ঘুর্ণিঝড় মোকার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দ্বীপের বারোশর বেশি বাড়িঘর। যাঁদের বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে তাঁরা এখন বাঁশ ও ত্রিপল সংগ্রহ করে মেরামত করার চেষ্টা করছেন।
সাইক্লোন মোকা কার্যত তান্ডবলীলা চালিয়েছে এই দ্বীপে। জল নেই, খাবার নেই। মাথার ওপর খড়ের চালটাও ভেঙে পড়েছে ঝোড়ো হাওয়ার দাপটে। সেই পরিস্থিতিতে জীবনে ফেরার চেষ্টা চালাচ্ছে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ। চারদিন ধরে যোগান নেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের। জেলেরা মাছ ধরতেও যেতে পারছেন না। ফলে খাদ্য সংকট শুরু হয়েছে দ্বীপ জুড়ে। মঙ্গলবার সকাল থেকে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছে জেলা প্রশাসন, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ডসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থা। বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ত্রাণের কাজ শুরু করলেও, তা যথেষ্ট নয় বলে ক্ষোভ দ্বীপের বাসিন্দাদের।
ঘুর্ণিঝড় মোকার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দ্বীপের বারোশর বেশি বাড়িঘর। যাঁদের বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে তাঁরা এখন বাঁশ ও ত্রিপল সংগ্রহ করে মেরামত করার চেষ্টা করছেন। আর আশায় আছেন সরকারি সহায়তার। ৮ বর্গ কিলোমিটারের সেন্ট মার্টিন দ্বীপে যতদূর চোখ যায় শুধুই ধ্বংসস্তুপ। বিধ্বস্ত বাড়িঘর, উপড়ে পড়েছে গাছপালা।
উল্লেখ্য, সেন্ট মার্টিন দ্বীপের প্রায় ১২ হাজার বাসিন্দার জন্য সাগরপথে খাবার ও নিত্যপণ্যের যোগান আসে টেকনাফ থেকে। কিন্তু চারদিন ধরে ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকায় নিত্যপণ্য ও খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। আর মাছ ধরা বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন জেলেরা। দ্বীপের সাধারণ মানুষ পাকা ঘর করতে পারেন না ঝুপড়ি, যেগুলোর বেড়া ও ছাউনি পলিথিনের সেখানেই মানুষের বাস। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বেশ বেশি।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত একটি ছোট প্রবাল দ্বীপ। মূল দ্বীপ ছাড়াও এখানে ১০০ থেকে ৫০০ বর্গমিটার আয়তন বিশিষ্ট কয়েকটি ক্ষুদ্র দ্বীপ রয়েছে। যেগুলোকে স্থানীয়ভাবে ছেড়াদিয়া বা সিরাদিয়া বলে। গবেষকরা বলছেন, বর্তমানে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে প্রায় দেড় লাখ নারকেল গাছ আছে। এটা নারকেল জিঞ্জিরা নামেও পরিচিত। তবে রাতের দিকে প্লাবনে ক্ষয়ক্ষতি বাড়বে এমনি আশঙ্কা করা হচ্ছে। জলোচ্ছ্বাস ঠেকানোর মতো টেকসই বেড়িবাঁধ সেন্ট মার্টিনে নেই। এটি কক্সবাজার জেলার প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে ও মায়ানমার-এর উপকূল হতে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত। রবিবার দুপুর ১ টার পর শুরু হয় মোকার তান্ডব। মায়ানমারে ল্যান্ডফল হওয়ার পরও ১৪৭ কিমি বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে চলে সেন্ট মার্টিনে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের কক্সবাজার এবং সিতওয়ে উপকূলে রবিবার দুপুরের পরেই ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে আছড়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’। ঘণ্টায় ২১০ কিলোমিটার বেগের এই সুপার সাইক্লোনে তছনছ হয়ে গেছে সমগ্র উপকূল, ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এখানকার উদ্বাস্তু ক্যাম্পগুলিতে। মায়ানমার সীমান্তের কাছেও এর চরম ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে। যৌথ টাইফুন সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তরফে ঘূর্ণিঝড় মোকা-কে ‘বিপর্যয়কারী ঝড়’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রবল বৃষ্টির তোড়ে আপাতত জলের তলায় তলিয়ে গেছে বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটনস্থল সেন্টমার্টিন দ্বীপ, বহু মানুষের প্রাণহানির খবরও পাওয়া গেছে।