সন্দীপ মজুমদার, হাওড়া: ব্যবধান দিন কয়েকের। করোনা আতঙ্কে এবার হাওড়ায় চরম হেনস্থার শিকার হলেন এক দম্পতি। তাঁদের ভাড়াবাড়িতে ঢুকতে দিলেন না বাড়িওয়ালা। বাধ্য হয়ে রাত কাটাতে হল হাসপাতাল চত্বরে। শেষপর্যন্ত প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ওই দম্পতিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া অন্যত্র। ঘটনাটি ঘটেছে ডোমজুড়ে সলপে।
আরও পড়ুন: মেদিনীপুরে পথ কুকুরদের 'বিষ খাইয়ে মারার চেষ্টা'. থানায় অভিযোগ দায়ের পশুপ্রেমীদের
স্বামী-স্ত্রীর সংসার, সঙ্গে থাকেন না ছেলে। জোমজুড়ে সলপ এলাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন বাসুদেব চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী। ওই দম্পতির একমাত্র ছেলে অন্য একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন ওই এলাকাতেই। স্থানীয় সূত্রে খবর, দিন কয়েক আগে শরীর খারাপ হওয়ায় তাঁকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান বাসুদেববাবু। তখন ওষুধ দিয়ে রোগীকে ছেড়েও দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু বাড়ি ফেরার পর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। দ্বিতীয়বার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ওই যুবকের লালারস বা সোয়াব পরীক্ষা করা হয়। সোমবার পজিটিভি রিপোর্ট আসে। এরপর স্বাস্থ্য দপ্তরের অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে বাসুদেব চট্টোপাধ্যায়ের ছেলেকে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করা হয় ফুলেশ্বরের সঞ্জীবন হাসপাতালে। খবর পেয়ে হাসপাতালে পৌঁছে যান ওই দম্পতি।
সোমবার সন্ধ্যায় যখন হাসপাতাল থেকে ফেরেন বাসুদেববাবু ও তাঁর স্ত্রী, তখন ওই দম্পতিকে বাড়িওয়ালা বাড়িতে ঢুকতে দেননি বলে অভিযোগ। সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, বাড়িতে ঢোকার জন্য করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট আনতে হবে। অনুনয়-বিনয় করেও কোনও লাভ হয়নি। বাসুদেব চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ডোমজুড় থানায় গিয়ে পুলিশের সাহায্য চেয়েছিলেন। কিন্তু খালি হতেই ফিরতে হয়েছে।
থানা থেকে বেরিয়ে ডোমজুড়ে গ্রামীণ হাসপাতালে যান স্বামী-স্ত্রী। সেখানে থার্মাল স্ক্রিনিং-এ জানা যায়, দু'জনের কেউ করোনা আক্রান্ত নন। এরপরও কিন্তু ওই দম্পতিকে ভাড়া বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। বাধ্য হয়ে সোমবার রাতে ডোমজুড় গ্রামীণ হাসপাতাল চত্বরে থাকতে হয় বাসুদেব চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রীকে। মঙ্গলবার সকালে ঘটনার কথা জানতে পেরে ওই অসহায় দম্পতিকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন ডোমজুড়ে বিডিও রাজা ভৌমিক। তিনি বলেন, করোনা নিয়ে আগে মানুষের কোনও ধারণা ছিল না। ধীরে ধীরে সকলেই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছে। বিষয়টি আরও মানবিকভাবে বিচার করা উচিত ছিল।
আরও পড়ুন: বর্ষায় বাড়ছে ডেঙ্গুর আশঙ্কা, সংক্রমণ রুখতে লিফলেটে প্রচার-জোরকদমে কাজ শুরু বিধাননগরে
উল্লেখ্য, দিন কয়েক আগে বালির বীরেশ্বর চ্যাটার্জি স্ট্রিটে এক যুবকের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। সোমবার ভোরে আচমকাই অসুস্থ হয়ে মারা যান ওই যুবকের মা। পরিবারের লোকেদের অভিযোগ, আবাসনে ঢুকতে দেওয়া তো দূর, সংক্রমণের ভয়ে ওই মহিলার দেহ ছুঁতেও রাজি হননি প্রতিবেশীরা। এমনকী করোনা সন্দেহে ডেথ সার্টিফিকেটও দেননি এলাকায় বেশ কয়েকজন চিকিৎসকরা। দীর্ঘক্ষণ খোলা আকাশের নিচে রাস্তাতেই পড়েছিল দেহ। শেষপর্যন্ত পুলিশ দেহটি তুলে নিয়ে যায়। ফের একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল ডোমজুড়ে।