রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ব্যাখ্যা করেছেন যে, একজন মানুষ যদি এটা প্রশ্ন করে থাকেন যে, ‘চোর মাত্রেই মোদী পদবী কেন?’ এবং তিনি ব্যঙ্গাত্মক পদ্ধতিতে সেটার ব্যাখ্যা দেন, তাহলে সেটা তো বাক স্বাধীনতার অধিকারের মধ্যে পড়ে!
‘মোদী’ পদবি নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের দায়ে খারিজ করা হয়েছে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ। লোকসভা সচিবালয়ের তরফে এই ঘোষণা করা হয়েছে শুক্রবার। মোদী পদবি তুলে আপত্তিকর মন্তব্যের দায়ে বৃহস্পতিবার গুজরাতে সুরাত জেলা আদালত রাহুলকে ২ বছর জেলের সাজা দিয়েছিল। তারই ভিত্তিতে ভারতীয় সংবিধানের ১০২(১)-ই অনুচ্ছেদ এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (১৯৫১)-র ৮ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ করা হল।
নরেন্দ্র মোদী পরিচালিত বিজেপি সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিয়েছে কংগ্রেস সহ সমস্ত বিরোধী মহল। টুইট করে রাহুল গান্ধীকে সমর্থন জানিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে একই মত প্রকাশ করেছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও। তিনি টুইটে লিখেছেন, ‘বিজেপি এখন বিরোধী শিবিরের নেতাদের টার্গেট করতে অপরাধমূলক মানহানির পথ বেছে নিয়েছে এবং রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ তেমনই একটি পথ। এটি বিরোধীদের বিরুদ্ধে ইডি অথবা সিবিআই-এর চরম অপব্যবহারেরও উপরে আসে। এই ধরনের স্বৈরাচারী হামলাকে প্রতিহত এবং পরাজিত করুন।’ এবার সেই ক্ষোভে সুর মেলালেন কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্যও।
শুক্রবার রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ বাতিলের তীব্র বিরোধিতা করেছেন বাংলার কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। কেন্দ্রের শাসকদলের উদ্দেশ্যে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘কিছুদিনের জন্য জামিন পেলেও রাহুল গান্ধী এখনও জেলে (বিচারাধীন)। জেলে থাকাকালীন কি কোনও সাংসদের পদ খারিজ করা যায়?’ প্রদীপ ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘বিজেপির এটা জিঘাংসা এবং প্রতিহিংসা। ভারতবর্ষের গণতন্ত্রকে ধুলিস্যাৎ করার এই যে একটা অদ্ভুত প্রক্রিয়া, এটা তো দেশের জন্য একটা অশনি সংকেত।’
এই ঘটনাটিকে কার্যত ‘লঘু পাপে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হল’ বলে ব্যক্ত করেছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ বিশ্বনাথ চক্রবর্তী। তিনি অবাক হয়ে ব্যাখ্যা করেছেন যে, একজন মানুষ যদি এটা প্রশ্ন করে থাকেন যে, ‘চোর মাত্রেই মোদী পদবী কেন?’ এবং তিনি ব্যঙ্গাত্মক পদ্ধতিতে সেটার ব্যাখ্যা দেন, তাহলে সেটা তো বাক স্বাধীনতার অধিকারের মধ্যে পড়ে! তিনি বলেন, ‘আমি জোর দিয়ে বলছি, এটা ভারতীয় সংবিধানের ২১ নম্বর ধারায় বাক স্বাধীনতার অধিকারের মধ্যে পড়ে। আমি ব্যঙ্গাত্মকভাবে কোনও কিছু বর্ণনা করতেই পারি।’ এর সঙ্গে তিনি এও যোগ করেছেন, ‘বিচারপতিরা তাঁদের মতো বিচার করেছেন, আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু, আমার ব্যক্তিগত মতামত হল, পলিটিকাল স্যাটায়ার সবসময়েই হয়। এটা এত আটকাতে গেলে গণতন্ত্রের মজাটাই নষ্ট হয়ে যাবে।’ এরই সঙ্গে একটি ষড়যন্ত্রের ছাপ দেখতে পাচ্ছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ। তাঁর মতে, কংগ্রেসের ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রার সফলতার পরেই তাঁকে সমস্ত পথ দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করছে বিজেপি। এই মন্তব্যের পরেই রাজনৈতিক শিবিরে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি রাহুল গান্ধীর প্রতি সাধারণ ভারতবাসীর বিপুল জনসমর্থনে ভয় পেয়েছে বিজেপি? না হলে, কেন রাহুল গান্ধীকে উচ্চতর আদালতে আপিল করার সুযোগ দেওয়া হল না। বিরোধী জোটের এই প্রশ্নের মুখে এখন অবশ্য কার্যত নীরব রয়েছে কেন্দ্রের শাসক মহল।
আরও পড়ুন-
অনুব্রত মণ্ডল সম্পর্কে ফের চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল ইডির হাতে, ধৃত অয়ন শীলের সঙ্গেও বীরভূম-যোগ?
“আমি ঋতুপর্ণ বলছি”, ‘পরিণীতা’ রিলিজ করার পর প্রদীপ সরকারকে ফোন করেছিলেন বিখ্যাত বাঙালি পরিচালক
ভালোবাসার ফাঁদে পড়েই খোয়া যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা, খাস কলকাতায় ধরা পড়ল অনলাইন ডেটিং চক্র