ভারতের মেট্রো শহরগুলিতে ক্রমেই বাড়ছে সংক্রমণ। এই অবস্থায় গত এক সপ্তাহ ধরে লকডাউনে ছিল দেশের তথ্যপ্রযুক্তি রাজধানী। তবে লকডাউনের সেই মেয়াদ আর বাড়ান হচ্ছে না, জানিয়ে দিলেন কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী। ফলে ২২ জুলাই অর্থাৎ সোমবার থেকেই ফের পুরনো ছন্দে ফিরতে চলেছে বেঙ্গালুরু।
তবে বেঙ্গালুরুতে লকডাউন তুলে নিলেও শহরের কন্টেইনমেন্ট জোনগুলিতে এখনও কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি থাকছে। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ইয়েদুরাপ্পা এদিন বলেন, 'বুধবারের পর থেকে শহরে কোনও লকডাউন নেই, মানুষের কাজে যাওয়া প্রয়োজন, অর্থনীতিও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। লকডাউন কোনও সমাধান নয়, শুধুমাত্র কনটেইনেমন্ট জোনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: সপ্তাহে দু’দিনের সম্পূর্ণ লকডাউন নিয়ে নির্দেশিকা, দেখে নিন কী কী বন্ধ, কোথায় মিলছে ছাড়
শহরে সংক্রমণ লাগামছাড়া ভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণেই রাজ্য সরকার বেঙ্গালুরু শহর ও গ্রামীণ জেলাগুলিতে ১৪ জুলাই রাত আটটা থেকে লকডাউন কার্যকর করেছিল। এদিকে রাজ্যে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার জন্য মহারাষ্ট্র ও তামিলনাড়ুকেই দায়ি করছেন ইয়েদু। এই দুই রাজ্য থেকে আগত মানুষজনই সংক্রমণ নিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ করেন কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী। বেঙ্গালুরু শহরে ইতিমধ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩ হাজার ছাড়িয়েছে। আর কর্ণাটকে সংখ্যাটা ৬৭ হাজারের বেশি।
এদিকে বেঙ্গালুরুর মত রাজধানী দিল্লির করোনা পরিস্থিতিও বেশ সঙ্গীন। এরমধ্যে সরকারি সমীক্ষায় উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। দিল্লিতে এখনও পর্যন্ত ২৩ শতাংশের বেশি মানুষের করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটেছে বলে সেরো-প্রিভেলেন্স সমীক্ষার জানান হয়েছে। সমীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী, দিল্লির বাসিন্দাদের মধ্যে ২৩.৪৮ শতাংশের শরীরে তৈরি হয়েছে অ্যান্টিবডি। এই তথ্য থেকেই ইঙ্গিত মিলেছে, তাঁদের শরীরে করোনা সংক্রমণ ঘটেছিল। সমীক্ষায় এও ইঙ্গিত মিলেছে যে, আক্রান্তদের একটা বড় অংশই উপসর্গহীন।
আরও পড়ুন:মাত্র ২ সপ্তাহে তছনছ হয়ে গেল পরিবার, করোনা প্রাণ কেড়ে নিল মা ও ৫ ছেলের
ভারতের রাজধানী শহর দিল্লিতে প্রায় এক কোটি ৯৮ লক্ষ মানুষের বসবাস। এখন পর্যন্ত শহরটির মোট বাসিন্দার এক শতাংশেরও কম বা এক লাখ ২৩ হাজার ৭৪৭ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। সমীক্ষা অনুযায়ী ২৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ আক্রান্তের হিসেবে শহরটির প্রায় ৪৬ লাখ ৫০ হাজার মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। দিল্লি সরকারের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শনাক্ত ও আক্রান্তের সংখ্যার এই পার্থক্য থেকে বোঝা যাচ্ছে বিপুল সংখ্যক মানুষই উপসর্গ ছাড়াই সংক্রমণের শিকার হয়েছেন।
সরকার বলছে, দিল্লির বেশ কিছু জায়গায় তীব্র ঘনবসতি থাকায় সেসব এলাকায় সংক্রমণের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৩ দশমিক ৪৮ শতাংশের চেয়েও বেশি হতে পারে। শহরের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এখনও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে জানিয়ে রাজ্য সরকার সব ধরণের নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ কঠোরভাবে অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছে।
ভারতে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাস সংক্রমণের ব্যাপকতা বুঝতে এই ধরণের একটি জরিপ চালানো হলো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মাধ্যমে ভাইরাসটির ব্যাপকতা আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবে কর্তৃপক্ষ। কোনো ব্যক্তি পূর্বে কোনো ভাইরাস কর্তৃক আক্রান্ত হলে তাঁর দেহে সৃষ্ট অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডিকে চিহ্নিত করার জন্য যে পরীক্ষার আশ্রয় নেওয়া হয়, তাই হল সেরোলজিক্যাল টেস্ট। মূলত গোষ্ঠী সংক্রমণ বা উপসর্গহীন আক্রান্ত বা পজেটিভ বলে চিহ্নিত রোগীদের ক্ষেত্রে সেরো পরীক্ষা করা হয়। মহামারী বিশেষজ্ঞরা এই সেরো পরীক্ষার মাধ্যমে পূর্বে উক্ত ভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছেন এমন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেন। এর ফলে করোনার গতিপ্রকৃতি আরও স্পষ্ট হবে বলেই আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।