
নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (James Webb Space Telescope) নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই একটা টানটান উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। এই স্পেশ টেলিস্কোপ (Space Telescope)লঞ্চের আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমত শোরগোল পড়ে গিয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। অবশেষে সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে একটি একক নক্ষত্রের অসাধারণ ছবি প্রকাশ্যে এনেছে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। নাসা তার নিজস্ব অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে এইচডি ৮৪৪০৬-এর একটি নক্ষত্রের ছবি সকলের সঙ্গে শেয়ার করেছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই নক্ষত্র পৃথিবী থেকে এতটাই দূরে রয়েছে যে সেই প্রান্তে এখনও মানুষ পৌঁছোতে পারেননি, সেই অঞ্চলে লুকিয়ে থাকা রহস্যের উন্মোচন করেছে এই স্পেস টেলিস্কোপ। উল্লেখ্য, অনেক বাঁধা বিপত্তি পেড়িয়ে নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ আজ সাফল্য পেল। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, অন্তত এক হাজার অজানা ছায়াপথ পেড়িয়ে নাসার স্পেশ টেলিস্কোপে এই একক নক্ষত্রের ছবি ধরা পড়েছে। এই নক্ষত্রটি পৃথিবী থেকে ১.৬ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে।
নাসার স্পেশ টেলিস্কোপে যে ছবি ধরা পড়েছে সেখানে আয়নার একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। এই বিশেষ পদ্ধতির আয়নাকে বলা হয় ফাইন ফেজিং। নাসার বিজ্ঞানীরা এই প্রসঙ্গে বলছেন, জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপে ১৮টি ষড়ভুজাকার আয়না ছিল। এই ১৮টি আয়না এমনভাহবে মিলিত হয়েছে যেটা দেখে মনে হচ্ছে একটি বিশলাকৃতি আয়না এটি। বলা বাহুল্য, এই ১৮টি ষড়ভুজাকার আয়নাকে একত্রিত করে একটি আয়নার রূপ দেওয়া মোটেই সহজ কাজ ছিল না। এই আয়নার সাহায্যেই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অনেক দূরবর্তী স্থানে থাকা নক্ষত্রের ছবিও প্রকাশ করা সম্ভব হবে। ছোট ছোট আয়না যুক্ত করে যে বিশালাকৃতি আয়না তৈরি করার পদ্ধতি তাকেই বিজ্ঞানীরা ফাইন ফেজিং বলে অভিনীত করেছেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন একটা গুরুত্বপূর্ণ ধাপ উতরানো সম্ভব হল। এবার পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য তৈরি হতে হবে যেটা নিঃসন্দেহে আরও কঠিন ও ব্যায় বহুল হবে।
আরও পড়ুন-সমুদ্রে বাড়ছে বিপদ - ২০৫০-এর মধ্যেই মহা-বিপর্যয়, ডুবে যাবে এই শহরগুলি
আরও পড়ুন-হাতের মুঠোয় লাল-গ্রহ - পৃথিবী থেকে মাত্র ৪৫ দিনেই মঙ্গলে, তাক লাগানো দাবি কানাডার
আরও পড়ুন-পৃথিবী কি ধ্বংসের মুখে, ধেয়ে আসছে বিশালাকার তিনটি গ্রহাণু
মিল্কি ছায়াপথে এইচডি ৮৪৪০৬ নক্ষত্রটি নাসার স্পেস টেলিস্কোপে একটি উজ্জ্বল তারার মত ধরা পড়েছে। নাসার বিজ্ঞানীরা এই প্রসঙ্গে মত প্রকাশ করে বলেছেন, এই তারাটির কোনও বিশেষ বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য নেই। শুধুমাত্র সে তার নিজস্ব জায়গায় জ্বলজ্বল করছে মাত্র। নাসা তাদের বিবৃতিতে আরও জানিয়েছে যে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের সমস্ত অপটিকাল প্যারামিটার একদম সঠিকভাবে কাজ করছে। কোনও গুরুতর সমস্যা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই স্পেস টেলিস্কোপ থেকে তোলা ছবির যে শুধু সৌন্দর্যই রয়েছে তা নয়, গোটা ছবি জুড়ে যে ছোট ছোট দাগ রয়েছে সেটি এই ছবিকে আরও সুন্দর করে তুলেছে। সঙ্গে দোসর বিভিন্ন রঙের দাগ। এই দাগগুলো আসলে ছায়াপতের দূরত্ব বোঝাচ্ছে। এটিকে ডিপ ফিল্ড (deep field) বলে অভিহিত করা হয়।
গত বছর ক্রিসমাসের সময় লঞ্চ করা হয়েছিল জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। আর এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হয়েছিল আয়না সারিবদ্ধ করার কাজ।`জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের বিজ্ঞানী জেনে রিগবে এই পুরো অপারেশনের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, এবার থেকে স্পেশ টেলিস্কোপের ভবিষ্যত যাত্রা শুরু হল। সেই সঙ্গে তিনি বলেন,যেটা সাধারণ মানুষ দেখতে পায় সেটা হল ডিপ ফিল্ড। জেনে রিগবে বলেন, মাথার ঘাম পায়ে ফেলা শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছে। শেষ পর্যন্ত কয়েক কোটি বছর আগের আলো দেখার সুযোগ হল।