বিজেপি-র ক্রাইসিস ম্যানেজার বলা হত তাঁকে। কিন্তু সবাইকে নিয়ে চলতে পারার জন্যই বিরোধীদেরও আস্থা অর্জন করে নিতে পারতনে অরুণ জেটলি। অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে থাকার সময় যখনই কোনও নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার আগেও সব রাজ্যের মতামত নিয়েছেন অরুণ জেটলি। সেই কারণেই দ্বিতীয় মোদী সরকার থেকে যখন তিনি নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন, দিল্লির নর্থ ব্লকের অর্থমন্ত্রকের ভিতরেও কোথাও যেন একটা হতাশা বিরাজমান ছিল।
মন্ত্রিসভায় জেটলির গুরুত্ব কতটা, তা হয়তো সবথেকে ভাল জানতেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই। সম্ভবত সেই কারণেই জেটলি যখন চিঠি লিখে দ্বিতীয় মোদী সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন, তখন তাঁকে বাড়িতে ডেকে পাঠিয়ে কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। শোনা যায়, জেটলিকে দফতরবিহীন মন্ত্রী হওয়ার জন্যও অনুরোধ করেছিলেন মোদী। কিন্তু ভগ্ন স্বাস্থ্যের কারণে, সেই প্রস্তাবেও রাজি হননি প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী।
প্রথম মোদী সরকারের আমলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সবথেকে বড় দুই সিদ্ধান্ত ছিল নোটবাতিল এবং জিএসটি চালু করা। জেটলির দুই পূর্বসূরী প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং পি চিদম্বরম ইউপিএ আমলে অনেক চেষ্টা করেও জিএসটি ব্যবস্থা চালু করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। অরুণ জেটলি কিন্তু সব রাজ্যের সঙ্গে কথা বলে শেষ পর্যন্ত জিএসটি চালু করেছিলেন। জিএসটি কাউন্সিলের মোট ৩২টি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অরুণ জেটলি। প্রতিটি বৈঠকেই ধৈর্য ধরে সবপক্ষের কথা শুনে সিদ্ধান্ত নিতেন তিনি।
এমন কী কংগ্রেস নেতারাও স্বীকার করতেন, সব প্রশ্নের উত্তরেই এমন অকাট্য যুক্তি তুলে ধরতেন অরুণ জেটলি, যা সহজে খণ্ডন করা যেত না।
আরও পড়ুন- প্রয়াত অরুণ জেটলি, শোকস্তব্ধ রাজনৈতিক মহল
শুধু অর্থনীতি সংক্রান্ত বিষয়ই নয়, অন্যান্য বিভিন্ন ইস্যুতে যখনই মোদী সরকার বিপদে পড়েছে, এগিয়ে এসেছেন অরুণ জেটলি। বলা হয়, তার জন্যই সংসদে আধার বিল পাশ করিয়ে পরে সুপ্রিম কোর্টেও তার স্বপক্ষে রায় পেয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। রাফাল দুর্নীতি কাণ্ডেও বার বার বিভিন্ন মঞ্চে দলের হয়ে সফলভাবে সওয়াল করেছেন জেটলি। বিরোধীদের আক্রমণের মুখে পাল্টা যুক্তি দিয়ে বার বার মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ খণ্ডন করেছেন তিনি।
জেটলির উপস্থিতি ছাড়া নোটবন্দি এবং জিএসটি চালু করার মতো দুই কঠিন সিদ্ধান্তের সফল রূপায়ণ সম্ভব ছিল না, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ছাড়াও কালো টাকা বাজেয়াপ্ত আইন বেনামি লেনদেন সংশোধনী আইন, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের সংযুক্তিকরণ, আর্থিক নীতি প্রণয়ন কমিটির মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল অরুণ জেটলি অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন। যার মাধ্যমে মোদী সরকার বার্তা দিতে পেরেছিল, দুর্নীতির সঙ্গে কোনওরকম আপস করবে না তারা। যার সুফল পরবর্তী সময়ে ভোট বাক্সে পেয়েছে বিজেপি।
স্বাভাবিক ভাবেই এমন বিশ্বস্ত সৈনিককে হাতছাড়া করতে চাননি নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু শরীর সঙ্গ না দেওয়ায় নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন জেটলি। তবে দলকে আশ্বস্ত করেছিলেন, সরকারে না থাকলেও বিপদে পড়লে সবরকম সাহায্যে তৈরি তিনি।