আনিস খানের মৃত্যুর তদন্ত নিয়ে, হাইকোর্টে একাধিক প্রশ্নের মুখোমুখি এসআইটি। ছাত্র নেতা আনিসখানের মৃত্যুতে দায়ের করা মামলার শুনানিতে এসআইটির রিপোর্টে একাধিক অসঙ্গতি ধরা পড়েছে আদালতের চোখে।
আনিস খানের মৃত্যুর তদন্ত নিয়ে, হাইকোর্টে একাধিক প্রশ্নের মুখোমুখি এসআইটি। ছাত্র নেতা আনিসখানের মৃত্যুতে দায়ের করা মামলার শুনানিতে এসআইটির রিপোর্টে একাধিক অসঙ্গতি ধরা পড়েছে আদালতের চোখে। সিটের তদন্তের রিপোর্ট নিয়ে এক গুচ্ছ প্রশ্ন আনিসের পরিবারের আইনজীবীর তরফেও রয়েছে। সিটের বিরুদ্ধে মূল অভিযুক্তদের বাঁচানোর অভিযোগ তুলেছে আনিস পরিবারের আইনজীবী। তাঁদের দাবি, মৃত্যুর আগে দেহে আঘাতের চিহ্ন ছিল। কিন্তু সেটা অবজ্ঞা করেছে সিট। ঠেলা ফেলা বা পড়ে যাওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে। সিট সেটাও অস্বীকার করেছে। তাই সিবিআই তদন্ত নিয়ে সরাসরি খুনের ধারা প্রয়োগের আবেদন করেছেন বিকাশ ভট্টাচার্য।
এদিনের শুনানিতে সিটের কাছে আদালতের প্রশ্ন, আনিসের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকলে তাঁকে ৪১ এ পাঠানো প্রয়োজন ছিল। সেই নোটিশ পাঠানো হয়েছে কি। সেটার উল্লেখ নেই রিপোর্টে। আদালতের পরের প্রশ্ন ছিল, পুলিশ কর্মীরা সিড়ি দিয়ে উঠে কী দেখলেন। রিপোর্টে তার উল্লেখ নেই কেন। আনিস যদি পালাতে গিয়ে পড়ে যায়, তাহলে কী ভাবে আইপিসি ৩০৪ ধারা প্রযোজ্য হবে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। পালাতে গিয়ে পড়ে গেলে পুলিশ কীকরে দায়ী হবে। একই সঙ্গে সিটকে হাইকোর্টে জিজ্ঞাসা করেছে, আনিসের মৃত্য়ুর তদন্তে নেমে তাঁর পরিবারের কোনও সমস্যা ছিল কিনা সেটা কি খতিয়ে দেখা হয়েছে। এই প্রস্নের উত্তর অমিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আনিসের পরিবারের তরফে সিবিআই-র দাবি জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার রাজ্য সিবিআই ঠেকাতে বক্তব্য জানাবে।
আরও পড়ুন, অভিষেককে কেন কলকাতায় জেরা নয় ? ইডি-কে প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টের
আনিস খান হত্যা মামলায় এর আগেও সিটের রিপোর্টে খুশি ছিলেন না মামলাকারীরা। রিপোর্ট নিয়ে আদালতের কাছে মামলাকারীদের তরফে একাধিক প্রশ্ন তোলেন গতমাসে আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। গোটা ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে প্রমাণ করার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ। এই বিষয়ে আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, 'বলা হচ্ছে আনিসের মৃত্যু হয়েছে। এটা একেবারেই সত্যি না। তদন্তের গতিপ্রকৃতি দেখে মনে হচ্ছে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কোনও তদন্তই হচ্ছে না। অনুসন্ধান চলছে। অপরাধীদের খোঁজার চেষ্টাও চলছে না। জিজ্ঞাসাবাদও হচ্ছে না। পলিগ্রাফের মাধ্যমে প্রমাণের চেষ্টা চলছে যে এটা হত্যা নয়, আত্মহত্যা। কিন্তু এটি পরিকল্পিত খুন।' আর এরপরেই মামলাকারীদের হয়ে অন্য সংস্থা দিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য।
আরও পড়ুন, '২৩ থেকে ৪৬, বাংলায় বাড়তে পারে জেলার সংখ্যা', বড়সড় ইঙ্গিত দিলেন মুখ্যমন্ত্রী
প্রসঙ্গত, আনিস হত্যাকাণ্ডে মৃত যুবকের বাবা সালাম খানের অভিযোগ থেকে জানা গিয়েছে, পুলিশের পোশাক পরিহিত ৪ জন লোক বাড়ির ভেতরে ঢুকে আনিসকে খুন করে। পরিবার সূত্রে খবর আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া আনিস আগাগোড়া কলকাতাতেই থাকতেন। তিন দিন আগে তিনি বাড়িতে আসেন। শুক্রবার সন্ধ্যাবেলা পাড়ার একটি জলসাতে গিয়েছিলেন। এরপরে গভীর রাতে বাড়ি ফেরেন তিনি। তার কিছুক্ষণ পরেই হঠাৎ চার জন লোক রাত ১টা নাগাদ তাঁদের বাড়িতে যান। ওই চারজনের মধ্যে একজন পুলিশের পোশাক পরা থাকলেও বাকিদের শরীরে জলপাই রঙের পোশাক পরা ছিল। আমতা থানার পুলিশ পরিচয় দিয়ে তারা তিনতলা থেকে আনিসকে ফেলে দেয়। এরপরেই মৃত্যু হয় আনিসের। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয় রাজ্য-রাজনীতি।