কলম্বো ছুঁল ভারতের পাঠানো ৪০ হাজার টন ডিজেল ভর্তি জাহাজ, ১০ পয়েন্টে শ্রীলঙ্কার আর্থিক মন্দা

শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি এই মুহূর্তে খুবই জটিল। ক্ষুব্ধ মানুষ চাইছে রাজাপক্ষের অপসারণ। মানুষের কাছে খাদ্য আজ দূমূল্য হয়ে উঠেছে। তেলের ভাড়ার শূন্য হতে বসেছে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অতিত কাল থেকেই শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক খুবই নিবিড়। কিন্তু রাজাপক্ষের শাসনকালে তার অনেকটাই অবনতি হয়েছে। 
 

Ritam Talukder | Published : Apr 2, 2022 6:59 AM IST / Updated: Apr 02 2022, 03:40 PM IST

শ্রীলঙ্কার দুর্দিনে সেই পাশে এসে দাঁড়াল ভারত। দ্বীপরাষ্ট্রের আর্থিক মন্দা এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছে যে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। জায়গায় জায়গায় সরকারের প্রতিনিধিদের কুশপুতুল দাহ করা হচ্ছে। অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে মানুষ। এই অবস্থায় শিয়রে শমন হয়ে দেখা দিয়েছে শ্রীলঙ্কার তেলের ভাড়ার। যা এক্কেবারে শূন্য। এমন এক পরিস্থিতিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে ভারত। ১ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ঋণের আওতায় শ্রীলঙ্কায় ডিজেল ভর্তি জাহাজ পাঠানো হয়েছে। ৪০ হাজার টন ডিজেল ভর্তি এই জাহাজ ইতিমধ্যেই কলম্বো বন্দরে পৌঁছেছে। সন্ধ্যার মধ্যে দ্বীপরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্তে এই ডিজেল বিলি করে দেওয়া হবে। শ্রীলঙ্কার আর্থিক মন্দার জেরে শুক্রবার রাতেই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবোয়ে রাজাপক্ষ। ১০ পয়েন্টে দেখে নেওয়া যাক, শ্রীলঙ্কার আর্থিক মন্দার ঘটনাপ্রবাহকে। 

২২ মিলিয়ন জনসংখ্যার দেশ শ্রীলঙ্কার আর্থিক মন্দা এই মুহূর্তে চরমে। বলা হচ্ছে এই দেশের স্বাধীনতার পর থেকে এটাই সবচেয়ে বড় বিপজ্জনক পরিস্থিতি, যা শ্রীলঙ্কার আর্থিক অবস্থাকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। শ্রীলঙ্কা সরকারের বৈদিশিক মুদ্রার ভাড়ার এক্কেবারে শূন্য়ে এসে দাঁড়িয়েছে। যার জেরে তারা বিদেশ থেকে আমদানি করা কোনও অত্যাবশকীয় পণ্যের দাম মেটাতেও অক্ষম। 

আরও পড়ুন, কাগজের অভাবে বন্ধ পরীক্ষা, বিদ্যুৎ থেকে ওষুধ সবকিছু 'বাড়ন্ত' শ্রীলঙ্কায়

জানা গিয়েছে শ্রীলঙ্কা জুড়ে ডিজেলের মজুত ভাণ্ডার শূন্যে এসে ঠেকেছে। যার জেরে পরিবহণ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সাধারণ যানবাহন যা মানুষ ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে তা বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। একস্থান থেকে অন্য স্থানে পণ্য যাতায়াতও প্রায় বন্ধের মুখে। এর ফলে কালোবাজারির দাপট বাড়ছে এবং অত্যাবশকীয় পণ্যের দাম চড়ছে। শ্রীলঙ্কার সরকার এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় এই মুহূর্তে বেশ জটিলতার মধ্যে রয়েছে। 

শুক্রবার থেকে দ্বীপরাষ্ট্রে মানুষের ক্ষোভ বিস্ফোরণের আকার নিয়েছে। রাস্তায় নেমে এতদিন বিক্ষোভ চলছিল। এবার শুক্রবার শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসের মূল ফাটক ভেঙে এবং পাঁচিল ডিঙিয়ে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করে ক্ষুব্ধ দেশবাসী। পরিস্থিতি এতটাই ভয়ানক আকার নেয় যে শুক্রবার রাতে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে দেন প্রেসিডেন্ট গোতাবোয়ে রাজাপক্ষ। যার জেরে এখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ভার সেনাবাহিনীর হাতে চলে গিয়েছে। 

 আরও পড়ুন, পাঁচশো টাকা কেজি চাল, মূল্যবৃদ্ধির আগুনে জ্বলছে শ্রীলঙ্কা

শ্রীলঙ্কা জুড়ে এখন সরকার বিরোধী আওয়াজ। এই দেশের দক্ষিণপ্রান্তের শহরগুলিতে মানুষ সমবেত হয়ে সরকারের বিরোধিতা করছে শুধু নয়, অবিলম্বে সরকারের পতন দাবি করা হয়েছে। এই শহরগুলির মধ্যে রয়েছে গল, মাতারা, মোরাতুয়া-র মত পর্যটন ভিত্তিক এবং আন্তর্জাতিক মানের শহরগুলি। এমনকি দক্ষিণের দেখাদেখি শ্রীলঙ্কার উত্তরাংশেও এখন শুরু হয়ে গিয়েছে বিক্ষোভ। রাস্তা আটকে সরকার বিরোধী মিছিল এবং জনসমাবেশও চলছে। 

এই ধরনের বিক্ষোভ নিয়ে এখনও প্রকাশ্যে প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষ মুখ খোলেননি। তবে, তাঁর অফিস থেকে দাবি করা হয়েছে এক দশক আগে মধ্য প্রাচ্যের মতো এক অচলাবস্থা তৈরির করার চক্রান্ত করা হচ্ছে। মধ্য প্রাচ্যের যে অচলাবস্থা আরব স্পিং নামে পরিচিত। প্রসঙ্গত বলে রাখা দরকার, এক দশক আগে আরব দুনিয়ায় যেভাবে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ হয়েছিল এবং মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল তার মূলে ছিল সরকার এবং অভিজাত শ্রেণির যোগসাজোশে তৈরি হওয়া এক চরম দুর্নীতি যা আর্থিক দুরাবস্থার আমদানি করেছিল। 

দীর্ঘদিন ধরেই শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবোয়ে রাজপক্ষের বিরুদ্ধে দেশের শাসনতন্ত্রকে কুক্ষিগত করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। যেভাবে তিনি শ্রীলঙ্কার সংবিধানের একাধিক নিয়মে সংশোধন করে নিজেকে লাগাতার প্রেসিডেন্ট পদে বসিয়ে রেখেছেন এবং পারিবারিক সদস্যদের সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছেন তাতে তার বিরুদ্ধে বারবার ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এমনকী শ্রীলঙ্কার সংবিধানে প্রেসিডেন্টের ভূমিকা ছিল নিয়মতান্ত্রিক শাসক প্রধান। আসলে দেশে চালাত প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সরকার। রাজাপক্ষ নিজেও একটা সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে প্রেসিডেন্ট পদে আসতেই একের পর এক নিয়ম এবং আইনের সংশোধন করে নিজের হাতে পুরো শাসনক্ষমতা তুলে নিয়েছেন। গোতাবোয়ে রাজাপক্ষের এক ভাই মহিন্দ্র এখন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী। আর এক ভাই বাসিল শ্রীলঙ্কার আইনমন্ত্রী। এমনকী গোতাবোয়ে রাজাপক্ষের বড় ভাই এবং এক ভাতিজাও সরকারের ক্যাবিনেট মন্ত্রীর পদে রয়েছেন। 

কোভিড ১৯ অতিমারির সময় থেকেই সঙ্কট শুরু শ্রীলঙ্কার আর্থিক নীতিতে। মূলত পর্যটন শিল্পের উপর ভিত্তি করে দেশের অর্থনীতি। কিন্তু লকডাউন শুরু হতেই পর্যটন শিল্পে মন্দা আসে এবং সেই সঙ্গে শ্রীলঙ্কার সরকার বেহিসিবি ঋণ নিতে শুরু করে। যদিও, এই বেহিসেবি ঋণের সূচনা কোভিড ১৯ আসার আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট পদে স্থালাভিষিক্ত হয়েই যেভাবে রাজাপক্ষ ঋণ নিয়ে যাচ্ছিলেন তাতে তখনই বাধ সেধেছিলেন বহু অর্থনীতিবিদ। সেই অর্থ নিয়ে রাজাপক্ষের বিরুদ্ধে তছরূপের অভিযোগও বারবার সামনে এসেছে। 

আরও পড়ুন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিঃশব্দ বিপ্লব, অ্যামাজনে গঠিত হল প্রথম মার্কিন ইউনিয়ন

শুক্রবার শ্রীলঙ্কার মুদ্রাস্ফীতির রিপোর্ট প্রকাশ পেয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে এই মুহূর্তে দ্বীপরাষ্ট্রের মুদ্রাস্ফীতির হার ১৮.৭ শতাংশ। গত ছয় মাস ধরে লাগাতার এই মুদ্রাস্ফীতির গ্রাফ উপরের দিকেই উঠে চলেছে। এটা গত ছয় মাস ধরে যেভাবে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে তাতে প্রতিমাসে এক রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছচ্ছে। খাবারের দামও আকাশ ছোঁয়া এই মুহূর্তে। এমনভাবে চললে দূর্ভিক্ষের মুখও দেখতে হতে পারে শ্রীলঙ্কাকে। তথ্য বলছে, গত কয়েক মাসে শ্রীলঙ্কায় খাবারের দাম ৩১.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। 

Read more Articles on
Share this article
click me!