ভারতকে স্বাধীন করতে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করে ব্রিটিশদের হাত থেকে রেহাই পান। সুভাষ চন্দ্র বসু তরুণদের অনুপ্রেরণার উৎস। তাঁর জীবনের সংগ্রামে ভরা যাত্রা এবং দেশকে স্বাধীন করার প্রচেষ্টা এক অমর-গাথা হিসেবে পরিচিত।
সুভাষ চন্দ্র বসু হলেন ভারতীয় ইতিহাসের এমন একজন যুগপুরুষ যিনি স্বাধীনতা সংগ্রামকে নতুন মোড় দিয়েছিলেন। ভারতকে স্বাধীন করতে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করে ব্রিটিশদের হাত থেকে রেহাই পান। সুভাষ চন্দ্র বসু তরুণদের অনুপ্রেরণার উৎস। তাঁর জীবনের সংগ্রামে ভরা যাত্রা এবং দেশকে স্বাধীন করার প্রচেষ্টা এক অমর-গাথা হিসেবে পরিচিত।
রেঙ্গুনে দেওয়া তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণকে প্রতি সময়ে স্মরণ করা প্রয়োজন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার স্বাধীনতা সংগ্রামের সহযোদ্ধারা! স্বাধীনতা চায় আত্মত্যাগ। স্বাধীনতার জন্য আপনি অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন, কিন্তু আপনার জীবন এখনও উৎসর্গ করা বাকি আছে। আমি আপনাদের সবাইকে একটা কথা জিজ্ঞেস করছি আর সেটা হল রক্ত। শত্রুরা আমাদের যে রক্ত ঝরিয়েছে, রক্ত দিয়েই তার প্রতিশোধ নিতে হবে। তাই তুমি আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাকে স্বাধীনতা দেব। এই অঙ্গীকারটি সাধারণ কালি দিয়ে স্বাক্ষর করা উচিত নয়। যার জীবনের প্রতি ভালোবাসা তার দেশের স্বাধীনতার চেয়ে বেশি নয় এবং যিনি স্বাধীনতার জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করতে প্রস্তুত, যাদের শিরায় ভারতীয়তার প্রকৃত রক্ত প্রবাহিত এগিয়ে আসুন।
নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ২৩ জানুয়ারী ১৮৮৯৭ সালে উড়িষ্যার কটক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম জানকীনাথ বসু এবং মাতার নাম প্রভাবতী। বাবা শহরের বিখ্যাত আইনজীবী ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, নেতাজি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করেছিলেন। বসুর দেওয়া জয় হিন্দ স্লোগানটি দেশের জাতীয় স্লোগানে পরিণত হয়।
আজাদ হিন্দ ফৌজ
সুভাষ চন্দ্র সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে ভারতকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে ১৯৪৩ সালের ২১ অক্টোবর 'আজাদ হিন্দ সরকার' প্রতিষ্ঠা করেন এবং 'আজাদ হিন্দ ফৌজ' গঠন করেন। এই সংগঠনের প্রতীক ছিল একটি পতাকায় গর্জনরত বাঘের ছবি। আজাদ হিন্দ ফৌজ বা ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনী ১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ধাপে ধাপে এগোও, সুখের গান গাও- এই ছিল এই সংগঠনের গান, যা শুনে সংগঠনের যোদ্ধারা উৎসাহ-উদ্দীপনায় ভরে উঠত। আজাদ হিন্দ ফৌজের কারণে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করে। এই বাহিনীতে শুধু বিভিন্ন সম্প্রদায়ের যোদ্ধাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না, এর সঙ্গে মহিলাদের একটি রেজিমেন্টও ছিল।
মৃত্যুও ছিল রহস্যময়
মুখোশ ও মুখ বদল করে এক সময় ব্রিটিশদের ধূলিসাৎ করা নেতাজির মৃত্যুও ঘটেছিল অত্যন্ত রহস্যময়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয়ের পর নেতাজিকে নতুন পথ খুঁজতে হয়েছিল। তিনি রাশিয়ার সাহায্য নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ১৮ আগস্ট, ১৯৪৫ তারিখে নেতাজি বিমানে মাঞ্চুরিয়া যাচ্ছিলেন। এই সফরে তিনি নিখোঁজ হন। এই দিনের পর তাকে আর কারো দেখা হয়নি। ২৩ আগস্ট ১৯৪৫ সালে, জাপানের ডোমেই সংবাদ সংস্থা বিশ্বকে জানায় যে ১৮ আগস্ট নেতাজির বিমান তাইওয়ানের ভূমিতে বিধ্বস্ত হয়েছিল এবং নেতাজি সেই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ার পরে হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কিন্তু আজও তার মৃত্যু নিয়ে অনেক সংশয় দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন- হর ঘর তিরঙ্গায় উড়ল ৩০০ মিটারের পতাকা, অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে বিশাল মানববন্ধন
আরও পড়ুন- জানকিনাথ ভবনে সুভাষ চন্দ্রের ছবিতে মাল্যদান ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন অমিত শাহের
আরও পড়ুন- গান্ধিজির ভারত ছাড়ো আন্দোলন কীভাবে হয়ে উঠেছিল ব্রিটিশরাজের কফিনের শেষ
আমাদের বীর মহাপুরুষরা তাদের জীবন উৎসর্গ করে দেশের ঐক্য ও অখণ্ডতা বজায় রেখেছিলেন, যার জন্য আগামী প্রজন্ম তাদের অবদান চিরদিন স্মরণ করবে। নেতাজির প্রজ্ঞা ও সাহসিকতা ইতিহাসে কেউ মেলাতে পারে না। তার মধ্যে সাহস ও বুদ্ধিমত্তা উভয়েরই সমন্বয় ছিল। অত্যন্ত বুদ্ধিমান মনের কারণেই তিনি এতটাই প্রভাবশালী ছিলেন যে ব্রিটিশরা তাকে দেখামাত্র নির্মূল করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে ইতিহাসের পাতায় জোড়পূর্বক তাঁর মৃত্যুদিন ঘোষণা করলেও প্রতিটি ভারতীয়র মনে আজও তিনি চির অমর।