শুরু ২০০৮ সালে। দেখতে দেখতে এক যুগ পেরিয়ে গিয়েছে আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা সংস্করণ আইপিএলের। ১২ পেরিয়ে আগামি ২৯ মার্চ থেকে শুরু হতে চলেছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ১৩ তম সমস্করণ। নয়া মরসুমে ঘিরে চড়তে শুরু করেছে উত্তেজনা ও উন্মাদনার পারদ। তার আগে দেখে নেওয়া আইপিএলের ইতিহাস এক ঝলকে।
আইপিএল-এর জন্মকথা
ক্রিকেটকে আরও আধুনিক, আরও ফাস্ট, আরও আকর্ষণীয় ও আরও 'নেল বাইটিং' করতে ২০০৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর আইপিএল অর্থাৎ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ঘোষণা করে বিসিসিআই। ফ্র্যাঞ্চাইজি নির্ভর এই ক্রিকেট লিগের শুরু হয় ২০০৮ সালে এপ্রিল মাসে। আইপিএলের প্রতিষ্ঠাতা ধরা হয় বিসিসিআইয়ের তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট ললিত মোদীকে। সেই সময় আইপিএলের দায়িত্বভারও সামলেছিলেন তিনি। আইপিএলই প্রথম ক্রিকেট বিশ্বে ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক লিগের সূচনা করে।
আইপিএল নিলাাম
এই প্রথম কোনও ক্রিকেট লিগে নিলামের মাধ্যমে প্লেয়ার কেনার ব্যবস্থা করা হয়। প্রত্যেকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি দলকে একটি নির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দ করে দেওয়া হয় আইপিএল গভর্নিং বডির তরফ থেকে। সেই অর্থ থেকেই হিসেব ও দলের প্রয়োজন মত দেশি-বিদেশী প্লেয়ার কেনেন ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তারা। বোর্ডের তরফ থেকে একটি জমকালো নিলামের আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত থাকেন ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলির কর্তারা। অনেক হিসেব নিকেশ করেই দিনভর চলে প্লেয়ার কেনা।
আরও পড়ুনঃটোকিও অলিম্পিকে যোগ্যতা অর্জন করলেন মেরি কম, শুভেচ্ছা কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রীর
আইপিএলের আইকন প্লেয়ার ভাবনা
আইকন প্লেয়ারের ভাবনাটিও যে কোনও ক্রিকেট লিগে প্রথম আনা হয়। আইপিএলের প্রথম মরসুমে আইকন প্লেয়ার ছিল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের পাঁচ খেলোয়াড়কে দেওয়া একটি স্ট্যাটাস। ২০০৮ সালে প্রথম আইপিএলে আইকন প্লেয়ারদের তালিকায় ছিলেন সচিন তেণ্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রাহুল দ্রাবিড়, অনিল কুম্বলে ও ভিভিএস লক্ষ্মণ। আইকন প্লেয়াদের নিলামের বাইরে রাখা হয় ও আগে থেকেই তাদের নির্দিষ্ট দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী নিলামে কেনা ওই ফ্র্যাঞ্চাইজির সব থেকে দামি প্লেয়ারের থেকে ১৫ শতাংশ বেশি অর্থ পেয়েছিলে আইকন প্লেয়াররা।
আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি
আইপিএলকে অনেক বেশি পেশাদারি করতে ফ্র্যাঞ্চাইজি ভাবনা নিয়ে আসা হয়। যা এর এগে বিশ্বে কোনও ক্রিকেট টুর্নামেন্টে করা হয়। একটি প্রাইভেট সংস্থা শহর ভিত্তিক দলের দায়িত্ব নেয়। সম্পূর্ণ বেসরকারি কোম্পানির আদব কায়দায় চলে দল গঠন থেকে শুরু করে সব ধরনের অফিসিয়াল কাজ। নিজের কেনা দলের পেছনে লগ্নি, প্লেয়ার প্রতি খরচ থেকে শুরু করে সব দায়িত্ব নিতে হয় ফ্যাঞ্চাইজিদের। সেখান থেকে লাভ তুলে আনার দায়িত্বও ফ্র্যাঞ্চাইজিদের।
আরও পড়ুনঃহোলিতে রঙিন ক্রিকেটাররা, সোশাল মিডিয়ায় সকলকে শুভেচ্ছা বার্তা সচিন, বিরাট, গব্বরদের
আইপিএলের প্রথম সেঞ্চুরি
প্রতিযোগিতার প্রথম সেঞ্চুরির জন্য বেশি সময় অপক্ষা করতে হয়নি দর্শক থেকে শুরু করে প্লেয়ার, ফ্র্যাঞ্চাইজি ও আইপএলের গভর্নিং কাউন্সিলের। কেকেআর বনাম বেঙ্গালুরুর প্রথম ম্যাচেই কলকাতার হয়ে বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন ব্র্যান্ডন ম্যাকালাম। ১৫৮ রানের সেই ইনিং আজও চোখে ভাসে সকলের। প্রথম ম্যাচেই ম্যাকালাম বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ক্রিকেটের নবপ্রজন্মের সূচনা হতে চলেছে আইপিএলের হাত ধরে।
আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজির সংখ্যা বৃদ্ধি
আইপিএলের প্রথম মরসুমে ৮টি দল অর্থাৎ ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে শুরু হয়ে প্রতিযোগিতা। যদিও টুর্নামেন্টের জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে দল বাড়ানোর চিন্তাভাবনাও শুরু করে আইপিএলের গভর্নিং বডি। ২০১১ সালে সালে সর্বাধিক ১০টি দল খেলে প্রতিযোগিতায়। ২০১২ ও ২০১৩ সালে খেলে ৯টি করে দল। যদিও তারপর আটটির বেশি দল না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
চিয়ার লিডার
ক্রিকেটকে অনেক বেশি উপভোগ্য করতে ও বিনোদনের মশলা বাড়াতে আইপিএলেই প্রথম চিয়ার লিডার রাখার ভাবনা গ্রহণ করা হয়। দুটি দলের আলাদা আলাদা চিয়ার লিডার রাখা হয়। ব্যাটিংয়ে চার-ছয় হোক আর বোলিংয়ের সময় উইকেট, নিজের দলের সাফল্য অনুযায়ী দলকে ও সমর্থকদের উৎসাহ দেন এই সকল চিয়ার লিডাররা। ডিজে তালে নেচে গোটা মাঠকে মাতিয়ে রাখেন তারা। আধুনিক ক্রিকেটে নতুন মাত্রা যোগ করে এই চিয়ার লিডার ভাবনা।
আরও পড়ুনঃকরোনা আতঙ্কের জের, ভারত সফরে হাত মেলাবেন না প্রোটিয়া ক্রিকেটাররা
আইপিএল চ্যাম্পিয়ন
এখনও পর্যন্ত আইপিএলের ১২টি মরসুম খেলা হয়েছে। প্রথম মরসুমে চ্যাম্পিয়ন হয় রাজস্থান রয়্যালস। এছাড়া সব থেকে বেশিবার আইপিএল শিরোপা ঘরে তুলেছে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ৪ বার। ২০১৯ সালের শেষ আইপিএলের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নও মুম্বই। সর্বাধিক চ্যাম্পিয়ন হবার তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চেন্নাই সুপার কিংস। তিন-তিনবার ট্রফি জিতেছে চেন্নাই। কলকাতা নাইট রাইডার্স ও হায়দরাবাদ দু'বার করে আইপিএল সেরা হয়েছে।
ফিক্সিং কাণ্ড
ফিক্সিংয়ের কালো ছায়া থেকে বাদ যায়নি আইপিএল। ২০১৩ সালে স্পট ফিক্সিং কাণ্ডে নাম জড়ায় রাজস্থান ব়য়্যালস-এর ৩ ক্রিকেটার শ্রীসন্থ, অজিত চান্ডিলা ও অঙ্কিত চৌহানের। তিন ক্রিকেটারকে গ্রেফতারও করে পুলিস। নির্বাসিত করা হয় তাদের। রাজস্থানের মালিক রাজ কুন্দ্রার নামও বেটিং বিতর্কে জড়িয়ে যায়। বুকিদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার অপরাধে পরবর্তীতে বিন্দু দারা সিং এবং চেন্নাই দলের মালিক শ্রীনিবাসনের জামাই গুরুনাথ মইয়াপ্পনকে গ্রেফতার করে মুম্বই পুলিশ। পাকিস্তানি আম্পায়ার আসাদ রউফের নামও বেটিং বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার জেরে রাজস্থান রয়্যালস এবং চেন্নাই সুপার কিংস এই দুই দলকেই দু’বছরের জন্য নির্বাসিত করা হয়।