সিবিআইয়ের রিপোর্টে জানানো হয়েছে, তদন্তভার হাতে পাওয়ার পর ৪০ টি এফআইআর রুজু করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এবং সাতটি মামলায় চার্জশিট জমা পড়েছে।
রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসার (Post-poll violence) তদন্তের রিপোর্ট আজ কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court) জমা দিল সিবিআই (CBI)। ২টি মুখ বন্ধ খামে রিপোর্ট (Report) জমা দেওয়া হয়েছে। এই একই মামলায় রাজ্য সরকারের (State Government) বিশেষ তদন্তকারী দলও (special investigation team) রিপোর্ট জমা দিয়েছে। যদিও ক্ষতিগ্রস্তদের এখনও আর্থিক সাহায্য না দেওয়ার জন্য রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করে হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দালের (Chief Justice Rajesh Bindal) ডিভিশন বেঞ্চ।
সিবিআইয়ের রিপোর্টে জানানো হয়েছে, তদন্তভার হাতে পাওয়ার পর ৪০ টি এফআইআর রুজু করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এবং সাতটি মামলায় চার্জশিট জমা পড়েছে। সিবিআইয়ের আইনজীবী তথা অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ওয়াই জে দস্তুর জানান, তদন্ত ভালোভাবেই এগোচ্ছে। কোনও সমস্যার মুখে পড়তে হয়নি সিবিআইকে। রাজ্যও তদন্তে সহযোগিতা করছে। রাজ্য সরকারের সিট-এর তিন সদস্য পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র, রণবীর কুমার ও সুমনবালা সাহু উপস্থিত ছিলেন হাইকোর্টে।
উল্লেখ্য, ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় তদন্ত শুরু হওয়ার পর জেলায় জেলায় গিয়েছে সিবিআই। সেখানে স্থানীয় বাসিন্দা ও ক্ষতিগ্রস্তের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। এদিকে রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে সিবিআইের তরফে অসহযোগিতার অভিযোগ তোলা হয়নি। তবে রাজ্যের ভূমিকায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।
আরও পড়ুন- কবে শপথ নেবেন মমতা, রাজভবনের সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় বিধানসভা
হাইকোর্টের গঠন করে দেওয়া সিটকে সহায়তার জন্য রাজ্য কেন ১০ জন আইপিএস অফিসারকে নিয়োগ করেছে, তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে হাইকোর্ট। ১ সেপ্টেম্বর সেই মর্মে নির্দেশিকা জারি করেছিল রাজ্য। সোমবার হাইকোর্ট স্পষ্ট জানিয়েছে, অগাস্টের নির্দেশে সিটের তদন্তে সহযোগিতার জন্য কাউকে নিয়োগ করতে বলা হয়নি। তাছাড়া সিটের তরফেও সেরকম কোনও আবেদনও জানানো হয়নি। এনিয়ে ভর্ৎসনার মুখে পড়ে রাজ্যের তরফে দাবি করা হয়, সিটের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেই আইপিএস অফিসারদের নিয়োগ করা হয়েছে। এরপর যে বৈঠকে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছিল তার তথ্য চায় হাইকোর্ট। যদিও সেই তথ্য দিতে পারেনি রাজ্য সরকার।
এরপর হাইকোর্ট জানায়, সিটের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরকে (Manjula Chellur) নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু, আইপিএস নিয়োগ করার সময় তাঁর সঙ্গেও রাজ্য কোনও আলোচনা করেনি। পাশাপাশি ভোট পরবর্তী হিংসায় ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সাহায্যের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। কিন্তু, সেই সাহায্যের কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেনি সরকার। তা নিয়েও রাজ্যকে ভর্ৎসনা করে আদালত। ডিভিশন বেঞ্চের তরফে বলা হয়, 'এই ধরনের গুরুতর বিষয়ে রাজ্যের ক্যাজুয়াল অ্যাটিটিউড ধরা পড়ছে।' এই মামলার পরবর্তী শুনানি ৮ নভেম্বর।
উল্লেখ্য, অগাস্টে ভোট-পরবর্তী হিংসা মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে ধাক্কা খেয়েছিল রাজ্য সরকার। হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছিল, হত্যা, ধর্ষণ এবং মহিলাদের উপর অপরাধের মতো গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগের তদন্ত করবে সিবিআই। আর বাকি কম গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগের তদন্ত করবে সৌমেন মিত্র, সুমন বালা, রণবীর কুমারকে নিয়ে গঠিত তিনজনের বিশেষ তদন্তকারী দল। তদন্ত প্রক্রিয়ায় সাহায্য করতে হবে রাজ্যকে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও করতে হবে।