাওয়ার পর আরও চাপে পড়ে যায় ভারত। কিন্তু দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে জয় ছিনিয়ে নিলেন বিরাট-হার্দিক। তাঁদের কাছে হেরে গেল পাকিস্তানের তারুণ্যের স্পর্ধা।
আরও পড়ুন-