আমাদের সকলের চোখের আড়ালে নিরন্তর ঘটে চলেছে ‘তাণ্ডব’, কীভাবে হাজরা পার্কের দুর্গাপুজোয় তা হতে চলেছে স্পষ্ট?

১৯৪২ সালে সালে তৎকালীন মেয়র শ্রী চিত্তরঞ্জন দাস এবং শ্রী সুভাষ চন্দ্র বসুর নির্দেশনায় কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের সহায়তায় এই দুর্গাপুজো শুরু হয়।

Sahely Sen | Published : Sep 17, 2022 1:45 PM IST

২০২২-এ এসে ৮০ বছরে পদার্পণ করল হাজরা পার্ক দুর্গোৎসব কমিটির দুর্গাপুজো। অভিনব মণ্ডপ ভাবনা আর প্রতিমার কারুকাজ নিয়ে এবারের থিম ‘তাণ্ডব’ জয় করে নেবে প্রত্যেক দর্শনার্থীর মন। কিন্তু, এই ‘তাণ্ডব’ থিমের মহিমা কী?

সাম্প্রতিক সময়ে সারা বিশ্বজুড়ে ঘটে চলা বিভিন্ন সঙ্কট, দোলাচলকে উপস্থাপিত করা হয়েছে এই ‘তাণ্ডব’ থিমের মধ্যে দিয়ে। থিমের ভাবনা এবং উপস্থাপনায় এটি হয়ে উঠবে মানবজীবনের জীবন্ত দলিল। দক্ষিণ কলকাতার যতীন দাস পার্কের নিকট হাজরা ক্রসিংয়ের পাশেই অবস্থিত এই পুজো মণ্ডপ।


হিন্দু শাস্ত্রে তাণ্ডবের বৈজ্ঞানিক সত্য বিশ্বতত্ত্ব অনুসারে বর্ণিত রয়েছে। এই মহাবিশ্বে প্রতি নিয়ত, প্রতি মূহুর্তে ঘটে চলেছে তাণ্ডব। অদেখা সৃষ্টি হিসাবে যা প্রায় সবসময়েই থেকে যায় লোকচক্ষুর অন্তরালে। মহাবিশ্বের বিভিন্ন স্তরে ঘটে যাওয়া পারমাণবিক অস্থিরতায় ধ্বংস ও সৃষ্টির দৈনন্দিন চক্র আবর্তিত হতে থাকে এবং বজায় থাকে গোটা বিশ্ব প্রকৃতির ভারসাম্য। হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে, তাণ্ডব আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা আমাদের অজান্তেই ঘটে চলেছে অবিরাম, অবিরত। 

প্রতি মূহুর্তে মানব শরীরে অনুভূতির আড়ালে অনুরণিত হচ্ছে মহাশক্তির তরঙ্গের ঢেউ। সমগ্র মহাবিশ্ব শক্তির একক উৎস। আবার, সেই একক শক্তির রূপান্তরও ঘটে। মহাবিশ্ব একটি একক শক্তির আধারে পরিণত হয়, যা আবারও বহুমাত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এইই হল তাণ্ডব। এটি শুধুমাত্র একটি ঘটনা নয়, যা একটি নির্দিষ্ট মুহূর্তে ঘটে, তাণ্ডব আসলে মহাবিশ্বের একটি অবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া, যা আমরা সাধারণত ঐশ্বরিক দৃষ্টিকোণ থেকেই জানি।

হাজরা পার্কের দুর্গাপূজার থিম ‘তাণ্ডব’ জীবনের এই শক্তিকেই  দেখানোর চেষ্টা করেছে। এই কাজটির শৈল্পিক প্রয়োগ দর্শকের কাছে নিত্যদিনের সাক্ষী হয়ে থাকবে। হাজরা পার্ক দুর্গোৎসব কমিটির যৌথ সম্পাদক সায়ন দেব চ্যাটার্জি সাংবাদিকদের জানান, “এবারের থিম হল মহাবিশ্বের ক্রমাগত প্রক্রিয়া নিয়ে ভাবনার ফসল। আমাদের থিমটি হল তাণ্ডব, যা আসলে মানব জীবনের একটি ভৌত দলিল। থিমের মূল ধারণা তাণ্ডব, যা মূলত কোনো নির্দিষ্ট মুহূর্ত নয়, বরং একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। সৃষ্টির তত্ত্ব অনুসারে এই মহাবিশ্বের কোথাও না কোথাও হানাহানি ঘটে প্রতিদিন। মহাবিশ্বের বিভিন্ন স্তরে ঘটে যাওয়া অনু-পারমাণবিক সময়ে ধ্বংস ও সৃষ্টির আধার তৈরি হয়। ভবানীপুরে এই পূজা শুরু হয়, চলে  কয়েক বছর ধরে, পরে  এটি ১৯৪৫ সালে হাজরা পার্কে স্থানান্তরিত হয়। প্রথম থেকেই এই পুজো অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে কথা বলেছে।”


যখন লাগামহীন বৃষ্টি বিস্তীর্ণ চরাচরকে ধুয়ে দেয়, তখন পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলি গৃহহীনদের জন্য নতুন আবাস হিসাবে আবির্ভূত হয় যারা প্রকৃতির উন্মত্ত রূপের সামনে তাদের জাগ্রত চেতনা ছাড়া প্রায় সবকিছুই হারিয়ে ফেলেছেন। ঝড় যখন ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে, প্রকৃতি এবং মানুষের জীবনকে একইভাবে ধ্বংস করছে। এটি সম্পূর্ণ মানব সভ্যতার অবক্ষয় ঘটায় এবং একটি আধুনিক সমাজকে ছোট্ট ছোঁয়ায় ধ্বংস করার ক্ষমতা দেখিয়ে যায়। 

গত ৩টি  বছর ধরে  আমরা  করোনা অতিমারীর বিরুদ্ধে  অবিরাম লড়াই করে  এসেছি।  আক্ষরিক অর্থেই  সে মানবজীবনকে ধ্বংস করে, চালিয়েছে ‘তাণ্ডব’। হাজরা পার্ক দুর্গোৎসব কমিটি চায় সেই তাণ্ডবের দিন শেষ  হোক। মা এর আশীর্বাদ বর্ষিত হোক প্রত্যেকের জীবনে। হাজরা পার্কের দুর্গাপুজোর নিজস্ব তাৎপর্য ও গৌরব রয়েছে। একটা সময় ছিল যখন এই পুজো প্রধানত উচ্চবিত্ত ও উচ্চবর্ণের পরিবারের বাড়ির অধিগ্রহনে ছিল। নিম্নবর্ণের মানুষদের এই পুজোগুলিতে প্রবেশাধিকার ছিলো না এবং দেবীর প্রসাদ থেকেও তাঁরা বঞ্চিত রয়ে যেতেন।

এই সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের পুজোর আনন্দ উপভোগ করাটা ছিল কল্পনাতীত। ধীরে ধীরে পারিবারিক পুজোগুলি ‘বারোয়ারি পুজো’-য়  বদলে যেতে শুরু করে। কিন্তু, "সর্বজনীন" বা ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে উঠতে দীর্ঘ পথ তখনও বাকি ছিল। সেইসব দিনে তথাকথি ‘হরিজন’-দের  অপবিত্র বলে মনে করা হত। তাই পুজো প্যান্ডেলগুলিতে তাদের প্রবেশে সীমাবদ্ধতা ছিল।


১৯৪২ সালে সালে তৎকালীন মেয়র শ্রী সি আর দাস এবং শ্রী সুভাষ চন্দ্র বসুর নির্দেশনায় কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের সহায়তায় এই দুর্গাপুজো শুরু হয়। এই পুজো সাধারণ জনগণ, সুবিধাবঞ্চিত, অনগ্রসর শ্রেণী এবং হরিজনদের জন্য উন্মুক্ত ছিল, যা আজও অব্যাহত রয়েছে। এর আগে, এই পূজা ভবানীপুরে অনুষ্ঠিত হত। ১৯৪৫ সালে তা হাজরা পার্কে স্থানান্তরিত হয়। আজও, ঐতিহ্য হিসাবে, প্রায় ১০০০ হরিজন উপবিষ্ট এবং ব্যক্তিগতভাবে কমিটির সদস্যদের দ্বারা ভোগ ও প্রসাদ পরিবেশন করা হয়।

আরও পড়ুন-
জন্মদিনে ভেদাভেদ নির্মূল, নরেন্দ্র মোদীকে শুভেচ্ছা জানালেন মমতা, কেজরিওয়াল, রাহুল
মোদীর জন্মদিনে ‘শাহী’ শুভেচ্ছা, সশ্রদ্ধ টুইটবার্তায় ভরিয়ে দিলেন রাজনাথ সিং, শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদার
পাহাড় জঙ্গলে আবৃত পুরুলিয়ার রাজাহেঁসলা গ্রামের দুর্গাপুজো, দুর্গম পথ পেরিয়ে প্রতি বছর আসেন একদিনের রাজা

Read more Articles on
Share this article
click me!