আদানি গ্রুপের থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় অর্ধেক করে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ২০১৭ সালে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময়, বাংলাদেশ আদানি গ্রুপের সঙ্গে একটি বিদ্যুৎ চুক্তি স্বাক্ষর করে। সেই চুক্তি অনুযায়ী আদানি গ্রুপ বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। যদিও আদানির সংস্থার বাংলাদেশের থেকে কোটি কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এই অমীমাংসিত বিরোধে প্রতিবেশী রাজ্য আদানি থেকে বিদ্যুৎ কেনা অর্ধেক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক সংস্বাদ সংস্থা প্রতিবেদনে এই তথ্যই জানিয়েছে।
সম্প্রতি, আদানি গ্রুপ বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দিয়েছে যে তার বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের জন্য ৮০০ মিলিয়ন ডলার ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৬৭৮২ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। জবাবে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে যে দেশে ডলার সংঙ্কট থাকা সত্ত্বেও তারা আদানি গ্রুপকে ১৫০ মিলিয়ন ডলার ভারতীয় মুদ্রায় ১২৭১ কোটি টাকা দিয়েছে। এর পরে,৬৫ কোটি ডলার ভারতীয় মুদ্রায় ৫৫১১ কোটি টাকা বকেয়া ছিল। সেই টাকাও পরিশোধ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে ঢাকা। বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান করিমসংবাদ সংস্থাকে বলেছেন যে আদানির বকেয়া ৬৫০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া রয়েছে।
২০১৭ সালের চুক্তি অনুযায়ী, আদানি গ্রুপকে ২৫ বছরের জন্য বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হবে। কিন্তু সম্প্রতি এই চুক্তিতে অনেক অনিয়ম পাওয়ায় বাংলাদেশ হাইকোর্ট তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্তে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। কমিটির প্রতিবেদন ফেব্রুয়ারিতে জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার আদানিসহ ছয়টি কোম্পানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তির বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে।
বাংলাদেশের যুক্তি হলো, চলতি শীত মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা কমেছে। তাই কম বিদ্যুত নেওয়ার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) চেয়ারপারসন মোহাম্মদ রেজাউল করিমও শীতকালে চাহিদা কমার কথা জানিয়েছেন। তার মতে, আদানি গ্রুপকে জানানো হয়েছে যে এর কারণে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিট চালানোর প্রয়োজন নেই। বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে বাংলাদেশ। এই কারণেই বকেয়া পরিশোধেও বিলম্ব হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ৩১ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছে আদানি গ্রুপ।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের দুটি সূত্র জানিয়েছে যে বাংলাদেশ গত শীতে আদানি থেকে প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনেছিল। উভয় সূত্র আরও দাবি করেছে যে আদানি গ্রুপ জানতে চায় কখন আবার স্বাভাবিক হারে বিদ্যুৎ কেনা হবে। কিন্তু তাদের কোনও সুনির্দিষ্ট উত্তর দেওয়া হয়নি। এই বিশাল বকেয়া থাকা সত্ত্বেও, আদানি গ্রুপ বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। তবে সংস্থাটির একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন যে ক্রমবর্ধমান বকেয়া উদ্বেগের বিষয়। এতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু রাখতেও সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, “আমরা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং সরকারের সঙ্গে ক্রমাগত আলোচনা করছি। আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে যে বকেয়া টাকা শীঘ্রই পরিশোধ করা হবে।”