বিহারের রাম নবমীতে দাঙ্গা- দাঙ্গাবাজদের সন্ধানে নেমে উঠে এল নতুন তথ্য

Published : Apr 08, 2023, 09:13 PM IST
bihar

সংক্ষিপ্ত

 দাঙ্গা কেন হয় কয়েক দশক ধরেই এর কারণ অনুসন্ধান করেছেন দেশের জ্ঞানীগুণি আর বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। সবথেকে জনপ্রিয় তত্ত্ব হল দাঙ্গার কারণ হল রাজনৈতিক ফয়দা তোলা। ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতির কারণেই দাঙ্গা হয়।

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ভারতে খুব একটা পুরনো নয়। এটি অতিপরিচত একটি ঘটনা। সম্প্রতি রাম নবমীতে বিহারের নালন্দা জেলার বিহার শরিফ দাঙ্গার সাক্ষী ছিল। এক জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা প্রচুর। কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে। তেমনই জানিয়েছে আওয়াজ দ্যা ভয়েসর একটি প্রতিবেদন।

দাঙ্গা কেন হয় কয়েক দশক ধরেই এর কারণ অনুসন্ধান করেছেন দেশের জ্ঞানীগুণি আর বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। সবথেকে জনপ্রিয় তত্ত্ব হল দাঙ্গার কারণ হল রাজনৈতিক ফয়দা তোলা। ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতির কারণেই দাঙ্গা হয়। এছড়াও আরও একটি কারণ- ভারত বিরোধী শক্তি দেশকে দুর্বল করার জন্য সাম্প্রদায়িক শত্রুতা বাড়াতে চায়- সেই কারণে তারাও দাঙ্গার বাতাবরণ তৈরি করতে পারে। হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন তৈরি করতেই এক্ষেত্রে দাঙ্গা লাগান হয়।

হিংসার জন্যই কি শুধু দাঙ্গা হয়? প্রকৃত হিংসা জনগণকে বিভক্ত করার প্রক্রিয়ার একটি অংশমাত্র। এতে অনেক সাংবাদিক ও সমাজকর্মীরা অনেক সময় জড়িয়ে থাকে। তারাই অশুভ ভূমিকা পালন করে। তারা এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করে যাতে সাম্প্রদায়িক শিকার ও অন্য সম্প্রদায়কে অপরাধী হিসেবে তুলে ধরা হয়।

ইদানিং এমনই মানুষদের নজরের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বিহার শরিফ। মাদ্রাসায় অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রন্থাগার পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তা নিয়ে নীরব থেকে অনেকেই গুলশন কুমার হত্যার কথা জোর দিয়ে বলেছে। অন্য সেটের লোকেরা একজন হিন্দু লোককে হত্যার বিষয়ে জোর দেয় কিন্তু মাদ্রাসা পোড়ানো নিয়ে নীরব থেকে যায়।

দিল্লি-ভিত্তিক কিছু 'সমাজকর্মী' বিহার শরীফে পৌঁছেছে এবং 'দাঙ্গার শিকার'দের সাহায্য করার জন্য তহবিল সংগ্রহের আহ্বান জানিয়েছে। কেউ এটাকে স্বাগত জানাবে যদি এই প্রচেষ্টা এবং উদ্যোগগুলি ঘৃণাকে পরাজিত করা বা প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে হয়। তারা সাম্প্রদায়িকভাবে বিভক্ত ভারতীয় সমাজের বর্ণনাকে শক্তিশালী করছে।

আসিফা মুজতবা , নতুন দিল্লির একজন সুপরিচিত সামাজিক কর্মী তার এনজিওর জন্য অনুদানের আবেদন করেছিলেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন-

মুসলমানদের কখবনই অর্থের মাধ্যমে বা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে ন্যায্য ক্ষতিপুরণ দেওয়া হয়নি। এমনকি রাষ্ট্র আমাদের পবিত্র স্থানের ক্ষতির ক্ষতিপুরণ দিতে ব্যার্থ হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, এই মুহূর্তে হারিয়ে যাওয়া জীবিকার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল সংগ্রহে সম্প্রদায়ের ভূমিকা ২টি ভিত্তিতে অপরিহার্য হয়ে ওঠে।

অনুদান সংগ্রহ ও তাদের জীবিকার পুনর্মিণের মাধ্যমে তারা পিছিয়ে থাকা সম্প্রদায় সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী বোধ করবে যারা তাগের ব্যাথা, ট্রমা ও তাদের ক্ষতিতে সমবেদনা জানিয়েছে। তাতে পরের বার যখন ঘৃণার পরিবেশ তৈরি হবে তখন তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত থাকবে।

এটা পরিষ্কার যে এই তহবিল মুসলমানদের দ্বারা , মুসলমানদের কাছ থেকে ও মুসলমাদরে জন্য সংগ্রহণ করা হবে। উদ্দেশ্য মুসলিমানদের মধ্য একটি সম্প্রদায়ের অনুভূমি জাগানো। এর মানে ভারতের অভ্যন্তরে সাম্প্রদায়গুলিকে বিচ্ছিন্নভাবে তাদের সমস্যা দেখাশোনা করা উচিৎ।

সাম্প্রদায়িকতাবাদীদের পরিজিত করতে আমাদের জনগণকে বলতে হবে যে ভারত সমস্ত ভারতীয়দের। দাঙ্গার শিকার হিন্দু- মুসলিম নয় দেশের নাগরিকরা। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে দাঙ্গাকারীদের শাস্তি হওয়া উচিৎ।

মীর ফয়সাল, দিল্লি-ভিত্তিক সাংবাদিক, আরও ভারসাম্যপূর্ণ পদ্ধতি গ্রহণ করেছিলেন এবং লোকদেরকে তহবিল না বাড়াতে বলেছিলেন। তিনি জনগণকে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকারকে অনুসরণ করতে বলেছেন। সর্বোপরি, দাঙ্গার শিকাররা এদেশের নাগরিক এবং জানমালের নিরাপত্তা সরকারের দায়িত্ব। মীর লিখেছেন,'অনেক লোক আমাকে টেক্সট করেছে বিহার শরীফ এবং মাদ্রাসার ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করার জন্য। প্রথম এবং সর্বাগ্রে, প্রতিবার আবেগী হওয়ার পরিবর্তে, আপনার কষ্টার্জিত অর্থ দেওয়ার পরিবর্তে। জনগণকে ক্ষতিপূরণ দিতে সরকারকে চাপ দিচ্ছেন না কেন?' তিনি আরও বলেছিলেন, 'এই মুহুর্তে আপনার আশেপাশের হতভাগ্যদের তাদের দান করে সমর্থন করা উচিত।'

বিভক্তিমূলক এজেন্ডা মুসলিমানদের একচেটিয়া নয়। কিছু সমাজকর্মী দাবি করেছেন যে হিন্দুরা মুসলমানদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। এই লোকেরা চায় যে হিন্দুরা বিশ্বাস করুক যে সমস্ত দাঙ্গাকারী মুসলমান ছিল। প্রত্যেক ভুক্তভোগী হিন্দু ছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় এক প্রভাবশালী স্পষ্টভাবে বলেছেন, যে বিহারের মুখ্যসচিব যেহেতু একজন মুসলিম তাই হিন্দুদের টার্গেট করা হয়েছে।

অন্য একজন বিশিষ্ট সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী বালা টুইট করে বলেছেন, ভারতের অমৃতকালের মধ্যে প্রবেশ করেছে , বিহার কিন্তু এখনও ১৯৪৭ সালে আটকে রয়েছে। যেখানে হিন্দুরা রক্তপিপাসু। শান্তিপ্রিয়দ। তারা মার খাওয়ার ভয় ছাড়া স্বাধীনভাবে নিজের ধর্ম পালন করতে পারে না।

এই ‘কর্মীরা’ ভারতীয় সমাজকে দুটি শিবিরে বিভক্ত করছে। আমাদের দাঙ্গা-পীড়িতদের সাহায্য করতে হবে, ‘মুসলিম’ বা ‘হিন্দু’ দাঙ্গার শিকারদের নয়। আমাদের দাঙ্গাবাজদের চিহ্নিত করতে হবে, ‘হিন্দু দাঙ্গাবাজ’ বা ‘মুসলিম দাঙ্গাবাজ’ নয়। গুলশানকে হত্যা করা হয়েছে, তার বিচার হওয়া উচিত। তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং খুনিদের শাস্তি দিতে হবে। হেরিটেজ মাদ্রাসা ও এর লাইব্রেরি ধ্বংস হয়ে গেছে। এটি মেরামত করতে হবে এবং যারা আগুন দিয়েছে তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।

আমরা সাম্প্রদায়িকতাকে পরাজিত করতে পারব না। য়থক্ষণ না আমরা দাঙ্গাবাজ ও ক্ষতিগ্রস্তদের ধর্মীয় লেন্স দিয়ে দেখা বন্ধ না করব। দাঙ্গাপ পেছনে যারা রয়েছে বা যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের হিন্দু বা মুসলিম হিসেবে চিহ্নিত না করে ভারতীয় হিসেবেই বিবেচনা করা জরুরি। কারণ দাঙ্গাবাজদের জিততে দেওয়া কখনই উচিৎ নয়। - এটা সমাজের পক্ষ ক্ষতিকর।

PREV
click me!

Recommended Stories

এনডিএ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে কেন সম্মান? শীতকালীন অধিবেশনের ৭ম দিনে কী হবে?
8th Pay Commission: অষ্টম বেতন কমিশনে বেতন বৃদ্ধি নিয়ে ঘনাচ্ছে রহস্য? কর্মচারী ও পেনশনভোগীরা খুঁজছে উত্তর