এরপরেও কি ওঁরা ফিরে আসবেন শহরে, লকডাউনের 'জ্বালাময়' দিনগুলি কাটানোর পর প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে

শহর ছাড়ছেন অভিবাসী শ্রমিকরা
খালি হয়ে যাচ্ছে মেট্রো শহরগুলি
কবে ফিরবেন ওঁরা
ওঁরা কি আর কোনও দিন ফিরবেন

Asianet News Bangla | Published : May 12, 2020 8:29 AM IST

শহর ছাড়তে মরিয়া ওঁরা। যেভাবেই হোক ফিরে যেতে চান গ্রামে। তাইতো জীবনে চরম সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে নিয়ে ফেলছেন একের পর এক ঝুঁকি। আর সেই ঝুঁকির সাক্ষী থাকছে দুধের শিশু।  কখনও ছত্তিশগড়। কখনও আবার মহারাষ্ট্র। সর্বত্র ছবিটা একই। লকডাউনের এই ৪০ দিনে মাইলের পর মাইল হাঁটতে দেখা গেছে গর্ভাবতী মহিলাকে। বুড়ি মাকে পিঠে চড়িয়ে শহর ছেড়েছেন ছেলে। রাজপথে আজ শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার মিছিল।  তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে,  চরম সংকটময় এই সময় যে শহর ওঁদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ওঁরা আবার ফিরবেন শহরে। ইতিমধ্যেই উত্তর প্রদেশের বিহারের শ্রমিকরা জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা আর ফিরবেন না শহরে। যেভাবেই হোক কষ্ট করে থেকে যাবেন গ্রামে। সেখানে থেকেই কোনও রকমে জোগাড় করে নেবেন আধপেটা খাবার। 

একটি বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষা জানাচ্ছে, ১০ মধ্যে ৮ শ্রমিকই লকডাউনের সময়কালে কোনও বেতন পাননি। অথচ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন লকডাউন পর্বে কোনও বেতন কাটা হবে না। দিন মজুরদের টাকাও মিটিয়ে দিতে হবে। ২৯ মার্চ এই মর্মে একটি বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কিন্তু তারপরেও দেখা যাচ্ছে ২৫ মার্চ লকডাউন হওয়ায় মার্চ মাসের মাইনেও দেওয়া হয়নি অনেক শ্রমিককে। আর প্রায় এক মাস কোনও রোজগার না থাকায় সঞ্চায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। যেখানে থাকেন সেখানের রেশন কার্ড না থাকায় সরকারি খাবার বা সাহায্য পৌঁছায়নি অধিকাংশ শ্রমিকের কাছে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা সরকারের দেওয়া রান্না করা  খাবারের ওপরই ভরসা করে দিন কেটেছে। কিন্তু বর্তমানে সেই উদ্যোগেও কিছুটা ভাঁটা পড়েছে। চেয়েচিন্তা দিন কাটাতে নারাজ দেশের অভিবাসী শ্রমিকরা। নূন্যতম আত্মসম্মান নিয়ে  তাঁরা বাড়ি ফিরতে মরিয়া। 

আরও পড়ুনঃ আরোগ্য সেতু নিয়ে অভয় দিল মোদী সরকার,মাত্র ১৮০ দিনই তথ্য মজুত থাকবে বলেও জানাল ...

আরও পড়ুনঃ ট্রেন ছাড়ার ৯০ মিনিট আগে আসতে হবে, প্যারেঞ্জার ট্রেনের যাত্রীদের জন্য আরও একগুচ্ছ নিয়ম ...

আবার পড়ুনঃ আবারও অভিবাসী শ্রমিকের রক্তে লাল হল রাজপথ, বাড়ি যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় হত ২ ...

গত পয়লা মে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন চালু হয়েছে। তারপরেও রাজপথে হাঁটতে দেখা গেছে অভিবাসীদের। কিন্তু কেন? অভিবাসীদের জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁরা সরাসরি বলেছেন প্রক্রিয়া বড়ই জটিল। হাতে পয়সা নেই তাই পায়ে হেঁটেই বাড়ি যাওয়ার ওপরই ভরসা রাখছেন তাঁরা। মুম্বইয়ের এক অভিবাসী শ্রমিকের কথায় শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে ওঠার জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। করোনাভাইরাসের কোনও লক্ষণ নেই তাও লিখে আসতে হবে চিকিৎসক অথবা হাসপাতাল থেকে। কিন্তু তারজন্য যে টাকা চাওয়া হচ্ছে তা তাদের কাছে নেই। উল্টে অনেক শ্রমিকেরই দাবি মোবাইল ফোনে টাকা ভরার মত পয়সাও তাঁদের কাছে নেই। তাই অনেকই আবার শেষ সম্বলটুকু খরচ করে সাইকেল কিনেই গ্রামে ফিরতে মরিয়া। মালিক-শ্রমিকের সম্পর্ক কোনও দিনই মধুর নয়। কিন্তু দেশের অভিবাসী শ্রমিকরা নূন্যতম সাহায্য দেশের কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্যসরকারগুলির কাছ থেকে পাননি বলেই অভিযোগ করেছেন। 

উঠে আসতেই পারে কর্নাটকের কথা। লকডাউন চলাকালীন এই রাজ্যে একাধিকবার অভিবাসী শ্রমিকরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। বাড়ি ফেরার দাবিতে সরব হয়েছেন। কিন্তু পরিস্থিতি তেমন স্বাভাবিক হয়নি। উল্টে অনেক শ্রমিক আবার নিজের গ্যাটের কড়ি খরচ করে বাস ভাড়া করেই বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলেন। শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন চালু হওয়ার পর আশার আলো দেখেছিলেন। প্রথম ট্রেনে অনেক অভিবাসী বাড়িও ফিরে গিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরই বাধ সাধে ইয়েদুরাপ্পা সরকার। কারণ স্থানীয় নির্মান সংস্থাগুলিতে কাজ শুরু করতে উদ্যোগ নিয়েছিল। এই সময় যদি অভিবাসী শ্রমিকদের না পাওয়া যায় তাহলে সমস্যা হবে বলেই সংস্থাগুলির পক্ষ থেকে জানান হয়েছিল। তাই ইয়েদুরাপ্পা সরকার শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন বাতিল করার আবেদন জানিয়েছিলেন। 

দেশের রাজধানী দিল্লিতে খোলা করোনা সংকটের সময়ই খওলা আকাশের নিচে পরপর দুই রাত কাটিয়েছেন ওঁরা। এখানেই শেষ নয়। লকডাউন ঘোষণার পর থেকেই দিল্লিতে চরম হেনস্থা হতে হয়েছে অভিবাসীদের। ভাড়া বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া, জল আর বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার মত ঘটনাও ঘটেছে। আর উত্তর প্রদেশেতো অভিবাসীদের কিটনাষক স্প্রে করে স্নানও করিয়েছে প্রশাসন। এমন অনেক কোয়ারেন্টাইন সেন্টারের সন্ধান পাওয়া গেছে যেখানে অভিবাসী শ্রমিকদের দুবেলা ঠিকমত খেতেও দেওয়া হয়নি। দেশের বাণিজ্যনগরীতেও দিনের পর দিন চরম হেনস্থা হতে হয়েছে অভিবাসীদের। বাধ্য হয়েও রাস্তায় নেমেছেন ওঁরা। 

এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার অভিবাসী শ্রমিকদের দায়ে একে অপরের দিকে ঠেলেছে। মাঝখান থেকে প্রবলতর সমস্যায় পড়ছেন দেশের নির্মাতার। অতিমারীর এই চরম সংকটতম সময়ে প্রায় সব হারিয়ে নিঃস্ব এদেশের অভিবাসী শ্রমিকরা। এতসব কিছুর পরেও হয়তো পেটের টানে আবারও ওঁদের আসতে হবে শহরে। কিন্তু এই আন্তরিকতা কি থাকবে? তার উত্তর দেবে সময়। 
 

Share this article
click me!