ত্রিপুরার রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ নাম মানিক সরকার। ২০১৮ সালে তাঁর সরকার হেরে যাওয়ার পরেও ত্রিপুরার রাজনীতিতে তিনি ত্রিপুরার রাজনীতি যথেষ্ট সক্রিয়।
পাঁচ বছর আগে ক্ষমতা হারিয়েছেন। বিজেপির কাছে সিপিএম ধরায়াসী হওয়া ত্রিপুরার মসনদ হারাতে হয়েছিল মানিক সরকারকে। কিন্তু তারপরেও হারিয়ে যাননি। বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মাটি কামড়ে পড়েছিলেন। বিধানসভার ভিতরে ও বাইরে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে। তবে নতুনদের জায়গা করে দিতে ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন না বলেও ঘোষণা করেছেন তিনি। কিন্তু তারপরেও তিনি ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ মুখ।
সম্প্রতি মানিক সরকার ঘোষণা করেছেন তিনি মাঠ ছাড়েননি। লড়ে যাবেন। শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ের ময়দানে থাকবে। বৃহস্পতিবার নিজের এলাকায় ভোট দেন মানিক সরকার। পরনে ছিল অন্য দিনের মতই ধপধপে সাদা পায়জামা আর পাঞ্জাবি। গলায় ছিল ত্রিপুরার লোকলিশ্লীদের তৈরি লাল রঙের চাদর। গোটা নির্বাচনী প্রচারে তিনি তিনি ছিলেন সামনের সারিতে। এদিনও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই চার বারের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে যান। তবে ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনও কথা বলেননি তিনি।
ত্রিপুরার নির্বাচনী প্রচারে প্রায় গোটা রাজ্যেই মানিক সরকার ছিলেম সিপিআই(এম)এর প্রধান মুখ। রাজ্যের প্রায় সর্বত্রই ভোট প্রচারে সামিল হয়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদী ও আমিত শাহের বাম-আক্রমণের জবাবই তিনি দিয়েছেন। মোদীর অভিযোগ ধরে ধরে তিনি নিজের মতামত ব্যক্ত করেছেন। পাশাপাশি নিজের উত্তর দেওয়ার সময় মানিক সরকার বলেন নরেন্দ্র মোদীর মন্তব্য মিথ্যার ওপর ভিত্তি করেন।
৭৪ বছরের মানিক সরকার ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী পদে ছিলেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়েও ত্রিপুরার রাজনীতিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। বামেদের দাবি তাঁর আমলেই নিয়ন্ত্রণে এসেছিল ত্রিপুরার উপজাতি বিদ্রোহ। উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলির মধ্যে একমাত্র ত্রিপুরারেই সশস্ত্ব বাহিনীর বিশেষ অধিকার আইন বা আসফার প্রত্যাহার করা হয়েছিল মানিক সরকারের জমানায়। বামেদের দাবি রাজ্যের প্রভূত উন্নয়নের কারিগত মানিক সরকার। বি.কম-এ গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রির রয়েছে মানিক সরকারের। কলেজে পড়াকালীনই বাম ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে পরিচয়। মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি স্টুডেন্ট ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট হন।
১৯৮০ সালে ত্রিপুরা বিধানসভার সদস্য হন আগরতলা থেকে জয়ী হয়ে। তারপর ধাপে ধাপে উন্নতি। অবশেষে ১৯৮৯ সালে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী। ৪৯ বছর পলিট ব্যুরোর সদস্য হন মানিক সরকার। তাঁর স্ত্রী পাঞ্চালি ভট্টাচার্য, সেন্ট্রাল সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার বোর্ডের কর্মী ছিলেন। ২০১১ সালে অবসর গ্রহণ করেন। সাদামাটা জীবন যাপনের জন্য পরিচিত মানিক-পাঞ্চালি। মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ও তিনি নিজের পৈত্রিক ভিটেতে থাকতেন। যার খুবই ছোট। এখানও সেখানেই থাকেন। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি যা বেতন পেতেন সবই পার্টিফান্ডে দান করতেন। পরিবর্ত মাসে ১০ হাজার টাকা ভাতা হিসেবে গ্রহণ করতেন।
আরও পড়ুনঃ
এক লিটার ডিজেলের দাম ২৮০ টাকা, কেরসিন কিনতে মাথায় হাত পাক নাগরিকদের
ত্রিপুরাবাসীকে রেকর্ড ভোট দেওয়ার আহ্বান মোদীর, ক্ষমতায় ফেরার ব্যাপারে আশাবাদী মুখ্যমন্ত্রী