দীর্ঘ লড়াইয়ের পর এসেছে সাফল্য। অবশেষে অযোধ্যায় রাম মন্দিরের শিলান্যাস করেলন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিজেপি শুরু থেকেই মন্দির আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। স্বাভাবিকভাবেই, মন্দির নির্মাণের কৃতিত্বের তারাই হকদার। কিন্তু গেরুয়া পার্টিকে সেই কৃতিত্ব দিতে একেবারেই নারাজ কংগ্রেস। তাই তাদের মধ্যেও এখন রামভক্তির উদয় হয়েছে। আর ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখেই কংগ্রেস যে রামের মাহাত্মেক শেষ পর্যন্ত হাতিয়ার করতে চাইছে তা রাজনীতি সচেতন মানুষের কাছে অনেকটাই স্পষ্ট। তাই ভূমি পুজোর আগেই দিনই প্রিয়ঙ্কা গাঁধী নিজেকে রামের চরণে সঁপে দিয়েছেন। ভূমিপূজনের দিন ট্যুইট করতে হল রাহুল গান্ধীকেও।
তবে কেবল ভাই-বোন নয়, মন্দিরের স্বপক্ষে গলা চড়াতে শুরু করেছেন একের পর এক কংগ্রেস নেতারা। তারমধ্যে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর বক্তব্য মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথের। কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর ঘনিষ্ঠ কমল নাথের দাবি, কংগ্রেস শুরু থেকেই রাম মন্দিরের পক্ষে। রাজীব গান্ধীর আমলেই প্রথমবার মন্দিরের শিলান্যাস হয়। সাধারণ মানুষের জন্য মন্দিরের দরজাও খুলে দিতে চেয়েছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী।
এক সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কমল নাথ বলেন,”আমি শুরু থেকেই বলছি, মন্দির নির্মাণকে সমর্থন করি। ভারতই একমাত্র দেশ যেখানে সবার সম্মতিতে এভাবে মন্দির নির্মাণ সম্ভব। ভুলে গেলে চলবে না যে ১৯৮৬-তে রাম মন্দিরের দরজা কিন্তু রাজীব গান্ধীই খুলেছিলেন। ১৯৮৯ সালেই একরকম ভূমিপুজো হয়ে গিয়েছিল। রাজীব ভোটের প্রচারেও রামরাজ্যকেই স্লোগান করেছিলেন।”
ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি ছড়িয়েছে। যেখানে প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে ঘিরে রয়েছেন এক দল কৃষ্ণ প্রেমী। সেই ছবিকে এই বলে প্রচার করা হচ্ছে যে, এটি হল ১৯৮৯ সালে অযোধ্যায় রাম মন্দিরের বিতর্কিত স্থানে শিলান্যাস অনুষ্ঠানের ফটো। তবে ছবিটির সত্যতা পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা যায়, সেটি দিল্লিতে তোলা হয়েছিল। প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী এক দল কৃষ্ণ ভক্তের সঙ্গে দেখা করার সময় ছবিটি তোলা হয়। ৫ আগস্ট অযোধ্যায় মোদীর রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের আগে ছবিটি ভাইরাল হয়। পোস্টটির সঙ্গে হিন্দি ক্যাপশনে লেখা ছিল, "এটি হল ৯ নভেম্বর ১৯৮৯ সালের শিলান্যাসের ছবি। এতে কোনও লোকদেখান আড়ম্বর বা ভণ্ডামি নেই।" যদিও পরে যিনি এই পোস্ট করেছিলেন তিনি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ছবিটি ডিলিট করে দেন।
আরও পড়ুন: সবুজ রঙের নবরত্ন খচিত পোশাকে সাজলেন রামলালা, তৈরি হয়েছে পছন্দের লক্ষাধিক ‘রঘুপতি লাড্ডু’
তবে ইতিহাস বলছে, ১৯৮৬ সালে রাজীব গান্ধীর আমলেই প্রথম খোলা হয় বিতর্কিত ইমারতের দরজা। উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বীর বাহাদুর সিংকে ওই নির্মাণের দরজা খোলার জন্য রাজীবই রাজি করান। তখন থেকেই রামলালার দর্শন করার অনুমতি পাওয়া শুরু করে হিন্দুরা। এর আগে ১৯৮৫ সালে রাজীবের অনুরোধেই প্রথমবার দূরদর্শনে দেখানো শুরু হয় রামায়ণ। এরপর ১৯৮৯ সালে নিজের নির্বাচনী প্রচারে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাম মন্দির নির্মাণের প্রতিশ্রুতিও দেন। এবং সেই বছরই রাজীব বিশ্ব হিন্দু পরিষদকে রাম মন্দিরের শিলান্যাসের অনুমতি দেন।
১৯৮৯ সালের ৯ নভেম্বর রামজন্মভূমির অদূরেই মন্দিরের শিলান্যাস করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। সেই অনুষ্ঠানে রাজীব নিজে উপস্থিত না থাকলেও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বুটা সিংকে নিজের প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছিলেন। যদিও তারপরে আদালতের গেরোয় আর মন্দির নির্মাণের প্রক্রিয়া এগোতে পারেনি।