মন্দির চত্বরের নিরাপত্তা তিন ভাগে বিভক্ত। রেড জোন মন্দির কমপ্লেক্সের ভিতরের অংশ অন্তর্ভুক্ত করে। মন্দির চত্বরে যাওয়ার আশেপাশের সমস্ত রাস্তা ইয়েলো জোনের অন্তর্ভুক্ত।
উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় ৭০ একর জমিতে তৈরি হওয়া রাম মন্দির কমপ্লেক্সের নিরাপত্তা দুর্ভেদ্য করা হচ্ছে। জঙ্গি হামলার হুমকি আসছে। মন্দির চত্বরকে 'নো-ফ্লাইং জোন' হিসেবে ঘোষণা করার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এর পর এখান দিয়ে ড্রোন, বিমান বা হেলিকপ্টার কেউ যেতে পারবে না। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো নেপাল সীমান্ত দিয়ে মন্দিরে হামলার পরিকল্পনা করছে বলে এমন সতর্কবার্তা পাওয়া যাচ্ছে। এবার ফিদায়িন হামলার নতুন হুমকি। 'পুলিশ-সেনা'র ইউনিফর্মে মন্দিরে ঢুকে হামলা হতে পারে। এ ধরনের হামলায় জঙ্গিরা প্রথমে বিস্ফোরণ ঘটায় এবং পরে গুলিবর্ষণ হয়। এ ধরনের সম্ভাব্য হামলার পরিপ্রেক্ষিতে মন্দির চত্বরের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হচ্ছে। মন্দিরের নিরাপত্তায় যেভাবে সিআরপিএফ, স্থানীয় পুলিশ এবং পিএসি মোতায়েন করা হয়েছে, ঠিক সেভাবেই গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য আলাদা সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন মন্দিরের নিরাপত্তা কর্ডন হয়েছে ৬ স্তরের। IB, LIU 'Intelligence Liaison Unit' এবং CRPF এর ইন্টেলিজেন্স উইংকে সঠিক গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য বিশেষ কাজ দেওয়া হয়েছে।
মন্দিরের নিরাপত্তা তিনটি জোনে করা হচ্ছে
মন্দির চত্বরের নিরাপত্তা তিন ভাগে বিভক্ত। রেড জোন মন্দির কমপ্লেক্সের ভিতরের অংশ অন্তর্ভুক্ত করে। মন্দির চত্বরে যাওয়ার আশেপাশের সমস্ত রাস্তা ইয়েলো জোনের অন্তর্ভুক্ত। গ্রিন জোনের পরিধি এর থেকে কিছুটা বেশি। ইউপি পুলিশ, পিএসি এবং সিআরপিএফের একটি ব্যাটালিয়ন মন্দির চত্বর ২৪ ঘন্টা পাহারা দেয়। এই বাহিনী সব ধরনের আক্রমণের জবাব দিতে সুসজ্জিত। কোনো জঙ্গি হামলা হলে বা কোনো ব্যক্তি/গোষ্ঠী বিস্ফোরণের মাধ্যমে মন্দিরের ক্ষতি করার চেষ্টা করলে আগেই তা ধ্বংস করা হয়। যে ইনপুটগুলি পাওয়া গেছে তাতে মন্দির চত্বরে ক্ষতি করার জন্য আশেপাশে দাঙ্গা সংগঠিত হতে পারে। বোমা নিক্ষেপ ও সশস্ত্র হামলা মোকাবেলারও রয়েছে পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা। মন্দিরে সব সময় বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল মোতায়েন থাকে।
মন্দিরের ক্ষতি করতে 'ডার্ক নেট'-এর সাহায্য
সূত্রের খবর, রাম মন্দিরে যাওয়ার পথগুলিও নিরাপত্তা অনুযায়ী ঠিক করা হয়েছে। একটি বিশেষ রুট আছে যেখানে তিনটি জায়গায় চেকিং করা হয়। এমন নয় যে কোনও পথ দিয়েই মূল মন্দিরে পৌঁছানো যায়। তার জন্য একটি পথ নির্ধারণ করা হয়েছে। মন্দিরে কিছু আনা নিষেধ। কিছুদিন আগে এক ব্যক্তি ডার্ক নেট দিয়ে মন্দির উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। পুলিশের তৎপরতার কারণে ওই ব্যক্তি ধরা পড়ে। এর পর সোশ্যাল মিডিয়াতেও নজর রাখছে নিরাপত্তা সংস্থাগুলি। ডার্ক নেট ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে অপরাধ সংঘটনের অন্যান্য পদ্ধতিও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। মন্দিরের নিরাপত্তার জন্য, আশেপাশের এলাকায় একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা হয়। এসব বলতে হবে এখানে আসা স্থানীয় বাসিন্দাদের। এ নিয়ে রেকর্ড তৈরি হয়। এখানে কোনো ব্যক্তির কাজ থাকলে গোয়েন্দা ইউনিট তার ওপর নজর রাখে। দেখা যাচ্ছে মন্দিরের ক্ষতি করার ষড়যন্ত্রকারী কোনো অপরাধী নেই। মন্দিরের আশেপাশের এলাকায় কাউকে ম্যাপিং করতে দেওয়া হয় না।
মন্দিরের নিরাপত্তা, এক্সপোজার রয়েছে সিআরপিএফের কাছে
মন্দিরের নিরাপত্তার জন্য ইউপি পুলিশের একটি বিশেষ সার্ভিস ইউনিট গঠন করা হচ্ছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে পিএসি জওয়ানদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা ভালো নয়। যাইহোক, এনএসজি দলও এখানে আসছে। পুলিশ এবং PAC এর রিয়েল টাইম এক্সপোজার নেই। সেই এক্সপোজার শুধুমাত্র সিআরপিএফ-এর কাছে। কারণ, সিআরপিএফ দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসবাদী ও নকশাল প্রভাবিত এলাকায় কাজ করছে। ইউপি সরকার নেপাল সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে অবস্থিত মাদ্রাসাগুলির একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। এতে গোয়েন্দা ব্যবস্থার প্রতিবেদনও রয়েছে। সেখানে অবস্থিত মাদ্রাসাগুলোর তথ্য পেয়েছে আইবি।
এমনকি বিশেষ অতিথিদেরও একা ছাড়েন না নিরাপত্তাকর্মীরা
মন্দিরের চারপাশে আটটি মসজিদ রয়েছে। সেখানে নিয়োজিত নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে যে হামলা হলে কে কী দায়িত্ব পালন করবে। নজরদারির জন্য অযোধ্যায় প্রায় ৩৫০টি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। মন্দির চত্বরের প্রতিটি পদক্ষেপে নজরদারি করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট দূরত্বে যানবাহন থামানো হয়। বিশেষ অতিথি থাকলে তার জন্য পাস দেওয়া হয়। এর পরেও নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে একা ছাড়ছেন না। গাইড হিসেবে তারা তার সাথে থাকে। মন্দির চত্বরের নিরাপত্তা নিয়ে একটি বিশেষ পর্যালোচনা প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। বিভিন্ন সংস্থা সময়ে সময়ে এই কাজ করে থাকে। নিরাপত্তা সমীক্ষা চলতে থাকে। গত বছর সিআইএসএফ একটি নিরাপত্তা সমীক্ষা করেছিল।