সামনে আসল আগ্নেয়গিরিতে বিস্ফোরণের পর টোঙ্গার (Tonga) উপগ্রহ ছবি। বিরাট অংশ আগ্নেয়গিরির (Volcano) ধূসর ছাইয়ে ঢেকে গিয়েছে অথবা সুনামিতে (Tsunami) ক্ষতিগ্রস্ত।
অগ্নুৎপাতের তিন দিন পরও, বহির্বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র টোঙ্গা (Tonga)। বিপর্যস্ত যোগাযোগ। নজরদারি উড়ান এবং স্যাটেলাইট ছবি থেকে দুর্যোগের মাত্রা কিছুটা হলেও বোঝা যাচ্ছে। আর তাতে দেখা যাচ্ছে, ডুবো আগ্নেয়গিরিটি ব্যাপক অগ্নুৎপাতে এবং তার পর সুনামির প্রকোপে সমুদ্রের বুকে প্রায় অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত নতুন চিত্রগুলিতে দেখা যাচ্ছে টোঙ্গারও বিরাট অংশ আগ্নেয়গিরির ধূসর ছাইয়ে ঢেকে গিয়েছে অথবা সুনামিতে ক্ষতিগ্রস্ত।
শনিবার, টোঙ্গার কাছের এক ডুবো আগ্নেয়গিরিতে বিরাট অগ্নুৎপাত ঘটেছিল। প্রায় ১৯ মাইল বা ৩০ কিলোমিটার উচ্চতায় বিস্ফোরিত হয়েছিল লাভা। প্রশান্ত মহাসাগরের একটি বিশাল অঞ্চল জুড়ে ছাই, গ্যাস এবং অ্যাসিডের বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। টোঙ্গা পুলিশকে উদ্ধৃত করে নিউজিল্যান্ড এখনও পর্যন্ত দুই জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। তবে প্রকৃত মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অগ্নুৎপাত ও সুনামির ঠিক আগে টোঙ্গার অপূর্ব সৈকতগুলিতে পর্যটকদের ভিড় দেখা গিয়েছিল।
জানা গিয়েছে, বিপর্যয়ের পর বিদ্যুৎ এবং স্থানীয় ফোন যোগাযোগ আংশিকভাবে পুনরুদ্ধার করা গিয়েছে। তবে, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ এখনও বিচ্ছিন্ন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization) অবশ্য এদিন জানিয়েছে, টোঙ্গায় তাদের লিয়াজোঁ অফিসার রাষ্ট্রসংঘে এবং টোঙ্গান সরকারের মধ্যে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে। হু-এর পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছে, টোঙ্গার প্রধান দ্বীপ টোঙ্গাটাপুতে প্রায় ১০০ টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং আরও ৫০ টির মতো পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে।
টোঙ্গাটাপুতে প্রায় দুই সেন্টিমিটার পুরু ছাই এবং ধুলোর আস্তরণ জমা হয়েছে। বায়ু দূষণ এবং খাদ্য ও পানীয় জলের দূষণ উদ্বেগ তৈরি করেছে। হু-এর পক্ষ থেকে সেখানকার বাসিন্দাদের যতটা সম্ভব বাড়ির ভিতরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করতে এবং বোতলজাত জল পান করতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার, টোঙ্গার বর্তমান উপগ্রহ চিত্র প্রকাশ করা হয়েছে। কয়েকদিন আগে যেখানে আগ্নেয়গিরিটির একটা বড় অংশ সমুদ্রপৃষ্ঠের উপরে উঠেছিল, সেখানে এখন কেবল সমুদ্র দেখা যাচ্ছে। আগ্নেয়গিরির দ্বীপটি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। ২০১৪ সালের আগে পর্যন্ত অবশ্য পুরোপুরি সমুদ্রের নিচেই ছিল 'হুঙ্গা টোঙ্গা-হুঙ্গা হাপাই' আগ্নেয়গিরিটি। ২০১৪-য় বড় মাপের অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ওই নতুন দ্বীপটি তৈরি হয়েছিল। ইতিমধ্যেই সেখানে ফুল, গাছপালা, পশু-পাখিদের আবাসস্থল গড়ে উঠেছিল। তবে এখন তা একেবারে নিশ্চিহ্ন। অগ্ন্যুৎপাতের পরে শুধুমাত্র দুটি অপেক্ষাকৃত ছোট আগ্নেয়গিরি দ্বীপ এখনও সমুদ্রপৃষ্ঠের উপরে দৃশ্যমান।
শনিবারের অগ্ন্যুৎপাত কয়েক দশকের মধ্যে সারা বিশ্বে রেকর্ড করা সবথেকে বড় অগ্নুৎপাতের ঘটনা ছিল। তার শব্দ আলাস্কা পর্যন্ত শোনা গিয়েছিল। জাপান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলরেখা প্লাবিত করে সুনামি তৈরি করেছিল। লাভা বিস্ফোরণে টোঙ্গা এবং ফিজির মধ্যে একটি সমুদ্রের নিচের যোগাযোগের তার বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। যেটি মেরামত করতে সপ্তাহ দুয়েক সময় লাগবে। তার আগে আন্তর্জাতিক জগতের সঙ্গে স্যাটেলাইট ফোন ছাড়া কোনও যোগাযোগের উপায় নেই টোঙ্গাবাসীর।