নরেন্দ্র মোদীর পক্ষ সওয়াল করে বিবিসির বিরোধিতায় চিঠি লিখলেন শতাধিত বিদগ্ধজন। তাঁরা তুলে ধরেন মোদীর জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের কথা।
India: The Modi Question (ইন্ডিয়া: দ্যা মোদী কোয়েশ্চেন) বিবিসি-র তৈরি এই তথ্যচিত্র নিয়ে এখনও বিতর্ক অব্যাহত। এই অবস্থায় বিবিসি-র বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে চিঠি লিখলেন দেশের বিদগ্ধ মানুষরা। তারা বিবিসির তৈরি তথ্যচিত্রের তীব্র সমালোচনা করেছেন। এই চিঠিতে ৩০২ জন বিশিষ্ট মানুষ স্বাক্ষর করেছেন। যার মধ্যে রয়েছেন ১৩ প্রাক্তন বিচারক, ৩৩ জন প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত, ১৫৬ জন সেনা বাহিনীর প্রাক্তন আফিসার। বেশ কয়েকজন প্রাক্তন আমলাও রয়েছেন এই তালিকায়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, India: The Modi Question (ইন্ডিয়া: দ্যা মোদী কোয়েশ্চেন) এই তথ্যচিত্র মুসলিম সংখ্যালঘু আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি একটি বিতর্কিত নীতির সিরিজ। যথেষ্ট উত্তেজনাপূর্ণ এই দেশের প্রেক্ষাপটে। ব্রিটিশ আমলেই হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে ডিভাইড অ্যান্ড রুল নীতির ওপর আস্থা রাখা হয়েছিল। বিচারক ও জুরি উভয়ই হিন্দু-মুসলিম উত্তেজনা পুনরুজ্জীবিত করার জন্য যা অপ্রতিরোধ্য ছিল। চিঠিতে বলা হয়েছে,শুধু বিবিসির সিরিজ নয় গোটা বিষয়ের ওপর ভিত্তি করেই এই চিঠি লেখা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে বিবিসির তৈরি তথ্যচিত্র একমুখী রিপোর্টিং করা হয়েছে। রিপোর্টিং যথেষ্ট বিভ্রান্তিকর বলেও দাবি করা হয়েছে চিঠিতে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ভারত স্বাধীনতার পর ৭৫ বছর পার করেছে। গণতান্ত্রিক দেশ ও রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে। বর্তমানে ভারত আর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে নেই। ভারত নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী পদক্ষেপ করার সামর্থ্য রাখে।
চিঠিতে বলা হয়েছে গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে সিটের ৪২৫ পৃষ্ঠার রায়ে সুপ্রিম কোর্টের ক্লোজার রিপোর্ট বহাল রেখেছে। নিরপেক্ষ তদন্তের কারণে সুপ্রিম কোর্ট স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম তৈরি করেছিল। গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে সিট গভীরে তদন্ত করেছে। তারপরই তার রিপোর্ট পেশ করেছিল। সেখানেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ক্লিনচিট দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তথ্যচিত্রে সুপ্রিম কোর্টের রায়কেও খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। বিবিসির এজাতীয় একাধিক ত্রুটি তুলে ধরা হয়েছে। চিঠিতে ব্রিটিশ বিদেশ মন্ত্রকের ভূমিকারও তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। নয়াদিল্লিতে তাদের হাইকমিশনের একটি প্রতিবেদনের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠিতে নাগরিক সংশোধনী আইন নিয়ে ব্রিটিশ বিরোধিতার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে দেশের প্রতিটি নাগরিকের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সক্রিয় সম্পৃকক্ত হন। কোভিড মহামারির সময় বিশ্বের সর্ববৃহৎ খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি অর্থাৎ রেশন প্রকল্পের কথাও তুলে ধরা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৪০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ উপকৃত হয়েছে, যা মোট মার্কিন জনসংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি।
শুক্রবার বিবিসি-র এক মুখপাত্র একটি বিবৃতি জারি করে বলেছেন, তথ্যচিত্রটি সর্বোচ্চ সম্পাদকীয় মান অনুযায়ী কঠোরভাবে গবেষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারই ভারত সরকার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্র Cর তীব্র সমালোচনা করেছিল। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের দাবি ছিল এটি একটি প্রচারের অংশ। যা পক্ষপাতিত্বে ভরা।
বিবিসির তৈরি করা তথ্যচিত্রে দাবি করা হয়েছে। ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার বিষয় নিয়ে ভারতীয় নেতা নরেন্দ্র মোদী অবগত ছিলেন। বিবিসি দাবি করেছে, এই সিরিজটি তৈরির সময় তাদের কর্মীরা বিভিন্ন মানুষের কাছে পৌঁছেছিল। বিস্তৃতি তথ্য সংগ্রহ করেছিল। ঘটনার সাক্ষীতদের সঙ্গে কথা বলেছিল। পাশাপাশি তথ্যচিত্র তৈরির সময় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিল। বিবিসি আরও দাবি করেছেন তথ্যচিত্রে বিভিন্ন মন্তব্য আর বক্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই তথ্যচিত্রে বিজেপির নেতাকর্মীদেরও বয়ান রয়েছে। বিবিসির মুখপাত্র আরও জানিয়েছেন, এই বিষয়ে ভারত সরকারের কাছেও একাধিক বিষয় নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছিল।
আরও পড়ুনঃ
Netaji's birthday:নেতাজির সঙ্গে আরএসএস-এর আদর্শ খাপ খায় না, জন্মদিন পালন নিয়ে কড়া বার্তা মেয়ের
Modi documentary: তথ্যচিত্রের জন্য প্রচুর গবেষণা করা হয়েছিল, ভারত সরকারের সমালোচনার পরে বলল BBC
মোদীকে নিয়ে বিবিসি-র তথ্যচিত্র 'প্রোপাগন্ডা', এই ভাবেই প্রতিক্রিয়া দিল ক্ষুব্ধ ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক