দেবলিনা তাঁর ভাইরাল অডিও ক্লিপে আরও জানাচ্ছেন যে, ফোনের অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তি নিজেকে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এসবিআই শাখার কর্মী বলে পরিচয় দেন। ওই ব্যক্তি ভাঙা বাংলা এবং পরিস্কার হিন্দিতে কথা বলছিলেন বলে দেবলিনা জানিয়েছেন।
তারা এল। বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণ করল (Online Bank Fraud)। আর পরিণামে মুহূর্তে মধ্যে দু'দুটি অ্যাকাউন্ট থেকে লুঠ করে নিল প্রায় ৫ লক্ষ টাকা (Female Professor is Cheated With Near About 5 Lakhs by Online Bank Fraud)। বলতে গেলে কয়েক মিনিটে নিঃস্ব হয়ে গেলেন এক অধ্যাপিকা। সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে এই অধ্যাপিকার একটি অডিও ক্লিপ (Viral Audio Clip of a Professor)। যেখানে নিজের জীবনের এই ভয়াবহ অসহায়তাকে তুলে ধরেছেন দেবলিনা নামে এই অধ্যাপিকা। তবে এই অডিও ক্লিপের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি এশিয়ানেট নিউজ বাংলা। কবে এই অডিও ক্লিপটি তৈরি করা হয়েছে সে বিষয়েও কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, অডিও ক্লিপে ১২ জানুয়ারির কথা বলা হচ্ছে (12 January)। সেখান থেকে মনে করা হচ্ছে অডিও ক্লিপটি এই বছরেরই ১২ জানুয়ারির পরে তৈরি করা হয়েছে এবং ঘটনাটি ঘটেছে ১২ জানুয়ারি।
অডিও ক্লিপ থেকে জানা গিয়েছে ওই অধ্যাপিকার নাম দেবলিনা। তিনি রবীন্দ্রভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে (Rabindrabharati University) কর্মরত। তাঁর বাড়ি বেহালা (Behala) এলাকায়। সখের বাজারে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (SBI, Sakher Bazar) শাখায় দেবলিনার একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। অডিও বার্তায় দেবলিনা জানিয়েছেন, ১২ জানুয়ারি বিকেল ৫.০৫ মিনিটে তাঁর মোবাইলে একটি মেসেজ আসে জেডিএসবিআইআইএনডি-৬৫ থেকে। তিনি কাজ করছিলেন বলে মেসেজে তেমন মনোযোগ দেননি। বাড়িতে সে সময় তিনি এবং তাঁর ৮৪ বছরের বৃদ্ধা মা ছাড়া আর কেউ ছিল না। দেবলিনার কথায় মেসেজ আসার পাঁচ মিনিটের মধ্যে তাঁর ফোন নম্বরে একটি ফোন আসে।
দেবলিনা তাঁর ভাইরাল অডিও ক্লিপে আরও জানাচ্ছেন যে, ফোনের অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তি নিজেকে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী বলে পরিচয় দেন। ওই ব্যক্তি ভাঙা বাংলা এবং পরিস্কার হিন্দিতে কথা বলছিলেন বলে দেবলিনা জানিয়েছেন। রবীন্দ্রভারতীর এসবিআই শাখার কর্মী বলে পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি জানান যে রবীন্দ্রভারতীর ফিনান্স অফিসার দেবদত্তবাবুর সঙ্গে কথা বলে নিয়ে তিনি ফোন করছেন। কিছু কেআইসি জনিত সমস্যা দেখা দিয়েছে, সেটাকে অবিলম্বে সমাধান করতে হবে।
প্রয়োজনে দেবলিনা যে দেবদত্ত-র সঙ্গে কথা বলে নিতে পারেন- সে কথাও বলেন ওই ব্যাঙ্ক কর্মী। দেবলিনার প্রাথমিক সন্দেহ হওয়ায় তিনি দেবদত্ত-র ফোন নম্বরটা চান। দেবলিনা জানিয়েছেন ওই ব্যাঙ্ক কর্মী দেবদত্ত-র যে নম্বরটা দেন তা সত্যি সত্যি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের। ফলে খানিকটা হলেও ব্যাঙ্ক কর্মীর কথায় তাঁর ভরসা জাগে। ফোনে ব্যাঙ্ক কর্মী পরিচয় দিয়ে কথা বলা ব্যক্তি দেবলিনাকে জানিয়েছিলেন যে রবীন্দ্রভারতীর এসবিআই শাখা থেকেই অনলাইনে সখের বাজারে এসবিআই শাখাকে তিনি কানেক্ট করে নিয়ে কেআইসি সমস্যার সমাধান করবেন যাতে মাইনে নিয়ে কোনও সমস্যা না হয়। দেবলিনা জানিয়েছেন ওই ব্যক্তি বিকাশ মৃধা এবং শ্রাবণী পাল নামে দুই সহকর্মীর নামও নেন। ওই ব্যক্তি জানিয়েছিল যে বিকাশ এবং শ্রাবণীও একইভাবে তাঁদের কেআইসি সমস্যার সমাধান করেছেন। এত ধরনের চেনাজানা লোকেদের নাম নেওয়ায় এবং রবীন্দ্রভারতী থেকে বলায় খানিকটা আস্থা পেয়েছিলেন দেবলিনা। তিনি এরপর ওই ব্যক্তির কথা মতো ফোনে আসা একটি লিঙ্কে ক্লিক করেন।
অডিও ক্লিপে দেবলিনা জানাচ্ছেন, এরপর তাঁর মোবাইল ফোনের স্ক্রিনটা সমানে কাঁপতে থাকে এবং কখনও হলুদ, কখনও সবুজ, কালো-লাল রঙে পরিবর্তন হতে থাকে। ইতিমধ্যে ওই ব্যক্তির ফোনও কেটে যায়। দেবলিনা সমানে ফোন সুইচ অফ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু পারেন না। তিনি বুঝে যান তাঁর ফোন হ্যাক হয়ে গিয়েছে। প্রায় ১৫ মিনিট পরে ফোনটি নিজে থেকেই সুইচ অফ হয়ে যায়। আতঙ্কে দেবলিনা এরপর ফোন সুইচ অন করতেই দেখেন একটি সদ্য ব্যাঙ্কের মেসেজ- যেখানে লেখা রয়েছে তিনি ৪ লক্ষ ৩৩ হাজার ৪০৪ টাকা তুলে নিয়েছেন এবং তাঁর অ্যাকাউন্ট ব্যালান্স মাত্র ৫১ টাকা।
হতাশায়-রাগে নিজের নির্বুদ্ধিতায় কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে পড়েছিলেন তিনি। অডিও বার্তায় নিজেই সে কথা বলেছেন দেবলিনা। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে তাঁর শারীরিক এবং মানসিক কোনও শক্তি ছিল না কিছু করার মতো। তাঁর এই পরিস্থিতি দেখলে বৃদ্ধা মা যে চিন্তা করবে তা ভেবে যেন আরও অসহায় বোধ করছিলেন দেবলিনা। এই সময়ই তাঁর ফোন স্বামীর কল আসে। একটু ধাতস্ব হয়ে স্বামীকে সব ঘটনা খুলে বলেন দেবলিনা। তাঁরা যে অনলাইন সাইবার দস্যুদের হাতে নিজেদের কষ্টার্জিত অর্থ খুইয়েছেন তা দেবলিনা এবং তাঁর স্বামী বুঝতে পারেন। দেবলিনাকে স্বামী পরামর্শ দেন এই ঘটনাকে ভুলে যেতে এবং স্বাভাবিক থাকার কথা বলেন।
দেবলিনা আরও জানাচ্ছেন, স্বামীর ফোনটা রাখতেই তাঁর খেয়াল পড়ে এইচডিএফসি-তে থাকা একটা অল্প অঙ্কের অর্থের অ্যাকাউন্টের কথা। ১৩ জানুয়ারি এইচডিএফসি-র এটিএম-এ মিনি স্টেটমেন্ট নিয়ে দেখেন সেখান থেকে ৪২ হাজার টাকা চলে গিয়েছে। পড়ে রয়েছে মাত্র ১৭ টাকার ব্যালান্স।
আরও পড়ুন-
--------------------
ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ফাঁদে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, অভিনব পদ্ধতিতে লুঠ লক্ষাধিক টাকা
SBI Alert-বাড়ছে ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনা, গ্রাহকদের বারবার সাবধান করছে এসবিআই
ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনা ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া গ্যাংয়ের যোগ, সিউড়িতে ধৃত ২ দুষ্কৃতী
১৩ জানুয়ারি এবং ১৪ জানুয়ারির সকাল পর্যন্ত ব্যাঙ্ক, লালবাজার সাইবার ক্রাইম সেলে দৌঁড়ঝাঁপ করেন দেবলিনা। সাইবার ক্রাইম সেল ঘটনার তদন্তে নেমেছে। দেবলিনা জানতে পারেন শুধু তিনি একা নন ২৫ ডিসেম্বরও এক বৃদ্ধ তাঁর অ্যাকাউন্টে থাকা ৭ লক্ষ টাকা এই সাইবার দস্যুদের হাতে খুইয়েছেন। ব্যাঙ্ক থেকেও দেবলিনাকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে দুটো অ্যাকাউন্ট-কে স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিতে এবং নতুন ফোন নম্বর দিয়ে অন্তত মাসখানেক পরে নতুন অ্যাকাউন্ট খুলতে। কিন্তু সেখানেও এখন অনেক জটিলতা। কারণ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে লাগবে আধারকার্ড। সেখান থেকেই সাইবার দস্যুরা হদিশ পেয়ে যেতে পারে দেবলিনার নতুন অ্যাকাউন্টের। কারণ এই আধারনাম্বার দিয়েই সাইবার দস্যুরা দেবলিনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করেছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ মনে করছে। আপাতত অসহায়তার মধ্যে জীবন কাটছে দেবলিনার। যদিও, মনের জোর হারাচ্ছেন না। তাই তাঁর মতো বোকা হয়ে কেউ যেন সর্বস্ব না হারায় তার জন্য আপাতত জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন দেবলিনা।