দুমদাম করে প্যারাসিটামল খেয়ে ফেলছেন?
হালকা জ্বর, একটু গলা ব্যাথা আর সর্দি হলেই অনেকেই খেয়ে নেন এই ওষুধটি। কিন্তু তাতেই নাকি লুকিয়ে রয়েছে সমূহ বিপদ।
দুমদাম করে প্যারাসিটামল খেয়ে ফেলছেন? মানুষের ঘরে ঘরে এই ওষুধটিই থাকে। আর তার ডোজ় না জেনেই ঘন ঘন খেয়ে ফেলার যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তাতেই ঘনিয়ে আসছে বিপদ। জানা গেছে, বেশি মাত্রায় প্যারাসিটামল খেয়ে ফেললে শরীরের একাধিক ক্ষতি হতে পারে। তা বুঝিয়ে দিয়েছেন ব্রিটেনের নটিংহাম ইউনিভার্সিটির গবেষকরা।
বিগত কয়েক বছর ধরে এই সমীক্ষা চালিয়ে গবেষকরা দাবি করছেন যে, প্যারাসিটামল নির্দিষ্ট ডোজ়ে না খেলে বা যখন তখন বেশি মাত্রায় খেয়ে ফেললে তা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। লাগাতার যদি ওষুধটি বেশি ডোজ়ে কেউ খেয়ে থাকেন, তাহলে তাঁর লিভার এবং কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সেইসঙ্গে, পেটের গোলমাল তো হবেই। এমনকি, কিডনিতে পাথর জমারও আশঙ্কা বাড়বে। বেশি প্যারাসিটামল খেলে আবার বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরানোর মতো সমস্যাও হতে পারে। তাছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে প্যারাসিটামল খেতে থাকলে ঘন হলুদ রঙের প্রস্রাব, তলপেটে তীব্র যন্ত্রণা এবং লিভার খারাপ হওয়ার উপসর্গও দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে অ্যালার্জির সমস্যাও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন গবেষকরা।
মূলত, ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সী মানুষদের নিয়েী এই সমীক্ষাটি চালান নটিংহামের গবেষকেরা। তারা দেখেন যে, কথায় কথায় প্যারাসিটামল খাওয়ার অভ্যাস যাদের রয়েছে, তাদেরই পরবর্তী সময়ে পেপটিক আলসার ব্যাপক মাত্রায় ধরা পড়েছে। কিডনির ক্রনিক রোগেও আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে। হার্টের অসুখ এবং হাইপারটেনশন ধরা পড়েছে বেশ কয়েক জনের মধ্যে।
উল্লেখ্য, গত ২০১৬ সালে ‘দ্য ল্যানসেট’ সায়েন্স ম্যাগাজিনে প্যারাসিটামল নিয়ে একটি গবেষণার খবর ছাপা হয়েছিল। সেখানে গবেষকেরা বলেছিলেন যে, প্রায় ৫৮ হাজার মানুষকে নিয়ে এই সমীক্ষা চালানো হয় বেশ কয়েকবছর ধরে। আর তাতে দেখা যায়, প্যারাসিটামল কখনোই ব্যথার উপশম করতে পারে না। বর্তমানে নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ওয়েইয়া ঝাংও ঠিক একই কথা বলেছেন।
তাঁর মতে, ২০১৮ সাল থেকেী প্রায় ৪ লাখ আর্থ্রাইটিসের রোগীকে লাগাতার প্যারাসিটামল খাইয়ে দেখা গেছে, তাদের গাঁটের যন্ত্রণা একটুও কমেনি। কয়েকজনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ডোজ়ে প্যারাসিটামল কাজ করলেও, সেই সংখ্যা খুবী কম। তবে বেশিরভাগের শরীরেই তা কাজ করেনি বলেী জানান তারা। গবেষকদের মতে, প্যারাসিটামল এমনিতে খুবই নিরাপদ একটি ওষুধ।
তবে যদি চিকিৎসকের পরামর্শে নির্দিষ্ট ডোজ়ে খাওয়া হয়, তা হলে উপকার হতে পারে। কিন্তু যদি কোনও নিয়ম না মেনে বেশি ডোজ় খাওয়া হয়, তাহলে ক্ষতি হতে পারে শরীরের। তাই শরীরের ওজন বুঝে দিনে ৩ থেকে ৪ গ্রামের বেশি প্যারসিটামল খাওয়া কখনোই কাম্য নয়। দেহের প্রতি কেজি ওজন অনুযায়ী, ১০ থেকে ১৫ মিলিগ্রাম ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু তার থেকে বেশি একদমই নয়।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।