প্রতিবারের মতো এবারও প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে পদ্ম পুরস্কার প্রাপকদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এবারও বিশেষ সম্মান পাচ্ছেন এমন কয়েকজন বিশিষ ব্যক্তি যাঁরা সেভাবে প্রচারের আলোয় না এলেও, নীরবে সমাজের জন্য কাজ করে গিয়েছেন।
কিছুদিন আগেই ৮৭ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন বাঙালি চিকিৎসক এবং ওরআরএস-এর আবিষ্কর্তা দিলীপ মহলানবিস। তাঁকে মরণোত্তর পদ্মবিভূষণ সম্মান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্র।
১৯৯৯ সালে মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে আন্দামানের জারোয়া উপজাতির অস্তিত্ব যখন বিপন্ন হয়েছিল, তখন তাঁদের চিকিৎসা করে সুস্থ করে তোলেন সরকারি চিকিৎসক রতন চন্দ্র কর। এখন অবসরপ্রাপ্ত এই চিকিৎসক পদ্মশ্রী সম্মান পাচ্ছেন।
কাঁকের অঞ্চলে মাওবাদী সন্ত্রাসের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির পাশে দাঁড়িয়েছেন অজয় কুমার মাণ্ডবী। তিনি গোন্দ উপজাতির অন্তত ৪০০ যুবককে কাঠের শিল্পসামগ্রী তৈরি করা শিখিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তিনি এবার পদ্মশ্রী পেলেন।
তামিলনাড়ুর ইরুলা উপজাতির সর্প বিশেষজ্ঞ বাদিভেল গোপাল ও মাসি সাদিয়ান শুধু দেশের বিভিন্ন জায়গাতেই না, বিদেশেও সাপ ধরতে এবং অন্যদের সাপ ধরার কৌশল শেখাতে যান। তাঁরা পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে সাপ ধরা শিখেছেন। সেই শিক্ষা কাজে লাগিয়েই তাঁরা সহজেই বিষাক্ত সাপ ধরেন। এবার পদ্মশ্রী পাচ্ছেন তাঁরা।
গুজরাটের সিদ্দি উপজাতির মানুষের জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছেন সমাজকর্মী হীরাবাই লোবি। শিশুদের শিক্ষা, মহিলাদের কর্মসংস্থান-সহ নানা কাজ করছেন হীরাবাই। এই কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পদ্মশ্রী পাচ্ছেন তিনি।
৫০ বছর ধরে গরিবদের চিকিৎসা করে চলেছেন জব্বলপুরের চিকিৎসক মুনীশবর চান্দের দাওয়ার। ২০১০ পর্যন্ত তিনি ২ টাকা ফি নিতেন, তারপর ফি বাড়িয়ে করেছেন ২০ টাকা। এবার পদ্মশ্রী পেলেন এই চিকিৎসক।
নাগাল্যান্ডের দিমা হাসাও অঞ্চলের বাসিন্দা রামকুইওয়াংবে নিউমি সারাজীবন ধরে হেরাকা ধর্ম সংরক্ষণের জন্য কাজ করে গিয়েছেন। শিক্ষা, সংস্কৃতির প্রচারের জন্য কাজ করে চলেছেন তিনি। এরই স্বীকৃতি হিসেবে পদ্মশ্রী পেলেন তিনি।
'কান্নুরের গান্ধী' হিসেবে পরিচিত স্বাধীনতা সংগ্রামী ভি পি আপ্পুকাট্টান পোডুভালকে এবার পদ্মশ্রী সম্মান দেওয়া হল। ১৯৪২ সালে 'ভারত ছাড়ো' আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। ৮ দশক ধরে সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের জন্য কাজ করে চলেছেন তিনি।
এয়ার ইন্ডিয়া কনিষ্কয় বোমা হামলায় স্ত্রী ও ২ সন্তানকে হারান। সেই শোক ভুলতে সমাজসেবা শুরু করেন অন্ধ্রপ্রদেশের কাকিনাডা অঞ্চলের বাসিন্দা শঙ্কুরাত্রি চন্দ্রশেখর। গরিবদের বিনামূল্যে চিকিৎসা ও শিক্ষার ব্যবস্থা করে আসছেন তিনি। এবার পদ্মশ্রী পাচ্ছেন তিনি।
প্রায় ১০০ বছর বয়সি কৃষক তুলা রাম উপরেতি দীর্ঘদিন ধরে জৈব চাষ করে আসছেন। তিনি অন্য কৃষকদেরও জৈব চাষে উৎসাহ দেন। এই প্রবীণ কৃষক এবার পদ্মশ্রী পেলেন।
রাসায়নিক ব্যবহার না করে একই জমিতে ৯টি ফসল ফলানোর পদ্ধতি বের করেছেন। জমি যেমন উর্বর হয়েছে তেমনই জলের খরচ কমেছে ৫০ শতাংশ। এবার পদ্মশ্রী পেলেন মান্ডির কৃষক নেকরাম শর্মা।
৪ দশক ধরে হো ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার জন্য কাজ করে চলেছেন জানুম সিং সয়। তিনি ৬টি বইও লিখছেন। তিনি এবার পদ্মশ্রী সম্মান পেলেন।
টোটো ভাষা সংরক্ষণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছেন জলপাইগুড়ির টোটোপাড়ার বাসিন্দা ধনীরাম টোটো। এই অবদানের জন্য তিনি এবার পদ্মশ্রী পাচ্ছেন।
কুভি, মান্দা, কুইয়ের মতো উপজাতি ও দক্ষিণ ভারতীয় ভাষা সংরক্ষণে বিশেষ অবদানের জন্য এবার পদ্মশ্রী পাচ্ছেন তেলঙ্গানার ৮০ বছর বয়সি ভাষাতত্বের অধ্যাপক বি রামকৃষ্ণ রেড্ডি।
নৃত্যের মাধ্যমে কোডাভা সংস্কৃতি সংরক্ষণে বিশেষ অবদানের জন্য পদ্মশ্রী পেলেন কর্ণাটকের নৃত্যশিল্পী রানি মাচাইয়া। তিনি দীর্ঘদিন ধরে নৃত্যের সঙ্গে যুক্ত। অসংখ্য তরুণীকে নাচ শিখিয়ে চলেছেন তিনি।
৩ দশকেরও বেশি সময় ধরে সঙ্গীতের মাধ্যমে মিজো সংস্কৃতি সংরক্ষণের জন্য কাজ করে চলেছেন। এবার তারই স্বীকৃতি হিসেবে পদ্মশ্রী পেলেন আইজলের বিখ্যাত শিল্পী কে সি রানরেমসাঙ্গি।
দীর্ঘদিন ধরে খাসি লোকসঙ্গীতের প্রচার ও সংরক্ষণের জন্য কাজ করে চলেছেন মেঘালয়ের শিল্পী রিসিংবোর কুরকালাং। তিনি দুইতারা বাদ্যযন্ত্র তৈরি করেন। সঙ্গীত ও সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি পদ্মশ্রী পেলেন।
বয়স ১০২ বছর। এখনও সারিন্দা বাদ্যযন্ত্র বাজান। তিনিই পশ্চিমবঙ্গের প্রবীণতম শিল্পী। এবার পদ্মশ্রী পেলেন জলপাইগুড়ির মঙ্গলকান্তি রায়।
নাগা সঙ্গীতের প্রচারে বিশেষ অবদানের জন্য পদ্মশ্রী পেলেন বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী মোয়া সুবং। তিনি বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র সহজভাবে বাজানো এবং নাগা সঙ্গীতের সঙ্গে আধুনিক রক মিউজিকের সংমিশ্রণের জন্য কাজ করে চলেছেন।
থামাটে বাদ্যযন্ত্র বাদক এবং এই ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রের প্রসারে বিশেষ অবদানের জন্য এবার পদ্মশ্রী পেলেন কর্ণাটকের প্রবীণ শিল্পী মুনিভেঙ্কটাপ্পা।
৫ দশক ধরে ছত্তীশগড়ের নাট্য নাচকে বাঁচিয়ে রেখেছেন দোমর সিং কুনভর। তিনি দেশজুড়ে ১৩টি ভাষায় ৫,০০০-এরও বেশি নাটকের অনুষ্ঠান করেছেন। এবার পদ্মশ্রী পেলেন এই শিল্পী।
৫,০০০ নাটকে ৮০০-রও বেশি চরিত্রে অভিনয় করেছেন গড়চিরৌলির শিল্পী পরশুরাম কোমাজি খুনে। তিনি জড়িপট্টি রঙ্গভূমি ঘরানার নাটকে অভিনয় করেন। নাটকের মাধ্যমে সমাজ সচেতনতার কাজ চালিয়ে যান এই শিল্পী। এবার তিনি পদ্মশ্রী পেলেন।
জম্মু ও কাশ্মীরের প্রবীণ সন্তুর নির্মাতা গুলাম মহম্মদ রাজকে এবার পদ্মশ্রী সম্মান দেওয়া হল। তাঁর পরিবার ২০০ বছর ধরে সন্তুর বানিয়ে চলেছে।
চুনার সম্প্রদায়ের প্রবীণ কলমকারি শিল্পী ভানুভাই চিতারা ৭ দশক ধরে শিল্পকর্মের সঙ্গে যুক্ত। তিনি ৪০০ বছরের পুরনো শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। এই অবদানের জন্য এবার পদ্মশ্রী পেলেন তিনি।
১২ হাজার বছরের পুরনো পিথোরা শিল্পকর্মকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কাজ করে চলেছেন গুজরাটের প্রবীণ শিল্পী পরেশ রথওয়া। এই অবদানের জন্য এবার পদ্মশ্রী সম্মান পেলেন এই শিল্পী।
এবার পদ্মশ্রী সম্মান পেলেন নালন্দার প্রবীণ হ্যান্ডলুম শিল্পী কপিল দেব প্রসাদ। তিনি ৫ দশক ধরে বস্ত্রশিল্পের সঙ্গে যুক্ত। তিনি বিভিন্ন ধরনের শাড়ি তৈরি করে চলেছেন।