নিউ ইয়র্কের মন্টোগোমারি কাউন্টির এক এঁদো গলির রাশিয়ান অভিবাসী বার্থা-হ্যারি দম্পতির ছেলে ইশার ড্যানিয়েলোভিচ ডেমস্কি যে ভবিষ্যতে হলিউডের একজন কিংবদন্তী অভিনেতায় পরিণত হবেন, সেটা হয়তো সুদূর কল্পনাতেও ভাবতে পারেননি কেউ।
নিজের পুরুষালি চেহারা এবং সহজাত অভিনয় প্রতিভা দিয়ে ষাট এবং সত্তরের দশকে পর্দা কাঁপিয়েছেন একের পর এক কালজয়ী হলিউডি ছবিতে। বিপ্লবী ক্রীতদাস, নির্দয় কাউবয়, খামখেয়ালী চিত্রশিল্পী, হতাশ চিত্রপরিচালক বিচিত্র সব চরিত্রে অভিনয় করেছেন কার্ক ডগলাস।
ছবি- ছেলে এবং হলিউডের বিখ্যাত অভিনেতা মাইকেল ডগলাসের সঙ্গে কার্ক
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইউএস নেভিতে যোগ দিয়ে পিতৃপ্রদত্ত নামটি পাল্টে ফেলেন তিনি। এক সাবমেরিন দুর্ঘটনায় আহত হয়ে নেভি থেকে অব্যাহতি পান। ফিরে এসে নিউ ইয়র্কের রেডিও এবং থিয়েটারে জড়িয়ে পড়েন। পুরনো বন্ধু লরেন বেকল তার প্রযোজক বন্ধু হ্যাল বি. ওয়ালিসের সাথে কার্কের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর কার্কের সিনেমা জীবন শুরু।
বেশ কিছু ছবিতে কাজ করলেও নিজের মনমতো চরিত্র পাচ্ছিলেন না কার্ক। অবশেষে ‘চ্যাম্পিয়ন’ ছবিতে বক্সারের চরিত্রে অভিনয় এবং প্রথম অস্কার মনোনয়ন। এরপর ‘দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য বিউটিফুল’। একাকিত্বতে ভোগা হলিউডের এক প্রযোজকের ভূমিকায় অভিনয় করে কার্ক পেয়ে যান ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অস্কার।
আরও পড়ুন- আরতি দাস থেকে মিস শেফালি, কীভাবে ষাটের দশকে রাতের কুইন হয়ে ওঠা
এরপর ‘লাস্ট ফর লাইফ’। এই ছবিতে ডাচ চিত্রকর ভিনসেন্ট ভ্যান গগের ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। কাহিনী সাদামাটা হলেও ভ্যানগগের খামখেয়ালী চরিত্রের এক অসাধারণ প্রতিকৃতি হিসেবে বিবেচনা করা হয় ছবিটিকে। ‘লাস্ট অফ লাইফ’ হয়ত কাহিনীগতভাবে ভ্যান গগের মানসিক অবস্থার গভীরে যেতে পারেনি। কিন্তু লালচে চুল-দাঁড়ির আড়ালে থাকা কার্ক ভ্যান গগের আত্মপ্রতিকৃতির সঙ্গে আশ্চর্যজনকভাবে মিলে গিয়েছিলেন। ছবিতে ডগলাসকে মনে হয়, আলো-ছায়ার এই পৃথিবীকে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলার সংগ্রামে থাকা শিল্পী আসলে রূপালী পর্দায় উঠে এসেছেন।
এবার ডগলাস শুরু করেন নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ব্রাইনা প্রডাকশনস। সেখান থেকেই মুক্তি পায় তার জীবনের অন্যতম সেরা দুটি ছবি। প্রথমটি ঐতিহাসিক ওয়ার ড্রামা ‘পাথস অফ গ্লোরি (১৯৫৭)’, আর দ্বিতীয়টি ‘স্পার্টাকাস (১৯৬০)’। দুটি ছবির নির্মাতা স্ট্যানলি কুবরিক।
'পাথস অফ গ্লোরি' প্রচলিত আর দশটি যুদ্ধের ওপর করা ছবির থেকে আলাদা, কিছুটা যুদ্ধবিরোধী বলাই যায়। ঘটনাটিও বাস্তবিকভাবে সত্য। তারই প্রেক্ষাপটে নির্মিত হয় এক কোর্ট মাশালকে কেন্দ্র করে। সেই সময়ে এরকম ছবি ছিল দুঃসাহসিক ব্যাপার, কিন্তু কুবরিক এবং ডগলাস আইন আদালতের তোয়াক্কা করেননি।
আরও পড়ুন- 'কারও কাছে আমার জন্য যদি এতটুকু সময় না থাকে, তা হলে আমি কী করব'
রোমান সাম্রাজ্যের ভিত নড়িয়ে দেওয়া বিপ্লবী স্পার্টাকাসের ভূমিকাতেও ডগলাস ছিলেন অনবদ্য। গ্ল্যাডিয়েটর এবং ক্রীতদাসদের একত্র করে পাহাড়ের গভীরে সেনাবাহিনী গঠন কিংবা পদাতিক রোমান সেনাবাহিনীকে মুখোমুখি যুদ্ধে বারবার হারিয়ে দেওয়ার রোমাঞ্চকর কাহিনীর আবেদন চিরকালীন। কিন্তু ‘স্পার্টাকাস’ এর অভিনয়ের পর থেকে সিনেমা দুনিয়ায় কার্ক ডগলাসকে একনামে পরিচিত হয়ে যান।
১৯৮৬ সালে স্ট্যাচু অফ লিবার্টির শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছিলেন তিনি। ১৯৮৮ তে প্রকাশিত হয় তার প্রথম আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস 'দ্য র্যাগম্যান'স সন'। সে বছরের বেস্ট সেলিং উপন্যাসের তালিকায় উঠে যায় বইটি। ‘দ্য র্যাগম্যান’স সন’ ছাড়াও তিনি অনেকগুলো বই লিখেছেন- ‘ড্যান্স উইথ দ্য ডেভিল (১৯৯০)’, ‘দ্য গিফট (১৯৯২)’, ‘লাস্ট ট্যাঙ্গো ইন ব্রুকলিন (১৯৯৪)’, উপন্যাস ‘দ্য ব্রোকেন মিরর (১৯৯৭), ‘ইয়ং হিরোজ অফ বাইবেল (১৯৯৯), ‘ক্লাইম্বিং দ্য মাউন্টেন (২০০১)’, ‘মাই স্ট্রোক অফ লাক (২০০৩)’, ‘আই অ্যাম স্পার্টাকাস! (২০১২)’।
ছবি- ছেলে মাইকেল ও পুত্রবধবূ ক্যাথরিন জিটা জোনস-এর সঙ্গে কার্ক, এক ফ্রেমে ডগলাস পরিবারের দুই পুরুষ
সেনাবাহিনীর জীবন থেকে এসেছেন রূপালী পর্দায়, পরবর্তীতে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন পর্দার পেছনের নানা ক্ষেত্রেও। অভিনয়ে নিজের সেরা সময় পার করে আসার পর বেশিরভাগ অভিনেতাই যেখানে বিষাদগ্রস্থ হয়ে পড়েন, কার্ক ছিলেন সেখানে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম।
আরও পড়ুন- বেলিডান্সের উদ্দামতায় পুরুষদের হার্টথ্রব, খোদ ঋতুপর্ণাও তাঁর ভক্ত