আইপিএল প্রতারণায় ফের নাম জড়াল কলকাতার, এনভিডি সোলারের খোঁজে এবার মার্কিন অপরাধ দমন শাখা

  • ফের আলোচনায় কলকাতার এক চিটফান্ড সংস্থা
  • আর আইপিএল চলার সময়েই সেই নাম সমক্ষে এল
  • এনভিডি সোলার নামে এই সংস্থা এখন আমেরিকার নজরদারিতে
  • ইতিমধ্যেই এনভিডি সোলার নিয়ে মামলাও উঠেছে কলকাতা হাইকোর্টে
     

Sudip Paul | Published : Sep 21, 2020 1:58 PM IST / Updated: Sep 21 2020, 07:59 PM IST

এই মুহূর্তে-র সবচেয়ে বড় বড় ব্রেকিং নিউজ। আইপিএল প্রতারণায় ফের জড়িয়ে গেল কলকাতার নাম। আর এমন একটা সময়ে এই নাম জড়াল যখন আইপিএল ২০২০ অনুষ্ঠিত হচ্ছে মরুদেশে। কিছু তথ্যের ভিত্তিতে সর্বভারতীয় ইংরাজি সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বিশ্বজুড়ে এক অন্তর্তদন্ত চালায়, আর তাতেই সামনে আসে প্রতারণার আরও বিস্তারিত তথ্য। জানা যায় কীভাবে আরও এক আন্তর্জাতিক প্রতারণার জাল বিস্তার করেছিল এনভিডি সোলার। যার জাল শুধু কলকাতা বা ভারতবর্ষের অন্যত্র নয়- লন্ডন থেকে আমেরিকা পর্যন্ত ছড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু, এই প্রতারণার জালে এবার আরও হাল খারাপ হতে চলেছে এনভিডি সোলারের। কারণ তাদের উপরে এখন নজরদারি শুরু করেছে মার্কিন অপরাধ দমন শাখা ফিনসেন বা ফিনান্সিয়াল ক্রাইমস এনফোর্সমেন্ট নেটওয়ার্ক। এনভিডি সোলারের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে আইপিএল-এর দল  কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ, ১৪.৩ কোটি টাকার স্পনসরশিপ মানি দেওয়ার কথা ছিল এনভিডি সোলারের। কিন্তু, কিংস ইলেভেন পঞ্জাবকে মাত্র ৪২ লক্ষ টাকা দিয়ে বেপাত্তা হয়ে যায় এনভিডি সোলার। 

আরও পড়ুন- আইপিএলের স্বপ্নসুন্দরী চিয়ারলিডার, করোনা এবার কাড়ল সেই গ্ল্যামার, জেনে নিন চিয়ারলিডার্সদের নিয়ে ১০টি তথ্য

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের করা অন্তর্দন্ত রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকোর ওয়েলস ফার্গো নামে একটি ব্যাঙ্ক সার বা সাসপিয়াস অ্যাক্টিভিটি রিপোর্ট দায়ের করে। এরপর এই সার নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে আর্থিক লেনদনের অপরাধ নিয়ে তদন্ত করা সংস্থা ফিনসেন। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের কাছে এই নিয়ে তথ্য আসার পর তারা বিস্তারিতভাবে অন্তর্দন্ত শুরু করে। জানা যাচ্ছে, সান ফ্রান্সিসকোর ওয়েলস ফার্গো ব্যাঙ্কে একটি এসবিএলসি বা স্ট্যান্ডবাই লেটার অফ ক্রেডিট আসে। যার মূল্য ছিল ২,৯৭৫,৪৬০ ডলার। ওয়েলস ফার্গো ব্যাঙ্ক জানতে পারে এই এসএলবিসি রিকোয়েস্ট এসেছে লন্ডনের ডেচার্স ব্যাঙ্ক থেকে। প্রায় ৩ মিলিয়ন ডলারের এই এসএলবিসি-তে প্রেরকের নাম হিসাবে ছিল লন্ডনের এরোকম ইউকে লিমিটেড নামে একটি সংস্থার। এই এরোকেম ইউকে লিমিটেড নামে সংস্থাটি এয়ার টিউব তৈরি করে। এসএলবিসি-তে বেনিফিসিয়ারি হিসাবে নাম ছিল কেপিএইচ ড্রিম ক্রিকেটের। এই সংস্থাই একটা সময় কিং ইলেভেন পঞ্জাব টিমের মালিক ছিল এবং এনভিডি সোলারের কাছে তাদের স্পনসরশিপ বাবদ কয়েক কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এসএলবিসি-তে ওয়ারেন্টর হিসাবে নাম ছিল এনভিডি সোলারের। বলা হয়েছিল এই অর্থ যদি এরোকম ইউকে লিমিটেড ওয়েলস ফার্গো ব্যাঙ্ককে মেটাতে ব্যর্থ হয় তাহলে বাংলাদেশের ঢাকায় থাকা এনভিডি সোলার দপ্তর তা মিটিয়ে দেবে। কিন্তু, আইপিএল বা তার স্পনসরশিপ অথবা কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের সঙ্গেও এরোকম ইউকে লিমিটেডের কোনও সম্পর্কই ছিল না। তাহলে এরোকম হঠাৎ করে কেন কেপিএইচ ড্রিম ক্রিকেট-কে অর্থ দিতে যাবে? বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। আর এসএলবিসি-র মানেই হল ওয়েলস ফার্গোকে এই অর্থ কেপিএইচ ড্রিম ক্রিকেটের অ্যাকাউন্টে জমা করতে বলা হচ্ছে।  

বিষয়টি নিয়ে খটকা লাগে ওয়েলস ফার্গো ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষেরও। এই ধরনের এসএলবিসি বা স্ট্যান্ডবাই লেটার অফ ক্রেডিট-এর জন্য ব্যাঙ্কের ঊদ্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনও কর্তার মঞ্জুরি লাগে। এর জন্য ওয়েলস ফার্গো ব্যাঙ্ক-ও এক অন্তর্দন্ত শুরু করে। তাদের এসএলবিসি ইউনিট এই লেনদেনে বেশকিছু ফাঁক খুঁজে বের করে। দেখা যায় কোনওভাবে ব্যাঙ্কের কোনও কর্তার সই জাল করে এবং নকল ইলেক্ট্রনিক্স ট্রান্সাকশন স্লিপ বানিয়ে তা এসএলবিসি হিসাবে দেওয়া হয়েছে। এর অর্থ ওয়েলস ফার্গো ব্যাঙ্ক কোনওভাবেই প্রায় ৩ মিলিয়ন অর্থ কেপিএইচ ড্রিম ক্রিকেটে-র অ্যাকাউন্টে জমা করলে তারা প্রতারণার শিকার হত। কারণ, ডেচার্স ব্যাঙ্ক, লন্ডনের থেকে যে এসএলবিসি রিকোয়েস্ট এরোকম ইউকে লিমিটেড পাঠিয়েছিল তা পুরোপুরি জাল ছিল বলে ওয়েল ফার্গো ব্যাঙ্কের অন্তর্দন্তে ধরা পড়ে। এই অন্তর্তদন্তে আরও দেখা যায় কেপিএইচ ড্রিম ক্রিকেট, এরোকম ইউকে এবং এনভিডি সোলার-এর নাম তাদের ব্যাঙ্কের ক্লায়েন্ট হিসাবে নথিভুক্ত রয়েছে।  

আরও পড়ুন- বিরাট,রোহিত না ধোনি, আইপিএলে সব থেকে বেশি ছয় মেরেছেন কোন ব্যাটসম্যান, দেখে নিন তালিকা

বিষয়টি নিয়ে এরোকম ইউকে লিমিটেডের সঙ্গে যোগাযোগেরও চেষ্টা করে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সংস্থার কর্ণধার জন হিউগস কোনও সাড়া দেননি বলেই তারা জানিয়েছে। ২০১৯ সালের অগাস্ট মাসে কলকাতা হাইকোর্ট একটি অর্ডারে এনভিডি সোলার-এর বোর্ড অফ ডিরক্টরস-কে নিখোঁজ বলে ঘোষণা করে। 

২০০৩ সালে কলকাতায় জন্ম হয় এনভিডি সোলার সংস্থার। পরে ২০১২ সালে তারা বাংলাদেশেও তাদের কার্যকলাপ চালু করে। ২০১৫ সালে সেবি থেকে নির্দেশ দেওয়া হয় এনভিডি সোলারের সমস্ত অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করার জন্য। কারণ, এনভিডি সোলার-কে ১ হাজার টাকা বাজারে ফেরাতে হত। অভিযোগ এই ১ হাজার টাকার মধ্যে তারা ৫৯৪ কোটি টাকা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আমানত হিসাবে সংগ্রহ করেছিল।  

আরও পড়ুন- '৬০ বল দিন, ডবল সেঞ্চুরি মারবে আন্দ্রে রাসেল'

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের রিপোর্ট অনুযায়ী, কেপিএইচ ড্রিম ক্রিকেট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এখনও এনভিডি সোলারের কাছে স্পনসরশিপের অর্থ পায়। ২০১৩ সালে পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, কেপিএইচ ড্রিম ক্রিকেটের কর্ণধার নেস ওয়াদিয়া জানিয়েছিলেন, এনভিডি সোলার মোট ১৪.৩ কোটা টাকার স্পনসরশিপের চুক্তি করেছিল। এরমধ্যে মাত্র ৪২ লক্ষ টাকা তারা দিয়েছিল। এনভিডি সোলার ডেচার্স ব্যাঙ্ক লন্ডন, ওয়েলস ফার্গো ব্যাঙ্ক নিউ ইয়র্ক, কমন সুইস ব্যাঙ্ক লিমিটেড-এর একাধিক ফেক অ্যাকাউন্ট নম্বর কেপিএইচ ড্রিম ক্রিকেট-কে দিয়েছিল। এমনকী এইসব ফেক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে সঙ্গে বেশকিছু  ব্যাঙ্ক অফিসিয়াল-এর নাম ও নম্বর দিয়েছিল। পরে দেখা যায় এগুলো সবই ফেক। এমনকী, এনভিডি সোলার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণের জন্য বেশকিছু ইমেলও পাঠিয়েছিল। পরে দেখা যায় তা ফেক আইপি অ্যাড্রেস থেকে পাঠানো হয়েছে। 

জানা গিয়েছে, ওয়েলস ফার্গো ব্যাঙ্ক আপাতত তাদের দায়ের করা সার-এর তদন্তের রিপোর্টের প্রতিক্ষায় রয়েছে। মার্কিন আর্থিক অপরাধ দমন শাখা ফিনসেন কী রিপোর্ট দিচ্ছে সেদিকে তাকিয়ে তারা। 

Share this article
click me!