তিব্বতের ‘তোরমা’-র আদলে তেলেঙ্গাবাগানের দুর্গাপুজোর মণ্ডপ, আবহ সুর বুনেছেন বাংলার বিখ্যাত গায়ক সিধু

তেলেঙ্গাবাগানের দুর্গাপুজো এবছর পা দিচ্ছে ৫৭ তম বর্ষে। এবারের থিম ‘তোরমা’। তিব্বতের এক বিশেষ নৈবেদ্যর আদলে গড়ে উঠছে অভাবনীয় এক পূজা মণ্ডপ। 

২০২২-এ এসে ৫৭ তম বর্ষে পা দিল উত্তর কলকাতার তেলেঙ্গাবাগানের দুর্গাপুজো। অঢেল মানুষের ভিড় উপচে পড়ার আগে থেকেই যেখানে থাকে কলকাতা পুলিশের কড়া নজর এবং আঁটোসাঁটো পুলিশি প্রহরা, সেই পুজোয় এবছরের থিম হল ‘তোরমা’।
 
তােরমা হল তিব্বতীয় প্রথায় তৈরি কেক, যা বৌদ্ধ ধর্মের নৈবেদ্য হিসাবে ব্যবহার করা হয়। তিব্বতে সাধারণত এই খাদ্যসামগ্রী দিয়ে তৈরি নৈবেদ্যটি ঈশ্বরের কাছে পরিবেশন করা হয়। বার্লি নামক শস্য ও ইয়াক মাখন দিয়ে এই নৈবেদ্য তৈরী হয় যা গলিত মাখনে আবৃত থাকে। তােরমা সন্ন্যাসী এবং সাধারণ মানুষ,  উভয়ের দ্বারাই তৈরী হয়ে থাকে। ভগবান বুদ্ধের বৌদ্ধের চিত্রের সিলুয়েট বা মেরু পর্বতের আকৃতি অনুকরণ করে পাথরের স্তুপ তৈরীর ঐতিহ্য থেকে এই বিশেষ আকৃতিটি পরিকল্পিত হয়েছে। নানা রকম ফুল ও কলকার অলংকরণে সজ্জিত থাকে। তিব্বতের তান্ত্রিক আচার অনুষ্ঠানের ওপর নির্ভর করে তােরমার রঙ ও আকার দেওয়া হয়, যেমন সাদা তােরমা (তারা ও অবলােকিতেশ্বর দেবতা, অর্থাৎ শান্ত দেবতাদের নিবেদন করা হয়)। লাল তােরমা বজ্রযােগিনী ও চক্রসম্ভার দেবতা, অর্থাৎ ক্রদ্ধ দেবতাদের নিবেদন করা হয়। এছাড়া খাবার তােরমা যা ভােজ অনুশীলনে ব্যবহার করা হয় ও প্রাণীদের জন্য অবশিষ্টাংশ রেখে দেওয়া হয়।

ধর্মরক্ষাকারী ও বাধাসৃষ্টিকারী আত্মা এবং অন্যান্য নিম্নবর্গীয় মানুষদের জন্যও তােরমা নিবেদন করা হয়। একে বলা হয় গোর। তােরমা শুধু নৈবেদ্যই নয়, নিঃস্বার্থতা,অস্থিরতা এবং বােধিসত্ত্বর পথের বৌদ্ধ ধারণাকে নির্দেশ করে। তােরমা তৈরীর কাজটি আধ্যাত্মিক, মনশুদ্ধিকারী এবং উপকারী বলে মনে করা হয়। তােরমা অর্ঘ্যের মধ্য দিয়ে নির্দিষ্ট ধ্যান, মুদ্রা ও জ্ঞান সংহিতাবদ্ধ আচার অন্তর্ভুক্ত এবং প্রায়শই বুদ্ধ বা বােধিসত্ত্বদের অর্পণ করা হয়। তােরমার আকৃতির উপাসনা স্থলকে দেবতাদের বাসস্থান হিসেবে গণ্য করা হয়। এমনই এক বৌদ্ধিক ধর্মীয় প্রার্থনাস্থল ‘তােরমা’, যে আদলে গড়ে উঠবে তেলেঙ্গাবাগানের সমগ্র পূজা মণ্ডপটি। তোরমার অন্দরেই হবে মাতৃ মূর্তির অধিষ্ঠান। বিভিন্ন আকারের তােরমা দিয়ে সেজে উঠবে তেলেঙ্গাবাগানের পূজা প্রাঙ্গণ। মণ্ডপটি এই বার্তাই বহন করে যে, প্রত্যেক মানুষের ঘরে ঘরে মা যেন নৈবেদ্য রূপে বিরাজমান হন এবং সকলের খাদ্য ভাণ্ডার সদা পরিপূর্ণ থাকে। ঈশ্বর পাটনির মতো মায়ের কাছে পুজো উদ্যোক্তাদের প্রার্থনা, 'আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’। 

Latest Videos

৫৭তম বর্ষপূর্তিতে তেলেঙ্গাবাগানের দুর্গাপুজোর বাজেট এবছর প্রায় ২২ লাখ। দুর্গাপুজোর মণ্ডপটি সৃজন করেছেন শিল্পী মানস রায়। ভারতের উত্তর-পূর্বের সংস্কৃতি মেনে বৌদ্ধ আদলে প্রতিমা গড়ে তুলেছেন মৃত্তিকাশিল্পী ভাস্কর প্রদীপ রুদ্র পাল। পাহাড়ি সুরে আবহ সঙ্গীত সৃষ্টি করেছেন বাংলার বিখ্যাত গায়ক সিধু অর্থাৎ, সিদ্ধার্থ রায়। মণ্ডপটি আলাে দিয়ে সাজিয়ে তুলবেন শিল্পী দেবাশীষ দাস। 

কোভিড সতর্কতা মেনে সম্পূর্ণ প্যান্ডেল থাকছে খোলামেলা। দর্শনার্থীদের ভিড়ের কথা মাথায় রেখে মণ্ডপের প্রবেশ ও প্রস্থানের পথ যথেষ্ট বড় রাখা হয়েছে। এছাড়াও, দর্শকদের ভিড় বা গাদাগাদি এড়াতে সর্বদা প্রস্তুত থাকছে ক্লাবের বিশেষ স্বেচ্ছাসেবক দল। 

আরও পড়ুন-
আত্মপ্রত্যয়ের স্ফুরণ ছড়িয়ে দিতে চোরবাগান সার্বজনীনের থিম ‘অন্তর্শক্তি’, সম্মান জানাল স্বয়ং ইউনেস্কো
‘মা’-এর স্নেহে আচ্ছাদিত কাশী বোস লেনের দুর্গাপুজো, কলকাতায় প্রথম থ্রি ডাইমেনশনাল দৃশ্যের পুজোমণ্ডপ
মা কেন ‘অশুচি’?  লালবাগান সার্বজনীনে এবছর একেবারে ভিন্ন রূপে দুর্গার উপাখ্যান

Read more Articles on
Share this article
click me!

Latest Videos

'একটা আস্ত অশিক্ষিত...গোটা রাজ্যটাই জঙ্গিদের হাতে' কড়া বার্তা শুভেন্দুর | Suvendu Adhikari
Suvendu Adhikari Live: এগরায় জনসভা শুভেন্দুর, কী বার্তা, দেখুন সরাসরি
‘Bangladesh-কে মারতে হবে না চোখ দেখালেই যথেষ্ঠ’ বাংলাদেশকে ধুয়ে দিলেন Dilip Ghosh | Bangladesh News
'উল্টো ঝুলিয়ে সোজা করব', এগরার জনসভায় এসে কাকে বললেন Suvendu Adhikari ?
Dev Adhikari : এবার কী আসছে খাদান ২? খাদান সাফল্য পেতেই বড়সড় ঘোষণা দেব-যীশুদের