আদালত এই অর্ডার পাস করতে গিয়ে আরও জানিয়েছে, এরপরই আবেদনকারীর দাবির পক্ষের বৈধতা এবং বিবাদী পক্ষ মানে নুসরত জাহানের অবস্থানের পক্ষের দাবির বৈধতা খতিয়ে দেখা হয়। এই বৈধতা খতিয়ে দেখার পথে আদালত কী কী পেয়েছে তা বিস্তারিতভাবে বলাও হয়েছে এই অর্ডারে।
এক যে ছিল রাজকন্যে- যার পুতুল পুতুল গড়ন, আর এক যে ছিল রাজপুত্র- যার রূপ আর সম্পদ ছিল চোখ ধাঁধানোর মতো। অতপরঃ! যা হওয়ার তাই হয়েছিল। ডেস্টিনেশন ওয়েডিং। তুরস্কের মন-মুগ্ধ করা বৈভবে চার হাতের এক হওয়া। যা-কে বলে এক্কেবারে বিগ ফ্যাট ওয়েডিং। কিন্তু, সেই বিয়ের মধুচন্দ্রিমার যবনিকা পড়ে গিয়েছে বছর খানেক আগে। সুতোর মতো ঝুলছিল বিয়ের বৈধতা নিয়ে এক আইনি লড়াই। অবশেষে ১৭ নভেম্বর তাতেও দাড়ি পড়ল আপাতত। কারণ, আদালত জানিয়েছে তুরস্কের বিলাসবহুল দ্বীপে যে বিয়ের কথা বলা হচ্ছে তা আদৌ কোনও বিয়ে নয়, ওটা ছিল একটা বিয়ের পার্টি। অতঃ কিম! এই বিয়ে নিয়ে আইনি লড়াই-এর কোনও জায়গাই নেই। তাই উত্তেজনার পারদ আর মিডিয়ার ফোকাসে বিচ্ছেদের আঙিনায় থাকা বাঙালি সেলিব্রিটি কাপল নুসরত জাহান ও নিখিল জৈন আইনি মতে বৈধ বিবাহে আবদ্ধ নন। আর তাই আলিপুর আদালতও এমন বিয়ে নিয়ে কোনও আইনি রায় দেওয়ার জায়গা নেই।
১৭ নভেম্বর আলিপুর আদালত যে ফাইনাল অর্ডার পাস করেছে, যার রেফারেন্স হল টিএস নং ২৫১ অফ ২০২১, সিএনআর নম্বর ডবলুবিএসপি০২-০০০৫৪৪-২০২১, জিও কোড ডবলুবি০১৬৬, অর্ডার ডেট ১৬ নভেম্বর, ২০২১- এতি পরিস্কার করে লেখা হয়েছে যে, এই মামলার সঙ্গে জড়িত থাকা বাদি এবং বিবাদী পক্ষ তাদের প্রতিনিধিদের দ্বারা হাজিরা দিয়েছেন। এরপর এই আদালতের অর্ডারের একটি স্থানে বলা হয়েছে, মামলার আবেদনকারী নিখিল জৈন ৬২,৫০০ টাকার কোর্ট ফিস দিয়ে আবেদন দাখিল করেছিলেন। যাতে নিখিল জৈন জানিয়েছিলেন যে ১৯ জুন ২০১৯-এ তুরস্কতে সেদিন তিনি এবং নুসরত জাহান কোনও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হননি।
আদালত এই অর্ডার পাস করতে গিয়ে আরও জানিয়েছে, এরপরই আবেদনকারীর দাবির পক্ষের বৈধতা এবং বিবাদী পক্ষ মানে নুসরত জাহানের অবস্থানের পক্ষের দাবির বৈধতা খতিয়ে দেখা হয়। এই বৈধতা খতিয়ে দেখার পথে আদালত কী কী পেয়েছে তা বিস্তারিতভাবে বলাও হয়েছে এই অর্ডারে। এখানে বলা হয়েছে- মামলার আবেদনকারী একজন হিন্দু এবং বিবাদী একজন মুসলিম। দুজনেই দুজনের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে একসঙ্গে থাকার এবং বিবাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এরজন্য দুজনেই কিছু বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তুরস্ক যান। সেখানে তাঁরা একটি বিয়ের পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে ওয়েস্টার্ন কালচার এবং ভারতীয় স্টাইলে ও হিন্দু সংস্কার মেনে তাঁরা বিয়ে করেন। কিন্তু, এই বিয়ে-কে তাঁরা তুরস্কতে রেজিস্টার করাননি। যেহেতু এটা ছিল একটা ইন্টার-রিলিজিয়ন ম্যারেজ সেহেতু দুই পরিবারই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পরে স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টে আইনি বিয়ে সম্পন্ন করার।
এরপর আদালত তার অর্ডারে জানাচ্ছে যে- তুরস্ক থেকে ভারতে ফিরে আসার পর আবেদনকারী এবং বিবাদী একসঙ্গে একই ছাদের তলায় থাকতে শুরু করেন। আলিপুর রোডে নীহারিকা অ্যাপার্টমেন্টে দুজনে একসঙ্গে থাকছিলেন। এই সময়ে তাঁদের মধ্যে যে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল তা দুজনের সম্মতি মেনেই। যিনি বিবাদী তিনি আবার ভারতীয় সংসদের সদস্য। সেই ক্ষমতাবলে বিবাদী এবং আবেদনকারী ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্টও বের করে নিয়েছিলেন। এই পাসপোর্টে তাঁরা একে অপরকে দম্পতি বলেও উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু দুজনে যে একসঙ্গে বসবাস করছিলেন তাকে ইউনিয়ন বলে ব্যাখ্যা করেছে আদালত।
এরপর একাধিক কারণে আবেদনকারী ও বিবাদী-র মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে এবং দুজনেই তাঁদের এই একসঙ্গে থাকার বিষয়টি ভবিষ্যতে চালু রাখতে চাইছিল না। এরপরই দুজনে আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নেন। আদালতের দেওয়া অর্ডারে এরপর বলা হয়েছে যে, এই দুজনে যেভাবে বসবাস করছিলেন এবং শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন তা ইচ্ছাকৃত এবং একটা ইউনিয়ন লিভিং ছিল। এই দুজনের বিয়ে কোনও ধর্মীয় আচার-বিধি মেনে হয়নি এবং একজন হিন্দু ও মুসলিমের মধ্যে বিবাহ সম্পর্কীত সম্পর্কে আইনি বৈধতা ছাড়া বিবাহ বলে স্বীকৃতি দেওয়ার মতো কোনও আইন নেই। কারণ এঁরা স্পেশাল ম্যারেড অ্যাক্টে তাঁদের বিবাহকে নথিভুক্ত করেননি। তাই সম্মতিসূচক সহবাস আর একসঙ্গে থাকাকে কোনওভাবেই বিয়ে বলা সম্ভব নয়।
Nusrat-Nikhil Divorce - বিয়েকে মান্যতাই দিল না আদালত, নুসরতের বিরুদ্ধে বিচ্ছেদ মামলায় জয় নিখিলের
Mysterious lake -ভারতের এই হ্রদের ওপর দিয়ে উড়েছিল অনেক বিমান,আর মেলেনি খোঁজ
আলিপুর আদালতের ফাইনাল অর্ডারে আরও বলা হয়েছে যে, বিবাদী তিনি তাঁর যে এফিডেভিট জমা করেছে এবং তাতে যে তথ্য দিয়েছেন তাতে আবেদনকারীর দাবিকে মেনে নেওয়ার বিষয়টি পরিস্কার হয়ে গিয়েছে। আর তাই এই মামলার সমস্ত দিক খতিয়ে দেখেই আদালত সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে এই বিয়ের কোনও আইনি বৈধতা নেই। আর যে বিয়ের আইনি বৈধতা নেই তাতে আইনগতভাবে রায় দেওয়ার কিছুই নেই। এই অর্ডার যেটা বলা হচ্ছে এই বিয়ে নিয়ে আদালতে অবস্থান তাতেই স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। আর তাই আদালত পরিস্কার করে জানাচ্ছে যে আবেদনকারী ও বিবাদীর মধ্যে যে ১৯ জুন ২০১৯ তুরস্কের বোদগামে বিয়ের যে বিষয়টি ঘটেছিল তা আইনিভাবে বৈধ নয়।