জমিদার বাড়ির পুজোর আজ আর সেই জৌলুস নেই। কিন্তু, পুজোর অতিহ্য ও আভিজাত্য দুই রয়ে গিয়েছে। আর এই প্রাচীন জমিদার বাড়ির পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে রামকৃষ্ণদেবের স্মৃতি।
সময়ের সঙ্গে হারিয়েছে জমিদার এবং জমিদারি। ইতিহাসকে (History) স্বাক্ষী করে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে বাঁকুড়ার কোতুলপুর ভদ্র জমিদার বাড়ি (kotulpur bhadra zamindari)। নহবতখানা, খাজাঞ্চিখানা, গোবর্ধন মন্দির, রাসমঞ্চ, দুর্গা মণ্ডপ সবই রয়েছে সেখানে। তবে সবই জৌলুস হারিয়ে ফেলেছে। প্রায় ভগ্ন অবস্থাতেই সেগুলি পড়ে রয়েছে। অবশ্য ভগ্নপ্রায় এই বাড়িতে অতীতের স্মৃতি বিজড়িত দুর্গা দালানে আজও সমানভাবে দেবী দুর্গার পুজো (Durga Puja) করা হয়।
জমিদার বাড়ির পুজোর আজ আর সেই জৌলুস নেই। কিন্তু, পুজোর অতিহ্য ও আভিজাত্য দুই রয়ে গিয়েছে। আর এই প্রাচীন জমিদার বাড়ির পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে রামকৃষ্ণদেবের স্মৃতি। দুর্গা দালানে বসে পুজোর কটাদিন অতীতের একাধিক স্মৃতিগুলি রোমন্থন করেন ভদ্র জমিদার বাড়ির বর্তমান সদস্যরা।
আরও পড়ুন- Durga Puja- দুর্গাপুজোর সময় মনসা পুজোয় মেতে ওঠেন ফুলঘরা গ্রামের বাসিন্দারা
একসময় কোতুলপুরের ভদ্র পরিবারের মূল ব্যবসা ছিল লবণের আমদানি ও রপ্তানি। সেই থেকেই ভদ্র জমিদারদের উত্থান শুরু হয়। লবণ ব্যবসার সৌজন্যে ফুলে ফেঁপে উঠেছিল এই পরিবার। শোনা যায়, তৎকালীন বর্ধমানের মহারাজ উদয় চাঁদ মহাতাপের কাছ থেকে কোতুলপুর লাগোয়া উর্বর ১৭টি তালুকের জমিদারী সত্ব কিনে নিয়েছিল ভদ্র জমিদারদের পূর্বপুরুষ। একদিকে রমরমিয়ে চলা লবণ ব্যবসা। অন্যদিকে জমিদারীর বিপুল আয়ে কোতুলপুরে তৈরি হয় ভদ্র জমিদারের বিরাট রাজত্ব।
তারপরই শুরু হয় দেবী দুর্গার আরাধনা। যা প্রায় সাড়ে ৩০০ বছর আগের কথা। শুধু দুর্গা পুজো নয় সারা বছর নানান উৎসব পালন করতেন জমিদাররা। জমিদার বাড়ির উঠোনে তৈরি হয়েছিল দুর্গা মণ্ডপ। বাড়ির জৌলুস ও পুজোতে এক সময় গমগম করত জমিদার বাড়ির উঠোন। ১৮৮০ সালের ১০ অক্টোবর কোতুলপুরের এই ভদ্র বাড়ির দুর্গা দালানে সপ্তমীর সন্ধ্যায় আরতি দেখেছিলেন রামকৃষ্ণ। দুর্গা দালানকে ঘিরে রয়েছে সেই স্মৃতিও।
আরও পড়ুন- Durga Puja 2021: সর্বমঙ্গলা মায়ের ঘট আনার মাধ্যমেই শারদ উৎসবের সূচনা বর্ধমানে
পূর্বপুরুষদের প্রতিষ্ঠা করা প্রাচীন পুজো আজও নিয়ম মেনে পালন করেন ভদ্র বাড়ির বর্তমান প্রজন্মরা। আজ জমিদার না থাকলেও জমিদার আমলের পুজার কোনও খামতি রাখেন না জমিদার বাড়ির বর্তমান সদস্যরা। পুজোর জৌলুস কমে গিয়েছে কিন্তু রয়ে গিয়েছে ঐতিহ্য ও আভিজাত্য। আর দুর্গা দালানে পুজোর কটা দিন খুঁজে পাওয়া যায় অতীতের সেই হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস। বছরের বাকিদিন এই বাড়িতে আসা যাওয়া লেগে না থাকলেও পুজোর সময় একত্রিত হন পরিবারের সব সদস্য। পুজোর কটা দিন গল্প আড্ডায় জমে উঠে বাঁকুড়ার কোতুলপুর ভদ্র জমিদার বাড়ির চত্বর।