জনতা কারফিউতে-কি নিয়ন্ত্রণে আসবে করোনাভাইরাস, 'গলিয়াথ '-এর বিরুদ্ধে এতো এক ছটাক লড়াই

  • সুপারসনিক গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা
  • এই পরিস্থিতিতে অনেকেই অনেক পরামর্শ দিচ্ছেন
  • একসঙ্গে অনেককে জমায়েত হতে বারণ করা হচ্ছে 
  • কিন্তু এভাবে আদৌ কি করোনাভাইরাসকে রোখা সম্ভব

Asianet News Bangla | Published : Mar 21, 2020 1:01 PM IST / Updated: Mar 21 2020, 06:47 PM IST

তারক ভট্টাচার্য, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক---  প্রথমেই বলে রাখি যুগে যুগে বহু মহামারির সঙ্গে যুদ্ধে মানব সভ্যতার জয় হয়েছে। আর এবারও হবে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। যুদ্ধের ময়দানে স্ট্র্যাটেজিই ঠিক করে প্রাণের ঝুঁকি কতটা থাকবে আর কতটা থাকবে না। গোটা বিশ্ব এখন সেই স্ট্রাটেজি তৈরিতেই ব্যস্ত। রবিবারের ১৪ ঘণ্টার জনতা কার্ফু তেমনই এক স্ট্র্যাটেজি। যা আদতে সেলফ আইসোলেশন। প্রশ্ন হল কতটা কার্যকর হবে? যদি এককথায় উত্তর দিতে হয়, তাহলে বলতে হবে কার্যকর কিন্তু কোনওভাবেই যথেষ্ট নয়। বলতে গেলে তাতে যুদ্ধের ২০ শতাংশ জয় কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। কীভাবে? 

করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকুন- কীভাবে, জানুন

করোনাভাইরাসের রক্ত নিয়ে সাবধান- ব্লাড গ্রুপে কোন প্রভাব, জানুন

কী ভাবে আক্রমণ করোনার- শরীরের কোন অংশ হয় নিশানা, জানুন

হাত ধোবেন কিসে- স্যানিটাইজারের থেকে বেশি শক্তিশালী সাবান

করোনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে ভুয়ো তত্ত্ব, সতর্ক হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের, দেখে নিন

হোম কোয়ারেন্টাইে থাকাকালীন মেনে চলুন স্বনামধন্য পুষ্টিবিদ রুজুতা দিভেকর এই ডায়েট চার্ট

বিশ্বে বিভিন্ন গবেষণার রিপোর্ট অনুযায়ী কোভিড-১৯ ভাইরাস যে কোনও পৃষ্ঠে (সারফেসে) গড়ে ৭-৮ ঘণ্টা জীবীত থাকতে পারে। তার অর্থ হল ১৪ ঘণ্টার কার্ফুতে বেঞ্চে, চেয়ারে, রেলিংয়ে, গাছের পাতায়, ট্রেন বাসের সিটে, রাস্তাঘাটে যেখানে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব আছে তা কোনও মানবদেহকে বাহক হিসেবে না পেলে মারা পড়বে। নিঃসন্দেহে কার্যকরি পদক্ষেপ। কিন্তু এখানেই বলা হচ্ছে কার্যকরি হলেও মানুষ-ভাইরাস এই যুদ্ধে তা মোটের উপর ২০ শতাংশ জয়ও এনে দেবে না। কিন্তু কেন ?
এর উত্তর মিলবে মার্কিন স্বাস্থ্য সংস্থা সিডিসি-র (সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল) রিপোর্টে। সেখানে বলা হচ্ছে, আসলে এই করোনা ভাইরাস যতটা ছড়াচ্ছে জড় বস্তুর মাধ্যমে তার থেকে অনেক বেশি ছড়াচ্ছে সংক্রমিত মানব দেহের সংস্পর্শ থেকে সোজা ভাষায় মানব দেহ থেকে মানব দেহে। সিডিসি-র ভাষায় সেই ছড়ানোর গতি একটি সুপারসনিক মিসাইলের মতো। সিডিসি-র রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, এই রোগ ছড়ানোর সব থেকে বড় কারণ হল এসিম্পটোম্যাটিক পর্যায়। 

কী এই পর্যায়? 
এই পর্যায়ে সংক্রমিতের মধ্যে প্রথম ১৪দিন কোনওরকম উপসর্গ দেখা নাও দিতে পারে। সোজা ভাষায় বললে এই সময়ে এই ভাইরাস নিঃশব্দে শরীরে নিজের বাসা বাঁধার কাজ করে। তাই এই সময়ে একজন সংক্রমিত বুঝতেও পারেন না যে তিনি সংক্রমিত। আর সেটাই সব থেকে ভয়ানক। কারণ, উপসর্গ ছাড়া সংক্রমিত মানে এই নন যে তিনি অন্য কাউকে সংক্রমিত করতে পারবেন না। দেখা যাচ্ছে এই সময়েই তিনি সব থেকে বেশি মানুষকে সংক্রমিত করছেন। এই পর্যায়ে একজন সংক্রমিত ৫ দিনে ২.৫জনকে সংক্রমিত করছে। এবার প্রাথমিকভাবে যদি সংক্রমিতের সংখ্যা ১০০ হয় তাহলে শুধু তাঁরাই পাঁচদিনে ২৫০ জনকে সংক্রমিত করছে। আবার সেই ২৫০জন আরও করবে। আর যাঁদের সংক্রমিত করছে তাঁদের আবার উপসর্গ দেখা যাচ্ছে ১৪দিন পর। আর সেই হিসেব অনুযায়ী আচমকা রোগীর সংখ্যার যেন বিস্ফোরণ ঘটছে। এক দুই একশ করতে করতে আচমকা সংখ্যাটা হাজারে চলে যাচ্ছে। যা প্রথম বিশ্বের দেশগুলিকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। বাধ্য হয়েই বিশ্বের প্রায় সব দেশ এখন টানা লকডাউনের পথে হাঁটছে। আর এই মুহূর্তে বিশেষজ্ঞরা বলছেন সেটাই একমাত্র পথ। কারণ টানা লকডাউনে এসিম্পটোম্যাটিক পর্যায়ে থাকা মানুষদের থেকে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা তাতে অনেকটাই কমে যাবে। এবং চিকিৎসা ব্যাবস্থার উপর চাপও কিছুটা কম থাকবে। সেক্ষেত্রে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে। ভারতের মতো দেশে যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে অন্য কোনও পথ খুঁজতে হবে। সেক্ষেত্রে নিত্যপ্রয়োজনীয় নূন্যতম খাবারের দোকানকেও জরুরি পরিষেবার আওতায় নিয়ে এসে বাকি সব বন্ধ করাটা বাঞ্ছনীয়। মোদ্দাকথা লকডাউন জরুরি।  

আর বলাই বাহুল্য আমাদের বেশিরভাগ মানুষ ভাবছেন তাঁর উপসর্গ নেই মানেই সে নিরাপদ এবং নিজের দৈনন্দিন জীবনে একেবারে গাছাড়া। আমাকেও ছুঁতেও পারবে না এমন একটা ভাব। ফুচকা, চাউমিন, রোল, আড্ডা সবই দেখছি চলছে। কেউ কেউ আবার এরমধ্যেও বাঙালির আদিমতম অভ্যাসকে অনুসরণ করে অদ্ভূত রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন। রাজনীতি, হিন্দু-মুসলমান করার অনেক সময় পাবেন। আগে নিজেতো বাঁচুন। আর যাঁরা অর্থনীতির কী হবে এই বলে বুক চাপড়াচ্ছেন তাঁদেরও বলছি আপনি কী ভাবেন এইভাবে চাপা আতঙ্ক নিয়ে কাজ চালিয়ে গেলেও কি অর্থনীতি বাঁচবে? 

ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্স এই গাছাড়া মনোভাবের জন্য আজ উজাড় হয়ে যাচ্ছে। থার্ড স্টেজে যাওয়ার আগে লাগাম ধরুন। মাথায় রাখবেন প্রথম বিশ্বের দেশগুলির সঙ্গে কিলোমিটার প্রতি জনঘনত্বের বিচারে ভারত ধোরাছোঁয়ার বাইরে। এবার ভাবুন দেশে এই সংক্রমণ দাবানলের মতো ছড়ালে কী হতে পারে?  

তারক ভট্টাচার্য, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, গত কয়েক বছর ধরে এক বহুজাতিক মার্কিন সংস্থায় অ্যানালিস্ট হিসেবে নিযুক্ত। এছাড়া এর আগে প্রায় দশ বছর মূল ধারার সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

Share this article
click me!