ত্রিপুরায় এবার এক নজিরবিহীন জোট হয়তো দেখতে চলেছে মানুষ। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এমন জোট-কে অবশ্যাম্ভাবি বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু, ত্রিপুরার বুকে এমন দিন যে আসব তা হয়তো কয়েক বছর আগেও ঠাহর করা যায়নি।
অবিজেপি সরকারের ডাক দিতে শেষমেশ সরকারিভাবে হয়তো হাত ধরা-ধরি করতে চলেছে কংগ্রেস ও সিপিএম। এই মুহূর্তে ত্রিপুরায় যে পরিস্থিতি তাতে বিজেপি-কে বেগ দিতে হলে ত্রিপুরার বুকে একটা সময়ের দুই শক্তি কংগ্রেস ও সিপিএম-কে হাত ধরতে হবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এমনকী ত্রিপুরার রাজনৈতিক অন্দরমহলেও যা খবর তাতে সরকারিভাবেই এই জোট হতে চলেছে। কোনও ভিন্ন শক্তি হয়ে ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করতে চায় না কংগ্রেস ও সিপিএম। এরমধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ফ্যাক্টর হিসাবে ত্রিপুরার রাজনীতিতে ঢুকে পড়েছে। বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস কোনও শক্তি হবে না ঠিকই কিন্তু ভোট কাটাকুটির অঙ্কে বিজেপি বিরোধী দলগুলির মাথা ব্যাথার কারণ হতে পারে। তাই বিজেপি যাতে তৃণমূল কংগ্রেসের এই ভোট কাটার অঙ্কের ফায়দা তুলতে না পারে তারজন্য একজোট হওয়াকে শ্রেয় বলে মনে করছে কংগ্রেস ও সিপিএম।
সূত্রের খবর রবিবার দিল্লিতে কংগ্রেস এবং সিপিএম-এর শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে একটি বৈঠকও হয়েছে। সেখানেই ঠিক হয়েছে যে ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচনে কোনওভাবেই বিজেপি বিরোধী ভোটকে ভাগ হতে দেওয়া যাবে না। পুরো বিষয়টি দেখভালের জন্য একটি ছোট কমিটিও তৈরি করার সিদ্ধান্ত নাকি সেই বৈঠকে হয়েছে। আর এই কমিটি ত্রিপুরায় আসন রফার বিষয়টি চূড়ান্ত করবে বলে খবর। এর আগে কংগ্রেস ও সিপিএম-কে মিলে তৈরি এই যৌথ কমিটি কোথায় কোথায় আসন সমঝোতা হতে পারে সেই এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করবে।
সোমবার আগরতলায় সিপিএম-এর রাজ্য কমিটির বৈঠক ছিল। সেখানেও মোটামুটি একটা সম্মতি হয়েছে যে এই মুহূর্তে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে বিজেপি বিরোধী শক্তিগুলোর এক হওয়া ছাড়া উপায় নেই। তাই কংগ্রেসের সঙ্গে একটা সময় বৈরিতা থাকলেও এখন তাদের সঙ্গে চলার বিষয়ে মোটামুটি সম্মত ত্রিপুরায় সিপিএম রাজ্য কমিটির অধিকাংশ সদস্য। সিপিএম-এর সর্বভারতীয় সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি রবিবার দিল্লিতে ত্রিপুরায় কংগ্রেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা অজয়কুমারের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন। সেখানেই নাকি জোট নিয়ে একটা প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এমনকী, ত্রিপুরার জনজাতি রাজনৈতিক দল ত্রিপরা মোথা পার্টির প্রধান প্রদ্যুৎ মাণিক্য দেববর্মণ-ও ইতিমধ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাধার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। আগের বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএম-এর মৌরসীপাট্টা শেষ করতে এবং বিজেপি-কে ক্ষমতায় আনতে প্রদ্যুৎ মাণিক্য বর্মণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। বলতে গেলে তার হাত ধরেই জনজাতি ভোটের নব্বই শতাংশ বিজেপি-র সমর্থনে ছিল। কিন্তু, গত পাঁচ বছরে ত্রিপুরায় বিজেপি-র বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ এনেছেন প্রদ্যুৎ মাণিক্য দেববর্মণ। আর যার জন্য এবার তারা বিজেপি-র হাত ছেড়ে দিয়েছে। তাই কংগ্রেস-সিপিএম এবং ত্রিপরা মোথা পার্টি যদি একসঙ্গে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয় তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
সোমবার আগরতলায় একটি রাজনৈতিক বিবৃতিও সামনে এসেছে। আর এই বিবৃতিতে কংগ্রেস ও সিপিএমকে একসঙ্গে ভোটে লড়াই করার ডাক দেওয়া হয়েছে। বিজেপি-র বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগও আনা হয়েছে এই বিবৃতিতে। বলতে গেলে এই মুহূর্তে এই বিবৃতি ভোটের প্রতীক্ষায় থাকা ত্রিপুরায় একটা শোরগোল ফেলে দিয়েছে।
আরও পড়ুন-
২০২৪ সালের নির্বাচনে মোদী ও বিজেপির পরাজয়ের একটাই টোটকা, নয়া ফর্মুলা বাতলালেন আসাদউদ্দিন ওয়াইসি
‘বন্দে ভারত’ এক্সপ্রেসে কি আবার পাথর-হামলা? নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না যাত্রীরা
'করোনা কালেও বেড়েছে রাজ্যের জিডিপি', জি২০ সম্মেলনের উদ্বোধনী মঞ্চে বাংলার উন্নতির কথা তুলে ধরলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়