মার্কিন মুলুকে করোনা সবচেয়ে বেশি থাবা বসিয়েছে নিউইয়র্কে। এখানে ইতিমধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লক্ষ ৫৬ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। এর মধ্যেই চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে এই অঞ্চলে
প্রদাহজনিত জটিলতায় ৩ শিশুর মৃত্যু। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই উপসর্গ করোনা ভাইরাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। রাজ্যের গভর্নর অ্যান্ড্রিও কিয়োমো নতুন উপসর্গটি নিয়ে জনগণকে সতর্ক করেছেন। বলেছেন, এটি করোনা ভাইরাসের সম্পূর্ণ নতুন এক অধ্যায়।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল, কভিড-১৯ শিশুদের জন্য তুলনামূলক কম ঝুঁকিপূর্ণ। গড়পড়তায় বিশ্বজুড়ে শিশুদের মধ্যে এই রোগে মৃত্যুহার কম। কিন্তু নিউইয়র্ক শহরে বিরল উপসর্গ নিয়ে একের পর এক শিশুর মৃত্যু নতুন করে আতঙ্ক তৈরি করেছে। নিউইয়র্কে প্রদাহজনক জটিলতায় প্রথম শিশুর মৃত্যু হয় গত শুক্রবার। মৃত ৩ শিশুর মধ্যে ৫ বছর বয়সী একটি শিশুও আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলো দাবি করেছে।
করোনা আক্রান্ত ইউরোপে পথ দেখাল এই দেশ, মহামারীর সমাপ্তি ঘোষণা করল স্লোভেনিয়া
হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন পাঠিয়েছিলেন মোদী, ভেন্টিলেটর দিয়ে এবার ঋণ শোধ করছেন ট্রাম্প
করোনার আঁতুরঘর চিনকে এবার পেছনে ফেলে দিল ভারত, বিশ্বের ক্রম তালিকায় উঠে এল ১১ নম্বরে
নিউইয়র্কের স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত এই অঞ্চলে গত ১১০টি শিশুর অসুস্থ হয়ে পড়ার তথ্য রয়েছে। এই শিশুরা বৈদ্যুতিক শক খাওয়ার মতো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। তাদের মধ্যে কাওয়াসাকি রোগের মতো উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রিও কিয়োমো বলেন, ওই শিশুদের হাসপাতালে ভর্তি করার সময় অনেকের মধ্যেই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। তবে তাদের প্রত্যেকের দেহেই করোনাভাইরাস বা এর অ্যান্টিবডির উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। অর্থাৎ, তারা প্রত্যেকেই করোনা ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছে।
এর আগে ইউরোপে একইরকম উপসর্গ নিয়ে শিশুদের মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। বৃটেনে ১৪ বছর বয়সী এক শিশু একইরকম উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে। এছাড়া, ইউরোপের অন্যান্য দেশেও শিশুদের মৃত্যু হয়েছে একই রকম ভাবে। ইউরোপীয় বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সেখানে শিশুদের মধ্যে পেটে ব্যথা, গ্যাসজনিত সমস্যা, কার্ডিয়াক প্রদাহ দেখা গেছে।
গত এপ্রিলে ব্রিটিশ চিকিৎসকদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছিল, শিশুদের মধ্যে বিরল ও বিপজ্জনক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে বলে। এরপর লন্ডনে আটজন শিশু অসুস্থ হয়, যাদের মধ্যে ১৪ বছর বয়স্ক একজন মারাও যায়। এই শিশুরা সবাই একই ধরনের উপসর্গ নিয়ে লন্ডনের এভেলিনা চিলড্রেনস হাসপাতালে ভর্তি হয়। এদের সকলেরই খুব বেশি জ্বর, র্যাশ, লাল চোখ, শরীর ফুলে যাওয়া এবং ব্যথার উপসর্গ ছিল। তাদের বেশিরভাগেরই ফুসফুস বা শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা ছিল না। তারপরেও এদের মধ্যে সাতজনকে ভেন্টিলেটরে দিতে হয় তাদের হৃদযন্ত্র এবং রক্ত সঞ্চালন সমস্যায় সাহায্য করার জন্য।
চিকিৎসকরা এটাকে বর্ণনা করছেন ‘সংক্রমণের নতুন একটা ধারা’ বলে যার সঙ্গে মিল আছে কাওয়াসাকি শক সিনড্রমের। এই প্রতিক্রিয়া একটা বিরল রোগ উপসর্গ, যা প্রধানত দেখা যায় পাঁচ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে। এই সব উপসর্গের মধ্যে রয়েছে র্যাশ, ঘাড়ের গ্রন্থিগুলো ফুলে ওঠা এবং ঠোঁট শুষ্ক হয়ে ফেটে যাওয়া। তবে নতুন এই উপসর্গ দেখা গেছে শিশু থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত বয়সীদের ক্ষেত্রেও। এদের মধ্যে অনেকের কঠিন জটিলতা তৈরি হয়েছে।
লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজের শিশুরোগ প্রতিরোধ বিষয়ক বিভাগের অধ্যাপক ড. লিজ হুইটেকার বলছেন, করোনা মহামারির মধ্যে শিশুদের মধ্যে এই উপসর্গ দেখা দেয়ার কারণে তারা মনে করছেন করোনাভাইরাসের সঙ্গে এর সংযোগ রয়েছে। শিশু রোগ ও শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ক রয়্যাল কলেজের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক রাসেল ভাইনার বলেন, যেসব শিশু এ রোগের শিকার হয়েছে, তাদের বেশিরভাগই চিকিৎসায় সাড়া দিয়েছে এবং তারা ভালো হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে শুরু করেছে। শিশুদের মধ্যে একই ধরনের উপসর্গ দেখো গেছে আমেরিকা ও ব্রিটেন ছাড়াও স্পেন, ইতালি, ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডে।
এদিকে শিশুদের মধ্যে দেখা দেওয়া এই বিরল রোগের সঙ্গে করোনাভাইরাসের যোগ থাকতে পারে বলে আশঙ্ক করছে বিশ্বা স্বাস্থ্য সংস্থা 'হু'-ও। তাই নতুন করোনাভাইরাসের সঙ্গে এই উপসর্গগুলোর যোগ পাওয়া গেলে, কোভিড-১৯ শিশুদের জন্য তেমন মারাত্মক নয় বলে এতদিন যে ধারণা ছিল তা প্রশ্নের মুখে পড়ে যাবে।