ভাবার জন্য ১০ সেকেন্ড থাকলে অনেককে বাঁচাতে পারতাম- উত্তরকাশী তুষারধসে বেঁচে ফেরা রোহিত ভাটের আক্ষেপ

মঙ্গলবার সকালে উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীতে দ্রৌপদী কা ডান্ডা-২ পর্বতে বিশাল তুষার ধসে কোনও রকমে বেঁচে যাওয়া রোহিত ভাট বলেন "যদি আমরা ১০ সেকেন্ডেরও সময় পেতাম, আমরা আরও জীবন বাঁচাতে পারতাম..." । 

Parna Sengupta | Published : Oct 6, 2022 6:02 AM IST

কী হয়েছিল সেদিন? কীভাবে চোখের সামনে বরফ ঝড়ে চলে গেল এতগুলো প্রাণ? উত্তরকাশীর তুষারধ্বসে প্রাণ গিয়েছে একাধিক পর্বতারোহীর। সেই মর্মান্তিক দৃশ্য চোখের সামনে দেখেছেন মৃত্যুমুখ থেকে বেঁচে ফেরা আরেক পর্বতারোহী রোহিত ভাট। নিজের মুখেই জানালেন কীভাবে সেদিন তুষারধ্বসের কবলে পড়েছিলেন তাঁরা।

মঙ্গলবার সকালে উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীতে দ্রৌপদী কা ডান্ডা-২ পর্বতে বিশাল তুষার ধসে কোনও রকমে বেঁচে যাওয়া রোহিত ভাট বলেন "যদি আমরা ১০ সেকেন্ডেরও সময় পেতাম, আমরা আরও জীবন বাঁচাতে পারতাম..." । উত্তরকাশীর জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোহিতের সঙ্গে কথা বলে এশিয়ানেট নিউজ। তিনি জানান কীভাবে ওই তুষার দৈত্যের হাত থেকে কোনও রকমে বেঁচে ফিরেছেন তিনি। 

উত্তরাখন্ডের বাসিন্দা রোহিত নেহেরু ইনস্টিটিউট অফ মাউন্টেনিয়ারিং-এ অ্যাডভান্স মাউন্টেনিয়ারিং কোর্সের পাঠরত প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে একজন। তিনি বলেন "মঙ্গলবার ভোর তিনটে থেকে সাড়ে তিনটের মধ্যে আমরা আমাদের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করি। আমরা ৩৪ জন প্রশিক্ষণার্থী এবং সাতজন প্রশিক্ষক ছিলাম। আমরা যখন ৫৫০০ মিটারে পৌঁছেছিলাম তখন তুষারপাত আমাদের ধাক্কা দেয়। যা চূড়ান্ত গন্তব্য থেকে মাত্র ১০০-১৫০ মিটার দূরে ছিল। ঘড়িতে তখন সকাল সাড়ে আটটা। তুষারপাত এতটাই প্রবল ছিল যে আমরা কিছু ভাবার সময়ও পাইনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই তুষারপাতের কারণে সবকিছু সাদা হয়ে যায়। আমাদের অনেক সহশিক্ষার্থী এবং প্রশিক্ষক ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়েছিলেন"। 

রোহিতের কথায় পর্বতারোহীরা কিছু ভাবার কোনও সময় পাননি। দুজন প্রশিক্ষণার্থী এবং কিছু প্রশিক্ষক একটি সামান্য উঁচু জায়গায় ছিলেন, অন্যান্য পর্বতারোহী এবং অন্যান্য প্রশিক্ষকরা তাঁদের অনুসরণ করেছিলেন। তুষারপাত পর্বতারোহীদের ধাক্কা দিয়ে নীচে ফেলে দেয়। তারা ৬০ ফুট গভীর খাদে পড়ে যায়। তাতে পড়ে যান রোহিতও। তবে বরফ কাটার যন্ত্র তাঁর প্রাণ বাঁচিয়েছিল। 

রোহিত সেই মুহুর্তের কথা স্মরণ করে বলেন, "সেই দিন, (নেহরু ইনস্টিটিউট অফ মাউন্টেনিয়ারিং প্রশিক্ষক) অনিল স্যার, নেগি স্যার, এসআই স্যার এবং আমি এভারেস্টার সাবিতা কানসওয়াল এবং নওমি রাওয়াত (এনআইএম-এর প্রশিক্ষক) এবং দুই প্রশিক্ষণার্থীর মৃতদেহ উদ্ধার করেছিলাম। আমরা তিনজন প্রশিক্ষণার্থী পর্বতারোহী এবং স্কিইং বিভাগের একজনকে তুষারধসের স্থান থেকে উদ্ধার করি।"

আরও পড়ুন- 'যারা দুর্নীতি করেছেন স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়ুন, নইলে কঠোর পদক্ষেপ', SSC মামলায় হুঁশিয়ারি আদালতের

তিনি বলেন আহত পর্বতারোহীদের উদ্ধারে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তার জন্য এনআইএম সবরকম চেষ্টা চালিয়েছে। "আমাদের সংস্থা আমাদের উদ্ধার করার জন্য সমস্ত লোক পাঠিয়েছে। অনেক পোর্টারও আমাদের সাহায্য করেছে,"। তিনি বলেন, "পরের দিন সকালে, ITBP কর্মীরা আমাদের তাদের বেস ক্যাম্পে এয়ারলিফট করে এবং তারপরে আমাদের উত্তরকাশী জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে।"

রোহিত বলেছেন, "আমাদের খাওয়ার কিছু ছিল না কারণ আমরা যে জিনিসপত্র নিয়ে গিয়েছিলাম তা ভেসে গেছে। গতকাল থেকে (যখন তুষারপাত হয়েছিল), আমাদের কাছে কিছুই ছিল না। আমাদের যদি কয়েক সেকেন্ড চিন্তা করার জন্য থাকত, তাহলে আমরা বাঁচাতে পারতাম আরও অনেককে। আবহাওয়া পরিষ্কার ছিল, এবং যা ঘটেছিল, তা হঠাৎ করেই হয়েছিল।"

আরও পড়ুন- ৬৬ জন গাম্বিয়ান শিশুর মৃত্যু! ভারতে তৈরি সর্দিকাশির সিরাপ নিয়ে এবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কবার্তা

উল্লেখ্য, রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত পুলিশ এবং ভারতীয় বিমান বাহিনী নিখোঁজ পর্বতারোহীদের সনাক্ত করতে একটি যৌথ অভিযান পরিচালনা করছে। খারাপ আবহাওয়ার কারণে বিকেল চারটের দিকে অভিযান বন্ধ করে দেয় দলটি। ইতিমধ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনী দক্ষ পর্বতারোহীদের দল পাঠিয়েছে। ভারতীয় বায়ুসেনা অভিযানের জন্য সারসাওয়া থেকে দুটি এবং বেরেলি থেকে একটি হেলিকপ্টার মোতায়েন করেছে।

আরও পড়ুন- 'রণসিংহে' ফুঁ দিয়ে ভোট-যুদ্ধের ঘোষণা, হিমাচল প্রদেশে কংগ্রেসকে কটাক্ষ মোদীর

Share this article
click me!