অধ্যাপক সোমাইলা ওয়ার্সি বলেছেন ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংস্কার ও উদ্যোগে আরও বেশি করে সামিল হওয়া জরুরি। তাই তাদের পূর্ণতা দেবে।
ভারতীয় মুসলমানরা দেশের উন্নয়ন আর অগ্রগতির জন্য সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে একটি শক্তিশালী ভারত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এখানে রইল সাতটি উপায়, যা মুসলমানদের ভারতকে একটি শান্তিপুর্ণ ও সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে তুলে ধরতে প্রয়োজনীয়। এই দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশই মুসলিম। আসুন জেনেনি সাতটি উপায় কী কীঃ
১ শিক্ষা- শিক্ষাই ক্ষমতায়ন আর অগ্রগতির চাবিকাঠি। ভারতে বসবাসকারী মুসলিমদের একটি ভাল শিক্ষা লাভের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। বিশেষ করে বিজ্ঞান , প্রযুক্তি, প্রকৌশল, গণিত- এজাতীয় বিশগুলি নিয়ে পড়াশুনা করার জরুরি। ভারতীয় মুসলমানদের একটি ভাল শিক্ষা লাভের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত, বিশেষ করে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিতে (STEM)। এটি তাদের ব্যক্তিগতভাবে উপকৃত হবে এবং তারা দেশের প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে। মুসলিমদের সাক্ষরতার হার 68.5%, যা জাতীয় গড় থেকে অনেক কম। মাদ্রাসা শিক্ষাকে নিয়মিত শিক্ষার পরিপূরক করতে হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে উন্নত শিক্ষার ফলাফলের জন্য সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেক কার্যকলাপ হয়েছে।
২ উদ্যোক্তাঃ ভারতীয় মুসলমানদের উচিৎ উদ্যোক্তার সুযোগ খুঁজের বার করা । তাদের নতুন করে ব্যবসা বাণিজ্য শুরু করা। একটা সময় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকেই উঠে এসেছে দেশের একটি বড় অংশের উদ্যোগপতি। যার মধ্যে রয়েছেন আজিম প্রেমজি- উইপ্রোর চেয়ারম্যান, এম এ ইউসুফ আলি - লুলু গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ইউসুফ খাজা হামিদ - চেয়ারম্যান সিপ্লা। উদ্যোক্তারা বেকারত্বের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিষেধক হয়ে উঠতে পারেন।
৩. সম্প্রদায়ের উন্নয়নঃ ভারতীয় মুসলমানদের তাদের সম্প্রদায়ের উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে। তারা তাদের সম্প্রদায়ের উন্নতির জন্য সামাজিক কল্যাণ প্রকল্প , স্বাস্থ্য উদ্যোগ ও শিক্ষা কার্যক্রমে অবদান রাখতে পারে। সরকার ও এনজিও-র মধ্যে শূন্যতা পুরণে বিশ্বাসভিত্তিক সংগঠনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
৪. রাজনৈতিক অংশগ্রহণঃ ভারতীয় মুসলমানদের উচিৎ ভোট নিয়ে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা ও পাবলিক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা। এটি তাদের দেশের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ার একটি কণ্ঠস্বর হতে পারে। সমস্ত সম্প্রদায়ের উপকার করে এমন নীতি গঠন করতে সাহায্য করবে। তাদের অবশ্যই উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে সবকিছুর উর্ধ্বে রাখতে হবে। ভারতের রাষ্ট্রপতি ,ভারতের উপরাষ্ট্রপতি ভারতের প্রধানবিচারপতি, ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশন ও সবথেকে সংবেদনশীল গোয়েন্দা ব্যুরোর পরিচালকের মতে দোশের সর্বোচ্চ পদে থাকা সুলমানদের ভারত দেখেছে। ভারত সকল সম্প্রদায়ের জন্য সমান সুযোগের দেশ।
৫. আন্তঃধর্ম সম্প্রীতিঃ ভারতীয় মুসলমাদের উচিৎ আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি প্রচার করা ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে সেতুবন্ধন বোঝাপড়া ও সম্মান বৃদ্ধির জন্য সাংস্কৃতিক বিনিমস, সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠান ও সংলাপের আয়োজন করা। অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কে সম্প্রদায়ে মধ্যে অনেক ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে। ইসলাম সম্পর্কেও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যেও প্রচুর ভুল ধারনা রয়েছে। শুধুমাত্র সংলাপ ও অভিন্ন ভিত্ত অনুসন্ধানের মাধ্যমে এই ফল্ট লাইনগুলো দূর করা সম্ভব।
৬. দেশপ্রেমঃ ভারতীয় মুসলমানদের তাদের দেশ নিয়ে গর্ব করা উচিৎ। দেশের উন্নয়নে মুসলিমদের যে অবদান রয়েছে তা স্বচ্ছ ভারত অভিযান, ডিজিটাল ইন্ডিয়া , স্কিল ইন্ডিয়ার মধ্যে অনুষ্ঠানে তুলে ধরা জরুরির।ইসলাম একটি আন্তর্জাতিক ধর্ম এবং এতে দেশপ্রেমের কোনো সুযোগ নেই বলে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়। যাইহোক, জাভেদ আহমাদ ঘামিদির মত পণ্ডিতরা যুক্তি দিয়েছেন যে জাতীয়তাবাদ একটি ইতিবাচক শক্তি হতে পারে যদি মুসলমানদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা এবং তাদের কল্যাণের জন্য ব্যবহার করা হয়। তার বই মিজানে, ঘামিদি লিখেছেন যে "কুরআন এবং সুন্নাহ জাতীয়তাবাদকে নিষিদ্ধ করে না, তবে তারা অন্য ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আগ্রাসন ও নিপীড়নকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য জাতীয়তাবাদের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে।
৭. মুলসিম মহিলা ও প্রান্তিক মুসলুমঃ ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়কে বিভিন্ন সংস্কারের উদ্যোগ দ্রুত ট্র্যাক করতে হবে যা মুসলিম মহিলাদের তাদের এধিকার উপলব্ধি করতে ও পূর্ণ মানবিক সম্ভাবনার বিকাশে সাহায্য করতে পারে। এই ফ্রন্টে নতুন ধারনা গ্রহণ করার জ্নয অনেক প্রতিরোধ হয়েছে। মুসলিম নারী ও ট্রান্স - পিপল, পাসমান্ডা মুসলিম , শিয়া, আহমদী ও ইসলামের মধ্যে অন্যান্য বিভিন্ন চিন্তাধারাকে সাহায্য করা ও সম্মান করা দরকার। ভারতের সমন্বিত ঐতিহ্যহুলি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সম্প্রদায়ের অনুভূতি সম্পর্কে।
ডঃ শোমাইলা ওয়ার্সি, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের মহারাজ অগ্রসেন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপনা করেন।
এই নিবন্ধটি মূলত AwazTheVoice-এ প্রকাশিত হয়েছিল।
আরও পড়ুনঃ
কিম জং-এর 'সিনেমা' ফতোয়া, হলিউড মুভি দেখলে শিশুদের পাঁচ বছরের জেল- শাস্তির অভিভাবকদেরও