গোটা বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। মহামারীর কারণে মৃতের সংখ্যা ২ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। দুনিয়ার নানা প্রান্তে এখন খালি শোনা যাচ্ছে মানুষ হারানোর হাহাকার। এই মারণ ভাইরাসের হাত থেকে মুক্তি পেতে ওষুধ ও টিকা আবিষ্কার করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন গোটা বিশ্বের গবেষকরা। এরমধ্যেই আশার আলো দেখাচ্ছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। গত সপ্তাহেই নিজের আবিষ্কার করা ভ্যাকসিন মানুষের শরীরের পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা শুরু করেছেন তাঁরা। ভ্যাকসিনের সাফল্যের ব্যাপারে ৮০ শতাংশ আশাবাদী অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা। হিউম্যান ট্রায়ালে উত্তীর্ণ হয়ে গেলে এই ভ্যাকসিন আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে সাধারণের জন্য পাওয়া যাবে। আর অক্সফোর্ডের এই গবেষক দলেই রয়েছে এক বঙ্গকন্যা।
অক্সফোর্ডের গবষেক দলের সদস্য বাঙালি মেয়ে চন্দ্রা দত্ত আসলে কলকাতার মেয়ে। বর্তমানে ৩৪ বছরের চন্দ্রা অক্সফোর্ডে থাকলেও তাঁর ছোটবেলা কেটেছে টালিগ়্জের গলফ গার্ডেনসে। গোখলে মেমোরিয়াল গার্লস স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। তারপর হেরিটেজ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোজি নিয়ে পড়াশোনা করে ২০০৯ সালে বায়ো টেকনোলজিতে এমএসসি পড়তে ব্রিটেনে চলে যান তিনি। বর্তমানে অক্সফোর্ডে বসবাসকারী চন্দ্রা কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন।
করোনা নিয়ে আশার আলো দেখল দেশবাসী, ৩ সপ্তাহের মধ্যে ভারতে শুরু হচ্ছে ভ্যাকসিনের উৎপাদন
পরীক্ষায় ব্যর্থ করোনা রুখতে প্রথম নির্মিত ওষুধ 'রেমডেসিভির', 'হু'-এর রিপোর্ট ঘিরে শোরগোল
এবার তবলিগিরা দান করছেন প্লাজমা, দিল্লিতে সেরে উঠলেন ভেন্টিলেশনে যাওয়া রোগীও
লিডস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োসায়েন্সে (বায়োটেকনোলজি) এমএসসি করেন চন্দ্রা। পড়াশোনার পাঠ শেষ করে এর পর তিনি জিএসকে, সেনজার নামে একটি স্টার্টআপ এবং অ্যাপটুইট নামের একটি ফার্মাসিতেও দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। গত বছর থেকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ক্লিনিক্যাল বায়োম্যানুফ্যাকচারিং কেন্দ্রে কাজ শুরু করেন।
অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে তাদের কাজ করতে হয় বলে ওদেশ থেকেই জানান চন্দ্রা। ট্রায়াল শেষে সফল হলে শীঘ্রই ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে বলে তিনি আশাবাদী। এরকম কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে স্বাভাবিকভাবেই অত্যন্ত খুশি চন্দ্রা। তিনি বলেন, 'এটা দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা। আমি বরাবর ফার্মাকিউটিক্যাল সংস্থায় কাজ করেছি। মানুষের জীবনকে আরও ভালো করে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। তবে আগে এরকম কিছুর সাক্ষী থাকিনি। দুর্দান্ত অনুভূতি। আমার মতে, সারা বিশ্ব এই প্রতিষেধক চায় যাতে জীবন আবার স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।'
ভারতেও প্রতিষেধক উৎপাদনের বিষয়ে কথাবার্তা চলছে বলে জানান চন্দ্রা। তিনি বলেন, 'আমি ডিস্ট্রিবিউশনে কাজ করি না। কিন্তু আমি যা জানতে পেরেছি, তাতে ট্রায়ালে পাশ করার আগে আমরা পুণের সিরাম ইনস্টিটিউটে বড়সড় উৎপাদন করব। যাতে ট্রায়ালে উতরে গেলেই তা বাজারে চলে আসে।'এদিকে করোনভাইরাস নিয়ে মেয়ের কাজে ঝুঁকির বিষয়ে প্রথমে একটু ভয়ে থাকলেও এখন তা ঝেড়ে ফেলেছেন গলফ গার্ডেনের ফ্ল্যাটে বসবাসকারী চন্দ্রার বাবা সমীর কান্তি দত্ত এবং মা কাবেরী দত্ত। গত ডিসেম্বরে শেষবার বাড়ি এসেছিলেন চন্দ্রা।