সোমবার নির্মলজোতের ওই অংশে কবচ প্রযুক্তি থাকলে এড়ানো যেত এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা। অভিযোগ, রেল লাইনে এই কবচ প্রযুক্তি ছিল না। স্বভাবতই পরিকাঠামো উন্নয়নে গালভরা বিজ্ঞাপন প্রচারিত হলেও বাস্তবে যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
একের পর এক দুর্ঘটনা। ভারতীয় রেলযাত্রা এখন সাধারণ যাত্রীদের কাছে মারণ যাত্রায় পরিণত হয়েছে। ভারতীয় রেলের 'কবচ' সাধারণ যাত্রীদের ট্রেনযাত্রাকে মারণ সফরে পরিণত করেছে। দুর্ঘটনা এড়াতে বহু বছর ধরে ভারতীয় রেল ঘটা করে 'কবচ প্রযুক্তির' প্রচার চালাচ্ছে।
কী এই কবচ?
কবচ হল অটোমেটিক ট্রেন প্রোটেকশন (এটিপি) সিস্টেম। তিনটি ভারতীয় সংস্থার সঙ্গে মিলে এই প্রযুক্তি তৈরি করেছে রিসার্চ ডিজাইন অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অর্গানাইজ়েশন (আরএসসিও)। ২০২০ সালে কবচকে জাতীয় স্বয়ংক্রিয় ট্রেন সুরক্ষা ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সর্বোচ্চ সুরক্ষা স্তরের পরীক্ষাতেও সবুজ সঙ্কেত পায় এই প্রযুক্তি।
তার মূল উদ্দেশ্য একই লাইনে এসে যাওয়া দু'টি ট্রেনের মধ্যে সরাসরি ধাক্কা এড়ানো। সোমবার নির্মলজোতের ওই অংশে কবচ প্রযুক্তি থাকলে এড়ানো যেত এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা। অভিযোগ, রেল লাইনে এই কবচ প্রযুক্তি ছিল না। স্বভাবতই পরিকাঠামো উন্নয়নে গালভরা বিজ্ঞাপন প্রচারিত হলেও বাস্তবে দেশের সার্বিক রেল পরিকাঠামো ও যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
সুরক্ষা তহবিলের ১ লক্ষ কোটি টাকা দিয়ে কী হল?
বাজেটে অর্থবরাদ্দের পাশাপাশি ২০১৭ সালে রেলমন্ত্রক ঘোষণা করেছিল, একটি বিশেষ তহবিল তৈরি হচ্ছে। ১ লক্ষ কোটি টাকার। পাঁচ বছরের মধ্যে সেই তহবিল ব্যবহার করে রেলসুরক্ষা আমূল বদলে ফেলা হবে। খোলনলচে পরিবর্তন করে রেলের দুর্ঘটনা প্রবণতাকে প্রায় শূন্যে নামিয়ে আনার প্ল্যান ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০২২ সালের মধ্যে সেই তহবিল ও কাজ পূর্ণ হওয়ার কথা।
অথচ ঠিক পরবর্তী বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুন মাসে বালেশ্বরে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রায় ৩০০ মানুষের মৃত্যু হয়। আর তারও একবছরের মধ্যে কাঞ্চনজঙ্ঘা। অর্থাৎ গাফিলতি অথবা প্রযুক্তিগত ত্রুটি-দুই কারণেই দুর্ঘটনা প্রবণতা বিন্দুমাত্র কমেনি। প্রশ্ন উঠছে ওই ১ লক্ষ কোটি টাকা দিয়ে কী করা হয়েছে? নাকি তহবিল নির্মাণের পরিকল্পনা বিশ বাঁও জলে? তহবিলের নাম ছিল রাষ্ট্রীয় রেল সংরক্ষণ কোষ।
ইতিমধ্যেই এই তহবিল নিয়ে প্রশ্ন ও সন্দেহ উত্থাপন করেছিল ক্যাগ। রেলমন্ত্রক বছরে ২০ হাজার কোটি টাকা করে ব্যয় করবে সুরক্ষাখাতে। প্রধানত দু'টি প্রকল্পে-রেলওয়ে ক্রসিং এবং রেল লাইনের সংরক্ষণ। আর দ্বিতীয় অগ্রাধিকার, নতুন কামরা নির্মাণ, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, ইঞ্জিনের আধুনিকীকরণ, লোকো পাইলট, সহকারী লোকো পাইলট, গার্ডের প্রশিক্ষণ। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা ছিল, নিয়ম করে পুরনো রেললাইনের সংস্কার ও সুরক্ষা। বছরে ১৫ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার কথা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের এবং ৫ হাজার কোটি টাকা করে রেলের। ক্যাগ রিপোর্টে বলা হয়েছে, পরপর তিন বছরই রেল নিজের তরফ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা তহবিলে দেয়নি। উল্টে গড়ে ২ থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা এই তহবিল থেকে নিয়ে অন্য খাতে ব্যয় করা হয়েছে। অর্থাৎ যে তিমিরে পড়ে ছিল ভারতীয় রেল, এখনও পড়ে রয়েছে সেই তিমিরেই।
আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।