গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সেনা কনভয়ে হামলা চালিয়েছিল জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গিরা। আত্মঘাতি বোমা হামলায় শহিদ হয়েছিলেন ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ান। এরপর বিরোধীরা বারবার গাফিলতির অভিযোগ তুললেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে সেই দাবি নস্যাত করা হয়। সাফ জানানো হয়েছিল কোনও গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল না। কিন্তু, ঘটনার তদন্তের পর সিআরপিএফ-এর পক্ষ থেকে যে রিপোর্ট তৈরি রা হয়েছে, তা কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দাবির সঙ্গে মিলছে না বলেই জানিয়েছে সিআরপিএফ-এর একটি সূত্র।
দেখে নেওয়া যাক সূত্রের দাবি অনুযায়ী পুলওয়ামার হামলা ঘটার পিছনে কী কী কারণ দেখানো হয়েছে -
সিআরপিএফ-এর তদন্ত রিপোর্ট বলছে, আইইডি বিস্ফোরণের আগাম সতর্কতা একটা জারি করেছিল গোয়েন্দা তথ্য। কিন্তু গাড়িুতে করে আত্মঘাতি বোমারু হামলা চালাবে সেই তথ্য জানাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। তাই বাহিনীও প্রয়োজনীয় সতর্কতা নিতে পারেনি।
এছাড়া এই হামলা সফল হওয়ার পিছনে সিআরপিএফ-এর তরফে বেশ কিছু গাফিলতির দিকেও আঙুল তোলা হয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম অতি দীর্ঘ সেনা কনভয় নিয়ে যাওয়াকের সিদ্ধান্ত। ঘটনার দিন ওই কনভয়ে মোট ৭৮টি যানবাহন ছিল। মোট ২৫৪৭ জন জওয়ান যাচ্ছিলেন। তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, এরফলে একদিকে দূর থেকেই সেনা কনভয়কে চিনে নেওযা সম্ভব হয়েছিল। অন্যদিকে তথ্য ফাঁস হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে গিয়েছিল।
একই সঙ্গে কনভয় চলাকালীন অসামরিক গাড়ি চলাচল করতে দেওয়াটাও বড় ভুল বলে জানানো হয়েছে। তা না হলে অনেক দূরেই আততায়ী গাড়িটিকে আটকে দেওয়া যেত।
তবে একটি নিয়ম মেনে চলার ফলে বহু প্রাণ রক্ষা পেয়েছে। সেনা কনভয়ের নিয়ম অনুসারে প্রতি চারটি গাড়ির পরই একটু ফাঁক থাকার কথা। ঘটনার দিন ওই বিশাল সংখ্যক গাড়ডির কনভয় থাকলেও সেই নিয়ম মানা হয়েছিল। তাই আত্মঘাতি হানায় একটি মাত্র বাসই ধ্বংস হয়েছে। নাহলে আরও বড় বিপর্যয় ঘটতে পারত।
তবে ঘটনার পর থেকে সবকিছুই নিয়ম মাফিকই চলেছে বলে জানানো হয়েছে সিআরপিএফ-এর তদন্ত রিপোর্টে।
আরও পড়ুন - শহিদদের ঘর থেকে আসছে মাটি, পুলওয়ামায় তৈরি হচ্ছে অভিনব স্মৃতিসৌধ
আরো পড়ুন - পুলওয়ামার কায়দায় হতে পারে নাশকতা, ৭ রাজ্যে জারি সর্বোচ্চ সতর্কতা
আরও পড়ুন - পুলওয়ামার ঘটনায় সাড়া দিয়েছে গোটা দেশ, শহিদদের জন্য অর্থ সাহায্য বেড়েছে প্রায় ১২ গুণ
আরও পড়ুন - পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ, বালাকোট হামলার পরেই তৈরি ছিল ভারত
এই ১৫ পাতার রিপোর্ট গত মে মাসেই সিআরপিএফ-এর ডিজি-র কাছে পেশ কার হয়েছে। ডিজি আরআর ভাটনগর অবশ্য এই কথা অস্বীকার করেছেন। তবে জানা গিয়েছে, রিপোর্টে ডিজি তাঁর পর্যবেক্ষণ য়ুক্ত করে তদন্তকারি আদালতে তা পেশও করেছেন। কিন্তু, কাশ্মীর উপত্যকার পরিবেশ ঠান্ডা না হওয়ার আগে চুড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে না।
এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছিল, 'সব সরকারি এজেন্সির মধ্যে সমন্বয় রয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যগুলি রিয়েল টাইমে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে শেয়ার করা হয়। পুলওয়ামা সন্ত্রাসবাদী হামলার ক্ষেত্রেও গোয়েন্দা বিভাগের বা বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের কোনও সমস্যা ছিল না। বিরোধীরা এই নিয়ে প্রশ্ন তুললে, সেনার পারদর্শিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে বলে ঘুরিয়ে তাদের দেশ বিরোধী তকমা এঁটে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। এখন সিআরপিএফ-এর তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ পেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কী বলে সেটাই দেখার।