বহুদিন থেকে অসংসদীয় শব্দ ব্যবহারের বিরুদ্ধে বিজেপি। বিশেষ করে সংসদের ভিতরে অশ্রাব্য শব্দের প্রয়োগের বিরোধিতা করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাহুল গান্ধী থেকে শুরু করে একাধিক প্রথমসারির রাজনৈতিক নেতা একাধিকবার অকথা-কুকথার ফাঁদে পড়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে অশ্রাব্য শব্দ ব্যবহারের অভিযোগও উঠেছে। আবার সংসদের মধ্যে খোদ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও অশ্রাব্য শব্দে আক্রমণের নজির দেখা গিয়েছে সংসদ অধিবেশনেই।
অকথা-কুথাতে কম যান না সাংসদরাও। বিশেষ করে সংসদের মধ্যে সাংসদদের মারামারি থেকে ওয়েলে ঢুকে অধ্যক্ষের টেবিলের কাগজপত্র তছনছ করে দেওয়া, অশ্রাব্য ভাষায় একে অপরকে আক্রমণ- এই সব ছবি দেশবাসীর কাছে জলভাত হয়ে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার বারবার জানিয়েছে, যে কোনও সাংসদের এমন আচরণ সংসদের গরিমাকে নষ্ট করে। তাই, অকথা-কুকথার এই প্রবণতাকে বন্ধ করতে এবার উদ্যোগী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-র সরকার। এই মর্মে লোকসভার সচিবালয়ের পক্ষ থেকে বেশকিছু শব্দের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
বুধবার প্রকাশিত এই অসংসদীয় শব্দের তালিকায় রয়েছে- লজ্জাজনক, নির্যাতন, বিশ্বাসঘাতকতা, নাটক, দুর্নীতিগ্রস্ত, অযোগ্য, ভণ্ডামি, নৈরাজ্যবাদ, শকুনি, স্বৈরাচারী, খালিস্তানি, বিনাশপুরুষ, জয়চাঁদ ( কনৌজের রাজে .তথা ইতিহাসের কুখ্যাত চরিত্র, পৃথ্বিরাজ চৌহানের বিরুদ্ধে মহম্মদ ঘোরিকে মদত দেওয়ার জন্য তিনি ইতিহাসের পাতায় খলনায়ক বলে প্রতিপন্ন হয়েছেন।), তানাশাহি।
১৮ জুলাই শুরু হচ্ছে সংসদের বাদল অধিবেশন। তার আগে এই নিষিদ্ধ শব্দের তালিকা প্রকাশ করেছে লোকসভার সচিবালয়। এর জন্য নিষিদ্ধ শব্দকে একটি বুকলেটেও স্থান দেওয়া হয়েছে। সমস্ত সাংসদদের এই বুকলেট বিতরণ করা হচ্ছে। এমনকী এই নিষিদ্ধ শব্দের তালিকায় জুলুমবাজি, কোভিড স্প্রেডার, খুন সে ক্ষেতি (রক্ত দিয়ে চাষ), স্নুপগেট-এৎ মতো শব্দ ব্যবহারেও নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
এছাড়াও আরও এমনকিছু শব্দ রয়েছে এই নিষেধাজ্ঞার তালিকায়, তা একনজরে- চামচা, ব্লাডি, চিটিংবাজ, চামচাগিরি, চেলা, চাইল্ডিসনেস, কোরাপট অথবা দুর্নীতিবাজ, কাওয়ার্ড অথবা ভিতু, ক্রিমিনাল অথবা দূর্বিত্য, কোকোডাইল টিয়ার্স অথবা কুমিরের কান্না, ডিসগ্রেস, ডাঙ্কি অথবা গাধা, আইওয়াস, ফিউজ, হুলিগানিজম অথবা দূর্বিত্যায়ন-এর মতো শব্দকে। এছাড়াও রয়েছে অ্যানার্কিস্ট অথবা নৈরাজ্যবাদী, গদ্দার, গিরগিট অথবা গিরগিটি, গুনস, গাধিয়ালি আঁসু অথবার গাধার চোখে জল, অপমান, অহংকার, কালা দিন অথবা কালো দিন, কালা বাজারি অথবা কালো বাজারি, দাঙ্গা, দালাল, দাদাগিরি, দোহরা চরিত্র, বেচারা, ববকাট, ললিপপ, ফোলিস অথবা বোকা, ফিত্তু, বেহরি সরকার, সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট।
এই সব শব্দকে শুধু অসংসদীয় বলেই গণ্য করা হয়নি, সেই সঙ্গে শব্দগুলি যাতে অধিবেশনের কোনও রেকর্ডে নথিভুক্ত না হয়, সে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এই সমস্ত শব্দ ইংরাজি এবং হিন্দিতে বলা যাবে না। এমনকী, আঞ্চলিক ভাষাতেও এই শব্দ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। যদিও, লোকসভার সচিবালয়ের এই শব্দ নিষেধাজ্ঞায় এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। ১৮ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে সংসদের বাদল অধিবেশন।
আরও পড়ুন- 'আমাকে সাসপেন্ড করুন', বাদল অধিবেশনের আগেই কেন তৃণমূলের ডেরেক চ্যালেঞ্জ করলেন স্পিকারকে
আরও পড়ুন- সারনাথের সিংহের সঙ্গে নতুন সংসদ ভবনের সিংহের পার্থক্য কোথায়, ব্যাখ্যা দিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী
আরও পড়ুন- অশোকস্তম্ভ বিতর্ক- জাতীয় প্রতীকের অপমান বলে তৃণমূলের আক্রমণ মোদী সরকারকে, মত দিল ডিজাইনাররা