যোশীমঠের দুটি বড় হোটেল ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বুধবার থেকেই শুরু হবে ভাঙার কাজ। বিশেষজ্ঞদের নির্দেশেই তৈরি হয়েছে পরিকল্পনা।
প্রাচীন বিশ্বাস অনুযায়ী যোশীমঠ ছিল ভগবার শিবের অত্যান্ত প্রিয় স্থান। তিনি এখানেই নাকি পরম ব্রহ্মকে পেয়েছিলেন। এই স্থান ভগবান নারায়ণেরও প্রিয় ছিল। শিব-পার্বতীর কাছে নৃত্য পরিবেশন করে তাদের খুশি করে বিষ্ণুএই স্থানটি উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন। হিন্দুদের সেই পবিত্র স্থান আজ বিপন্ন। এটি বদ্রীনাথ ধামে যাওয়ার প্রবেশদ্বার। ডুবন্ত যোশীমঠএকের পর এক বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। যোশীমঠকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা হিসেবে বিপদ প্রবণ বাড়িগুলি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হবে বুধবার থেকে। ইতিমধ্যেই সেন্ট্রাল বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (CBRI)পরিদর্শনের কাজ শেষ করেছে। CBRI -এর বিজ্ঞানী সিপি কানুনগোর মতে বাড়িগুলি একটি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধ্বংস করা হবে। বুধবার রাত থেকেই শুরু হবে ভাঙার কাজ।
ভাঙার তালিকায় রয়েছে দুটি হোটেল- মাউন্ট ভিউ আর মাল্লারি ইন। দুটিতেই বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। একই দুটি বিল্ডিংই পিছনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। যে কোনও সময় ভেঙে যেতে পারে। আর সেই কারণে দুটি বিল্ডিং-এর আসপাশের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, ট্রাফিক পুলিশও থাকবে ভাঙার সময়। তারা যানচলাচল নিয়ন্ত্রণ করবে। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও থাকবে ঘটনাস্থলে।
চামোলির জেলা শাসক জানিয়েছেন, দুটি হোটেলের আশপাশের অনিরাপদ অঞ্চল ও বাফারজোনের অধীনে চিহ্নিত বিল্ডিংগুলি খালি করার কাজ শুরু হয়েছে। তবে শেষ সিদ্ধান্ত নেবে রুরকি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদল। তারাই সমস্তকিছু খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেবে। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যসচিব এসএস স্যান্ড জানিয়েছেন, বিজ্ঞানীদের তত্ত্বাবধানে অনিরাপদ স্থাপনাগুলি ভেঙে ফেলার আদেশ তারাই জারি করেছেন যারা অভিযানটির দায়িত্বে রয়েছে।
যোশীমঠ স্পষ্টতই একটি বড় বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে, কারণ আরও বেশ কিছু বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। প্রবল এই ঠান্ডায় সাধারণ মানুষদের বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসতে হয়েছে। ইতিমধ্যেই অনেকেই সরকারি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। অন্যদিকে যোশীমঠের পাশাপাশি কর্ণপ্রয়াগেই সমস্যা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় পুরসভার বহুগুণা নগরের কিছু বাড়িতে ইতিমধ্যেই ফাটল দেখা দিয়েছে। চামোলিতে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর তরফ থেকে জানান হয়েছে, এখনও পর্যন্ত ৬৭৮টি বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। ২৭টি পরিবারকে সরানো হয়েছে। ৮২টি পরিবার শহরের নিরাপদ স্থানে রয়েছে। এর আগে ফাটলযুক্ত বাড়ির সংখ্যা ছিল ৬০০।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছেন ইতিমধ্যেই যোশীমঠের ২০০টি বাড়িতে টাকা চিহ্ন দেওয়া হয়েছিল। কারণ এই বাড়িগুলি যে কোনও সময়ই ভেঙে যেতে পারে। সংশ্লিষ্টবাড়িগুলি বাসের অযোগ্য বলেও জানিয়েছেন তিনি। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে আগামী ৬ মাসের জন্য প্রতিটি ঘরছাড়া পরিবারকে ৪ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে।
উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলার ৬ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত বদ্রীনাথ ও হেমকুণ্ড সাহিব যাওরা পথেই পড়ে যোশীমঠ। এই শহর উচ্চ - ঝুঁকিপূর্ণ 'Zone-V' পড়ে। সিসমিক হ্যাজার্ড জোন নামেও এটি পরিচিত। কারণ এখানেই রয়েছে বিপদের স্তর। কারণ এটি ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা।
আরও পড়ুনঃ
যোশীমঠের মতই দার্জিলিং-এর আকাশে কালো মেঘ, প্রবল চাপে তলিয়ে যেতে শৈল শহরের
Joshimath Sinking: ভূগর্ভে ধীরে ধীরে তলিয়ে যাচ্ছে যোশীমঠ, জানুন কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা